নববর্ষ উদযাপনে ঢাকা-বরিশাল-কোলকাতা রুটে দ্বিতীয় নৌভ্রমণ শুরু হচ্ছে বুধবার নববর্ষ উদযাপনে ঢাকা-বরিশাল-কোলকাতা রুটে দ্বিতীয় নৌভ্রমণ শুরু হচ্ছে বুধবার - ajkerparibartan.com
নববর্ষ উদযাপনে ঢাকা-বরিশাল-কোলকাতা রুটে দ্বিতীয় নৌভ্রমণ শুরু হচ্ছে বুধবার

3:45 pm , December 25, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ ইংরেজী নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে আনন্দ উৎসব উপভোগ করতে বুধবার ঢাকা থেকে বরিশাল ও মোংলা হয়ে কোলকাতায় দ্বিতীয় নৌ ভ্রমণ শুরু করছে ‘এমভি রাজারহাট-সি’। ‘মেসার্স কার্নিভাল ক্রজ লাইন্স’ তাদের ২১০ ফুট দৈর্ঘ্যরে এ নৌযানটির মাধ্যমে গত ২৯ নভেম্বর ভারত-বাংলাদেশ আন্তঃদেশীয় নৌপথে প্রথম যাত্রী পরিবহন শুরু করে। ঐদিন সকালে প্রায় ২শ যাত্রী নিয়ে ঢাকার হাসনাবাদ কার্নিভাল জেটি থেকে নৌযানটি রওয়ানা হয়ে ২ ডিসেম্বর বিকেলে কোলকাতায় পৌঁছে। ‘এমভি রাজারহাট-সি’ বরিশাল-মোংলা-পুরাতন চালনা হয়ে সুন্দরবনে বাংলাদেশÑভারত সীমান্তের আংটিহারায় নৌ চেকপোস্টে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন সম্পন্ন করে ভরতে প্রবেশ করে। কোলকাতার বাবুঘাট পুলিশ জেটিতে অবস্থান করে সেখান থেকে ৪ ডিসেম্বর ফিরতি যাত্রা করে নৌযানটি ঢাকায় পৌঁছে ৭ ডিসেম্বর সকালে।
আগামী বুধবার সকালে পুনরায় ‘এমভি রাজারহাট-সি’ কোলকাতার উদ্দেশ্যে যাত্রা করছে। বিলাসবহুল এ নৌযানটিতে ঢাকা থেকে কোলকাতার একক পথে ৪০% মওকুপ দিয়ে ভ্রমণ করসহ সিঙ্গেল স্লিপারের ভাড়া ৬ হাজার টাকা, ডবল স্লিপার ১০ হাজার ২শ’ টাকা, একক শয্যার কক্ষ ১২ হাজার টাকা, দ্বৈত শয্যার কক্ষ ২০ হাজার ৪শ’ টাকা, ফ্যামিলি কেবিন ২৫ হাজার ২শ’ টাকা, ভিআইপি কেবিন ৩০ হাজার টাকা ও প্রিমিয়াম ভিআইপি কেবিন ৫০ হাজার ৪শ’ টাকা নির্ধারিত রয়েছে। রিটার্ন টিকেটধারীদের জন্য নৌযানটিতেই থাকার সুবিধা অব্যাহত রেখেছে কতৃপক্ষ। তবে এবার  যাত্রীদের জন্য বুফে খাবারের কোন ব্যবস্থা রাখছে না প্রতিষ্ঠানটি। ক্যাফেটরিয়া থেকে নির্ধারিত মূল্যে যাত্রীদের জন্য উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করার কথা জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। একই সাথে যারা পরিবার নিয়ে ভ্রমণকারীদের সাথে থাকা অনুর্ধ্ব ১০ বছরের দুই বাচ্চার জন্য ভ্রমণ কর পরিশোধ সাপেক্ষে বিনা মাসুলে ভ্রমণের সুযোগ থাকছে।
এমভি রাজারহাট-সি কোলকাতা থেকে ৩ জানুয়ারী ফিরতি পথে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে বলে জানিয়েছেন কার্নিভাল ক্রুজ লাইন্স’এর পরিচালক ইমরান খান রাসেল। তিনি জানান, তাদের নৌযানটির ৩৬ ঘন্টার মধ্যেই কোলকাতায় পৌঁছানো সম্ভব। তবে ভারতীয় নৌপথে রাত্রিকালীন নৌ-সংকেত সুবিধার কিছুটা দুর্বলতা ছাড়াও দু দেশের সীমান্তে কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন পরীক্ষায় সময় ব্যয় সহ নানা আনুষ্ঠানিকতা অন্যতম বিবেচ্য বিষয়। আমরা নৌযানটি এমনভাবে পরিচালনা করছি যাতে যাত্রীরা দিনেরবেলা মোংলা বন্দর সহ সুন্দরবনের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতে পারেন।
১৮৭৪ সালে এ উপমহাদেশের প্রথম কোলকাতা-বরিশাল, নারায়নগঞ্জ-চাঁদপুর-বরিশাল-ঝালকাঠী-খুলনা, ঢাকা-চাঁদপুর-গোয়ালন্দ নৌপথে বাস্পীয় প্যাডেল হুইল স্টিমার সার্ভিস চালু করে বৃটিশ-ভারতীয় সহায়তা লাভকারী আধা সরকারী  প্রতিষ্ঠান ‘অইজিএন’ ও ‘আর এসএন কোম্পানী’। তবে সুন্দরবনের গহীনে কয়েকটি নৌযান ডুবির প্রেক্ষিতে কোলকাতা-বরিশাল রুটে সরাসরি নৌ যোগাযোগ ১৯৪০ সালের আগেই বন্ধ হয়ে যায়। এর পরিবর্তে খুলনা পর্যন্ত স্টিমার সার্ভিসের সাথে কোলকাতার শিয়ালদহ স্টেশন পর্যন্ত রেল সংযোগ চালু থাকলেও ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পাক-ভারত যুদ্ধের দিন তা বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৭২ সালে সম্পাদিত নৌ প্রটোকল চুক্তির আওতায় ভারত-বাংলাদেশ এবং ভারত-বাংলাদেশ-ভারত পণ্যবাহী নৌ যোগাযোগ চালু হলেও যাত্রিবাহী নৌ যোগাযোগ আর চালু হয়নি।
প্রায় ৭০ বছর পরে দুই দেশের সরকার প্রধানের সিদ্ধান্ত আর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় পূর্বের নৌ প্রটোকল অনুযায়ী ২০১৯ সালের মার্চে রাষ্ট্রীয় বিআইডিব্লউটিসি তার ‘এমভি মধুমতি’ যাত্রিবাহী নৌযানের সাহায্যে ঢাকা-কোলকাতা রুটে একটি পরীক্ষামূলক যাত্রী পরিচালন সম্পন্ন করলেও প্রতিষ্ঠানটির কর্তাদের অনাগ্রহে আর কোন অগ্রগতি হয়নি। এ প্রেক্ষিতে বেসরকারী কার্নিভাল ক্রুজ তাদের ২১০ ফুট দৈর্ঘ্যরে বিলাসবহুল নৌযানটির সাহায্যে গত মাসেই ঢাকা-বরিশাল-কোলকাতা রুটে যাত্রি পরিবহন শুরু করে। প্রাথমিক অবস্থায় মাসে দুটি ট্রিপে নৌযানটি চলাচলের কথা থাকলেও এখনো মাসে একটি ট্রিপ দিচ্ছে  রাজারহাট-সি। তবে যাত্রী চাহিদা বিবেচনা করে তা বৃদ্ধিতে আগ্রহের কথা জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক।
করোনা পূর্বকালীন সময়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বছরে ২০ লক্ষাধিক যাত্রি যাতায়াত করতো। এখনো চিকিৎসা ও পর্যটনের জন্য দু দেশের একাধিক স্থলবন্দর দিয়েই ৮০ ভাগেরও বেশী যাত্র্রি চলাচল করে থাকেন। এছাড়াও ঢাকা থেকে সপ্তাহে ৫ দিন ও খুলনা থেকে দুদিন কোলকাতা পর্যন্ত ট্রেন সার্ভিস চালু রয়েছে। পাশাপাশি প্রতিদিন গড়ে অন্তত ১০টি ফ্লাইটে ঢাকা থেকে কোলকাতা, দিল্লী ও চেন্নাই রুটে বিপুল যাত্রি ভ্রমণ করছেন। করোনা পরিস্থিতির কাক্সিক্ষত উন্নতির পরে দু দেশের মধ্যে যাত্রি চলাচল অনেকটা বাড়লেও ভারতীয় দূতাবাসের ভিসা জটিলতায় তা কিছুটা শ্লথ হয়ে পড়েছে। ভারতগামী বাংলাদেশীরা ভিসা প্রাপ্তিতে সাম্প্রতিককালে নানা ধরনের দীর্ঘ সূত্রিতা ও হয়রানীর অভিযোগ করছেন। পাশাপাশি স্থল সীমান্ত চেকপোষ্ট গুলোতেও ভারতগামীদের দুর্ভোগের কোন শেষ নেই।
এদিকে গত ১১ জানুয়ারী উত্তর প্রদেশের বারানসী থেকে  ভারত-বাংলাদেশের  ৩ হাজার ২শ’ কিলোমিটার নৌপথে ২৮ জন যাত্রী নিয়ে ‘এমভি গঙ্গা বিলাস’ নামের একটি প্রমোদতরী ৫১ দিনের ভ্রমণের সূচনা করে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি নৌযানটি ভারত-বাংলাদেশের নৌ সীমান্তের আংটিহারা হয়ে মোংলাতে পৌঁছে। ৮ ফেব্রুয়ারি বরিশালে পৌঁছে রাত্রিযাপনের পরে পর্যটকবাহী নৌযানটি পদ্মা-যমুনা পাড়ি দিয়ে আসামের ডিব্রুগড়ে ৫১ দিনের নৌ ভ্রমণ শেষ করে। প্রায় ২শ ফুট লম্বা তিনতলা প্র্রমোদতরীটি সুইজারল্যান্ড ও জার্মানীর ২৮ জন পর্যটক নিয়ে ভারত-বাংলাদেশের ২৭টি নদী ও ৫০টি পর্যটন কেন্দ্র পরিদর্শন করেছিল। বিশে^র দীর্ঘতম এ নৌ ভ্রমণে খাবার সমেত প্রতি পর্যটকের কাছ থেকে ৫১ দিনে ১২ লাখ ৫৯ হাজার ভারতীয় রূপি বা তৎকালীন ১৬ লাখ টাকারও বেশী ভাড়া আদায় করা হয়। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ঐ প্রমোদ ভ্রমণের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT