1:00 am , February 12, 2020
রিয়াজুল ইসলাম বাচ্চু,ঝালকাঠি॥ ঝালকাঠি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান তানিয়া ফেরদৌসকে শেষ পর্যন্ত চলেই যেতে হলো। প্রশাসনিক কাজে স্বচ্ছ, সদালাপি এবং সৎ এমন একজন কর্মকর্তাকে ঝালকাঠিতে যোগদানের ৮ মাসের মাথায় বদলি নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তনিয়া ফেরদৌস ঝালকাঠিতে যোগদান করেই বাল্য বিয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করেন। তার এই কমাসে মোট ২১ টি বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ করেছেন তিনি। সকাল বিকেল রাত নেই, বাল্য বিয়ের সংবাদ পেলেই ছুটে গেছেন প্রত্যন্ত এলাকায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে খবরের সত্যতা পেয়ে সাংবাদিকদেরও অবগত করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিয়েছেন। এভাবে তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রে উপজেলার সাধারণ মানুষের পাশে দাড়িয়েছেন সবসময়। যে কারনে সাংবাদিকরাও তাকে সর্বাত্মক সহযোগীতা করার চেষ্ঠা করেছে। তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পদে থেকেও সহকারি কমিশনার (ভূমি) ’র অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেছেন। ঝালকাঠিতে গত জুন মাসে যোগদান করেই তিনি প্রথম ২০১৮-১৯ সালের এডিবি প্রকল্পের চেকে স্বাক্ষর না করেই রোষানলে পড়েন। প্রকল্প সহ-সভাপতি তানিয়া ফেরদৌস নতুন যোগদান করায় কাজ না দেখে চেকে স্বাক্ষর করবেন না বলে চেক ফিরিয়ে দেন। এ ঘটনায় তিনি বিরাগভাজন এবং অপ্রিয় হয়ে যান অনেকের। এডিবি প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের সংবাদ জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হলে দুর্নীতি দমন কমিশন তা নিয়ে তদন্ত শুরু করে। এক পর্যায়ে এডিবির কাজ না দেখতে পারায় প্রকল্পের সদস্য সচিব কর্তৃক চুড়ান্ত প্রতিবেদন ও কাজের মানের প্রত্যয়ন স্বাপেক্ষে আর্থিক অনুমোদন দিতে বাধ্য হন ইউএনও। এছাড়াও তিনি একই সমস্যার সম্মুখীন হন টিআর কাবিখার প্রকল্প নিয়ে। যার সভা না করে প্রকল্প অনুমোদনে দ্বিমত করায় তিনি আরো অপ্রিয় হয়ে উঠেন বলে শোনা যায়। এসব কারনেই এই সৎ কর্মকর্তাকে চাপের মুখে পড়তে হয়েছে একাধিকবার। জেলা প্রশাসক জোহর আলীর নির্দেশনায় তানিয়া ফেরদৌস ঝালকাঠিতে বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ ছাড়াও প্রতিটি ইউনিয়নে গিয়ে মাদক বিরোধী সমাবেশ, কিশোর কিশোরী ক্লাবের নিয়োগ, প্রধানমন্ত্রীর জমি আছে ঘর নাই প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু করে, দুর্নীতি প্রতিরোধ, তথ্য অধিকার আইন, ধান ও গম বীজ সংগ্রহ, সততার সাথে ক তালিকার মুক্তিযোদ্ধাদের পূন: যাচাই বাছাই সম্পন্ন করেন। ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের আঘাতের পূর্বে ও পরে ক্ষতিগ্রস্থদের সহায়তা, গরীব অসহায়দের মাঝে কম্বল বিতরণসহ বিভিন্ন কার্যক্রম সততা, সাহস ও প্রশংসার মাধ্যমে সম্পন্ন করায় উপজেলাবাসির কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠে ছিলেন। তারপরেও তাকে এভাবে বদলী হওয়ার বিষয়টি সাধারণ মানুষ সহজে মেনে নিতে পারেনি। তাদের অভিমত এটা উপজেলাবাসির জন্য স্বাধীন ভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে বাঁধা বা অন্তরায়। এতে স্বার্থান্বেষী মহল আরো উৎসাহিত হবে। বাঁধাগ্রস্থ হবে প্রশাসনিক কার্যক্রম। ঝালকাঠিতে যোগদানের ৮ মাসের মাথায় বদলীর বিষয়ে তানিয়া ফেরদৌস কোন মন্তব্য না করে বলেন, বদলী একটি নিয়ম তান্ত্রিক প্রক্রিয়া। এটা যে কোন সময় হতে পারে। কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা পালন আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য। আমার কাজের মূল্যায়ন সাধারণ মানুষের উপর ছেড়ে দিলাম। নবাগত ইউএনও মহোদয় অবশ্যই আরো ভাল এবং সুচারু রুপে নিজ দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হবেন এটাই আমার প্রত্যাশা।