নগরীতে রোগীর দালালদের দৌরাত্ম চরমে ॥ প্রশাসন নির্বিকার নগরীতে রোগীর দালালদের দৌরাত্ম চরমে ॥ প্রশাসন নির্বিকার - ajkerparibartan.com
নগরীতে রোগীর দালালদের দৌরাত্ম চরমে ॥ প্রশাসন নির্বিকার

3:18 pm , July 1, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল নগরীতে হাতে গোনা কয়েকজন ভদ্রবেশি দালাল ডাক্তারদের কারণে নগরীতে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে। কোনো ডিগ্রি না থাকলেও বিভিন্ন ভূয়া ডিগ্রির সাইনবোর্ড টানিয়ে গ্রাম থেকে আসা সহজ সরল রোগীদের প্রতারিত করছে। গ্রামের সহজ সরল রোগীরা প্রতিনিয়ত তাদের প্রতারণার শিকার হলেও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তেমন একটা তৎপরতা নেই। হঠাৎ করে দুই একদিন অভিযান হলেও দালালদের তৎপরতা কমার কোনো লক্ষণ নেই। পুলিশের অভিযানে আটক হওয়া দালালদের মুহূর্তেই অর্থের বিনিময়ে ছাড়িয়ে আনছেন তারা। যার ফলে দালালদের অপতৎপরতা কোন ক্রমেই রোধ করা যাচ্ছে না। পুলিশ ও প্রশাসনের কোন ধরনের নজরদারি না থাকায় এ ধরনের দালালদের তৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণ রোগীরা বলছেন শুধু দালাল ধরলেই সমস্যার সমাধান হবেনা। দালাল পুষছেন যেসব চিকিৎসক তাদেরকে ধরে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে সাজা দেয়ার নজির সৃষ্টি করলেই কমে আসবে ‘দালাল প্র্যাকটিস’। এতে করে দূর দূরান্ত থেকে আসা রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পাওয়ার পাশাপাশি হয়রানীর হাত থেকে রেহাই পাবেন। রোগীর স্বজনরা বলছেন বরিশালের যারা বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তারাই তিন/চার বারে ১৫/২০ হাজার টাকার টেস্ট করিয়ে অনেক সময় রোগ নির্ণয়ে ব্যর্থ হয়। সেখানে যারা দালাল প্র্যাকটিস ডাক্তার আছেন তাদের কাছে গেলে রোগীদের কি অবস্থা হবে সেটা সহজেই অনুমেয়। নগরীতে অনেক ডায়াগনোস্টিক আছে যেখানে একজন চিকিৎসক সব রোগের চিকিৎসা দেন। টেস্টের আধুনিক কোন যন্ত্রপাতি নেই। পরীক্ষার জন্য আছে কিছু মোমবাতি। এই মোমবাতি জ্বালিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষার নামে রোগীদের পকেট কাটছেন। এমন অনেক রোগী আছেন যারা  জমি বিক্রী করে ডাক্তার দেখাতে এসে বাড়ীতে ফিরছেন চোখের জল নিয়ে।
দীর্ঘ বছর ধরেই গ্রাম থেকে শহরে ডাক্তার দেখাতে আসা রোগীদের ফাঁদে ফেলে নিঃস্ব করছে দালালরা। এতে রোগী পথে বসলেও দালালির টাকায় ফুলে ফেপে উঠেছে দালাল এবং মদদদাতা চিকিৎসক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টার মালিকরা। পুলিশ ও প্রশাসনের রহস্যজনক নীরবতার সুযোগে এসব দালালরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন গোটা নগরী। বিশেষ করে সদর রোডে এমন অবস্থা হয়েছে মনে হবে পুরো সদর রোড দালালদের কাছে লীজ দেয়া হয়েছে।
নগরীর সদর রোড, বান্দ রোড, প্যারারা রোড এলাকায় দালালে ভরে গেছে। প্রকাশ্যে তারা রোগী ধরে টানাহেচড়া করলেও কারো নজরে আসছেনা।
প্রতিদিনই শত শত রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন বরিশাল নগরীতে। কিন্তু দুই-তৃতীয়াংশ রোগীই পৌঁছাতে পারছেন না তাদের পছন্দের চিকিৎসকের কাছে। বাস কিংবা লঞ্চ থেকে নামা মাত্রই দালাল চক্রের ফাঁদে পড়তে হচ্ছে তাদের। রিক্সা, অটোরিক্সা ও মাহেন্দ্র চালক বেশে থাকা দালাল চক্র রোগীদের ফাঁদে ফেলে নিয়ে যাচ্ছেন ভুয়া চিকিৎসকদের কাছে। চিকিৎসকের ভিজিট, পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফির নামে তাদের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছেন হাজার হাজার টাকা। কিন্তু টাকা খরচ করেও ভালো হচ্ছেন না রোগী। বরং হাতুড়ে চিকিৎসকদের ওষুধ খেয়ে জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে পড়ছেন তারা।
শুধুমাত্র নগরীর সদর রোড এলাকাতেই প্রতিদিন রোগী ধরার ফাঁদ পেতে আছেন প্রায় অর্ধশত দালাল। যারা রোগী ধরে নিয়ে যাচ্ছেন নির্ধারিত কিছু ডায়াগনোস্টিক সেন্টার ও চিকিৎসকের কাছে।
নগরীর প্রানকেন্দ্রে সদর রোডে রিক্সা/অটোরিক্সা নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে দূর দূরান্ত থেকে আসা সহজ সরল রোগীদের বিপথে নিয়ে আসছে তারা। মুহুর্তের মধ্যে বরিশালের বিখ্যাত চিকিৎসকদের মেরে ফেলে কিংবা শ্বশুরালয়ে পাঠিয়ে অখ্যাত ডাক্তারদের চেম্বারে নিয়ে এসে তাদের চিকিৎসা না দিয়েই রোগীদের সর্বস্ব হাতিয়ে নিচ্ছে। এক্ষেত্রে দালালদের সহযোগীতা ও শেল্টার দিয়ে যাচ্ছে নগরীর বেশ কয়েক দালাল নির্ভর কয়েকজন মুখোশধারী ভদ্রবেশি ডাক্তার। এসব ডাক্তাররা একাধিকবার বরিশালের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উধ্বর্তন কর্মকর্তাদের সাথে অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে বসে আর দালালি করবে না বলে মুচলেকা দিয়ে ফের শুরু করেছে একই অপকর্ম। জানা গেছে, নগরীর সদর রোডে ২০/২৫ জন দালাল রোগী ধরার কাজে ব্যস্ত থাকে। তারা রোগীদের ভুলভাল বুঝিয়ে নানা ছলছাতুরীর মাধ্যমে দালাল নির্ভর ডায়াগনোস্টিক/ক্লিনিকে নিয়ে যায়। সেখানে রোগী প্রতি ১০/১২ হাজার টাকার প্যাথলজি টেস্ট দিয়ে তার তিনের একাংশ দালালদের হাতে ধরিয়ে দেন তারা। কোন কোন দালাল প্রতি দিন এক হাজার টাকার বেশি আয় করেন। শুধু যে সদর রোডে দঁড়িয়ে থেকেই দালালী তাই নয়।
সদর রোডের বাইরে রূপাতলী বাস টার্মিনাল এলাকায় দালালদের রয়েছে বিশাল সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের সদস্যরা বেশিরভাগই রিক্সা ও অটোচালক। তাদের কাজ হলো রোগীদের বিভিন্নভাবে বুঝিয়ে সদর রোড পর্যন্ত নিয়ে আসা। এ জন্য তাদেরতে রোগী প্রতি ২০০ টাকা দেয়া হয়। আবার টেস্টের টাকার পার্সেনটেজও পান তারা।
বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও সিনিয়র সহকারী কমিশনার নাসির উদ্দিন মল্লিক বলেন, আমরা প্রায়ই অভিযান চালাচ্ছি। এটি আমাদের একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে যাদের আটক করা হয় তাদের বিরুদ্ধে কেউ মামলা দিতে চায় না। তাই দালালদের বেশিদিন কারাগারে থাকতে হচ্ছে না।
বরিশালের জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান চলতি বছরের ফেব্রুয়ারীতে সাংবাদিকদের বলছিলেন,  রোগী ধরার দালাল সম্পর্কে তিনি অবগত। হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং রোগীদের চেম্বারের সামনে অবস্থান নিয়ে যেসব দালাল রোগীদের ফাঁদে ফেলছে তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছি। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট করে তাদের সাজা দেয়া হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT