গতবছরের চেয়ে দিগুণ দাম খেজুরের গতবছরের চেয়ে দিগুণ দাম খেজুরের - ajkerparibartan.com
গতবছরের চেয়ে দিগুণ দাম খেজুরের

3:49 pm , March 8, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ নিত্যপণ্যের বাজারের পর এবার আগুন লেগেছে খেজুরের দরেও। চাহিদার তুলনায় আমদানি কম হওয়ার কারণে দিগুণ – তিনগুণ হারে দাম বৃদ্ধি ঘটেছে বলে দাবী ব্যবসায়ীদের। আর সাধারণ মানুষের দাবী টিসিবি পণ্যের সাথে খেজুরও দেবে সরকার। রমজানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও খাদ্যতালিকায় অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে খেজুর। নবী করিম সাঃ এর সুন্নাহ ছাড়াও খেজুরের বহুমুখী উপকারী দিক বিবেচনায় এ চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। ৭ মার্চ মঙ্গলবার ফলপট্টির খেজুরের দোকানে দেখা গেছে ক্রেতার ভিড়। কিন্তু বেশিরভাগ ক্রেতাই খেজুরের দর দেখে না কিনেই ফিরে গেছেন। এখানের দোকানে খেজুরের গায়েই ঝুলিয়ে দেয়া হয়েছে মূল্যতালিকা। মূল্যতালিকায় মেডজেল বা জাম্বুল ১৪০০, আজওয়া -১২০০, মাজদুল-৮০০, মারিয়ম- ৯০০, আমবার -৯৫০ মাসরুক- ৫৫০, দাবাস ৩২০, কাচা – ৪০০, বরই -৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
একজন ক্রেতা বলেন, এবছর খেজুরের দাম এতোটাই নাগালের বাইরে যে, আমরা বাধ্য হয়েই সরকারের কাছে টিসিবি পণ্যের সাথে খেজুর দেওয়ার দাবী জানিয়ে আসছি। এ দাবী শুধু বরিশালে নয়, সারাদেশের সাধারণ মানুষের। যদিও এ নিয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি জানিয়েছেন টিসিবি চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আরিফুল হাসান। তিনি আজকের পরিবর্তনকে জানিয়েছেন, টিসিবি রমজান উপলক্ষে খেজুর আমদানি করতে পেরেছে মাত্র ১১০০ মেট্রিকটন। এক কোটি কার্ডধারী পরিবারের জন্য খেজুর প্রয়োজন ১০ হাজার মেট্রিকটন। এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের সুত্রে জানা গেছে, সারাদেশে খেজুরের চাহিদা প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিকটন। কিন্তু এবছর এলসি কম হওয়ার কারণে গত তিন মাসে খেজুর আমদানি হয়েছে প্রায় ২২ হাজার টন। যা গেল বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪৬ শতাংশ কম। অবশ্য জানুয়ারিতে ২৯ হাজার টন খেজুর আমদানির এলসি খোলা হয়েছে বলে জানা গেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যানে। এমন পরিস্থিতিতে খেজুরের বাজার অস্থিতিশীল হয়ে ওঠার সম্ভাবনা বেশি বলে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরাই। বরিশালের ফলপট্টি বাজারের ব্যবসায়ীরা বলছেন, ইতোমধ্যে জাতভেদে খেজুরের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। দেড় হাজার টাকার একপ্যাকেট (৫কেজি) আজওয়া খেজুরের দাম উঠেছে সাড়ে তিন হাজার টাকা পর্যন্ত। বরিশালের  আমদানিকারক হান্নান, সোবহান, আলমগীরসহ ব্যবসায়ীদের দাবি, ঢাকার ব্যাবসায়ীরা জানিয়েছেন এবার খেজুর আমদানি করতে এলসিই খোলা যাচ্ছে না। যে কারণে খেজুরের দাম বাড়তি হচ্ছে। এরই মধ্যে পাইকারি ও খুচরা বাজারে খেজুরের দাম বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ। বরিশালের খেজুর বিক্রেতা আলমগীর ও জাকির হোসেন বলেন, গত বছর মমতাজ-মরিয়ম জাতের খেজুরের পাঁচ কেজির কার্টন ১৫০০ থেকে ২২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ বছর বাজারে তা ৩৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত বছর ফরিদা জাতের খেজুরের পাঁচ কেজির কার্টন ছিল ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা। এ বছর ইতোমধ্যে বেড়ে সর্বনি¤œ হয়েছে ১৫০০ টাকা। আমরা এনে বাছাই করতে যেয়ে তা থেকে আধা কেজির বেশি ফেলে দিতে হচ্ছে। ফলে সাধারণ ক্রেতাদের নাগালের বাইরে চলে গেছে খেজুর। এদিকে ঢাকার ইসলামপুর, চকবাজার ও বায়তুল মোকাররম মসজিদের আমদানিকারকদের সাথে কথা বললে তারা অভিযোগ তুলে বলেন, এবার খেজুর আমদানিতে ঋণপত্র খোলাই বড় চ্যালেঞ্জ। ব্যবসায়ীরা জানান, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার কিছু দেশ থেকে বাংলাদেশে খেজুর আসে। বেশিরভাগই আসে সমুদ্রপথে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। কার্গো বিমানেও কিছু খেজুর আমদানি হয়।
এসময় আমদানিকারক মো. নাসের আহমেদ বলেছেন, আগে আমরা এলসি খুললে ব্যাংকে বাকি করতাম। এখন বাকির কোনো সিস্টেম নাই। আগে টাকা দেও, পরে সিরিয়ালে থাকো। ১০ কনটেইনার চাহিদা থাকলে দিচ্ছে দুই কনটেইনার। অপর এক আমদানিকারক মোহাম্মদ সেলিম বলেছেন, কোনো ব্যাংক যদি এলসি না দেয়, তাহলে খেজুর-ফল সব জিনিসেরই বাজারে সংকট থাকবে। এতে দাম এমনিতেই বেড়ে যাবে। তবে সহজে এলসি খোলার ব্যাপারে ছোট ব্যবসায়ীদের সংঘবদ্ধভাবে বিনিয়োগের পরামর্শ দিয়েছেন বিআইআইএসএসের গবেষণা পরিচালক ড. মাহফুজ কবির। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে গণমাধ্যমে তিনি বলেছেন, ব্যবসায়ী সংগঠনের মাধ্যমে তারা একটা গ্রুপ করে যদি আবেদন করে, সেক্ষেত্রে আমার মনে হয় ব্যাংকগুলো বা বাণিজ্য মন্ত্রণালয় তাদেরকে অনুমতি দেবে। আশা করি, বাজারে কোনো পণ্যের সংকট হবে না। যদিও বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, সংকটে কম দামে খেজুর সরবরাহ করতে কমাতে হবে আমদানি শুল্ক। ক্যাবের বাজার বিশ্লেষক কাজী আবদুল হান্নান গণমাধ্যমে বলেছেন, ১০০ টাকায় যে খেজুরটি কিনে আনা হবে, সেটির ওপর শুল্ক ১০৩ টাকা। অর্থাৎ ক্রয়মূল্য ও শুল্ক মিলিয়ে পড়ে ২০৩ টাকা। এর ওপরে আমদানি করে আনতে খরচ ও মুনাফা। এই শুল্ক যদি কমিয়ে দেন, তাহলে হয়তো দাম কিছুটা কমানো সম্ভব। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর অন্তত ৪০টি দেশে খেজুর উৎপাদন হয়। উৎপাদনের দিক থেকে সেরা মিশর। এর পরে রয়েছে সৌদি আরব, ইরান, আলজেরিয়া এবং ইরাক। এসব দেশ থেকে আমদানি করতে হলে শুল্ক কমানোর বিকল্প নেই বলে দাবী ব্যবসায়ীদের।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT