3:14 pm , November 12, 2023

বিশেষ প্রতিবেদক ॥ সড়ক যত প্রশস্ত হচ্ছে ততই বিপদজনক হয়ে উঠছে বরিশালের ১১ কিলোমিটার মহাসড়ক সহ সংযোগ সড়ক এলাকা। নগরীর গড়িয়ার পাড় থেকে রুপাতলী পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ প্রায় সম্পন্নের পথে। আর এ সুযোগে বেড়েছে দ্রুতগামীতার প্রতিযোগিতাও। যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ লোকসমাগম স্থানগুলোতে রাস্তা পার হতে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। ইতিমধ্যে রাস্তা পার হতে গিয়ে নগরীর সিএন্ডবি রোডে বেশ কয়েকটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও নগরীর নথুল্লাবাদ, নতুনবাজার, বাংলাবাজার, চৌমাথা, বটতলা, সাগরদিতে যানজটে জনজীবন বিপর্যস্ত হচ্ছে এই ফুটওভার ব্রিজের অভাবে। বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গত ৯ মাসে বরিশাল বিভাগে ২৪ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২১ জন নিহত ও ৮৪ জন আহত হয়েছে। এদের বেশিরভাগই সড়কে বাস দুর্ঘটনার শিকার হলেও পথচারীদের সংখ্যাও কম নয়। যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে কুয়াকাটা বা পিরোজপুর যেতে অনেকগুলো বাজার, চৌরাস্তা ও তিন রাস্তার মোড় অতিক্রম করতে হয়। দ্রতগামী যানবাহনের চলাচল এসব সড়কে। তাই বাজার এলাকা বা গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট গুলোতে দ্রুত ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করে দেওয়া উচিত। আর ব্রিজ নির্মাণের সময় প্রতিবন্ধী, অন্ত:সত্ত্বা নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের কথা মাথায় রেখে এক্সিলেটর বা হুইলচেয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে। এখন একই দাবীতে একাট্টা হয়েছেন বরিশালের সাধারণ মানুষ ও সুশীল সমাজের নেতারা।
বরিশাল নগরীর আওতাধীন মহাসড়কের পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ এই মুহূর্তে খুবই জরুরী বলে দাবী তুলেছেন তারা। নগরীর নথুল্লাবাদ, চৌমাথা, রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকায় এই ফুটওভার ব্রিজের দাবীতে কিছুদিন আগে সদর রোডের অশ্বিনী কুমার টাউনহলের সামনে মানববন্ধনও করেছেন সচেতন নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ। বরিশাল সাহিত্য সংসদ, বরিশাল ফ্রেন্ডস ক্লাবসহ সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ দ্রুত অত্যাধুনিক ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের দাবী জানান। তারা জরুরী ভিত্তিতে বরিশাল নগরের নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ও চৌমাথা এলাকায় এবং রুপাতলী বাস টার্মিনালে এক্সিলেটর সমেত ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন করেছেন। বরিশাল সাহিত্য সংসদ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কেএসএ মহিউদ্দিন মানিক বীর প্রতীক বলেন, ইজিবাইক ও অটোরিকশা এই শহরের বোঝা। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি নাগরিকদের পথচলার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা প্রশাসনিক দায়িত্ব। সিটি করপোরেশন এলাকায় এ দায়িত্ব সম্পূর্ণ সিটি মেয়র এর উপর বর্তায়। তাই নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলো চিহ্নিত করে বিশেষ করে লোকসমাগম বেশি, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের পারাপারের বিষয়টি লক্ষ্য রেখে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করতে হবে। ব্রীজ নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত এসব স্থানে জেব্রা ক্রসিং তৈরি করে একজন অন্তত ট্রাফিক কনস্টেবলকে দায়িত্ব দিতে হবে।
মানিক বলেন, কমিউনিটি পুলিশের গত সভায় আমি এ বিষয়গুলো তুলে ধরেছি। কিন্তু কেউ কোনো গুরুত্ব দিয়েছে বলে মনে হয়নি।
অত্যাধুনিক ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণের দাবীতে মানববন্ধন করেছেন বরিশালের সিনিয়র সিটিজেন ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন। অশ্বিনী কুমার টাউন হলের সামনে আয়োজিত মানববন্ধনে বক্তারা জরুরী ভিত্তিতে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এক্সিলেটর ব্রিজ নির্মাণের দাবী জানিয়ে বলেন, প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে হাজার হাজার মানুষ রাস্তা পারাপার করছেন। এদের মধ্যে নারী, শিশু, বয়স্ক, বয়োবৃদ্ধ ছাড়াও অসংখ্য প্রতিবন্ধী রয়েছেন। যাদের পথচলা নিরাপদ করতে বরিশালের নথুল্লাবাদ, রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড এলাকা, হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা এবং আমতলার মোড় এলাকায় এক্সিলেটর নির্মাণ করতে হবে।
এ সময় সামাজিক আন্দোলনের নেতা কাজী মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের যেটুকু রাস্তা আছে, সেটুকুই এখন বিপদজনক হয়ে উঠেছে। রহমতপুর থেকে নথুল্লাবাদ ও রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পুরোটাই এখন মহাসড়ক। পদ্মা সেতু তৈরির পর থেকে এই সড়কে যানবাহনের চাপ অতিরিক্ত বেড়েছে। ফলে অহরহ দুর্ঘটনার শিকার হয়ে ইতিমধ্যেই শতাধিক প্রানহানী ঘটেছে। এছাড়াও নগরীর বটতলা চৌমাথা ও জেলখানার মোড় এলাকায় যানজট লেগেই থাকে। নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের পথচলা কষ্টসাধ্য। আর প্রতিবন্ধীদের অবস্থাতো অনুল্লেখযোগ্য।
ট্রাফিক পুলিশের উপপুলিশ কমিশনার তানভীর আরাফাত বলেন, আমাদের লোকবল সংকটের কারণে প্রতিটি পয়েন্টে ট্রাফিক কনস্টেবল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। তবে প্রতিটি পয়েন্টেই আমার সার্জেন্ট টহল দিচ্ছেন। জেব্রা ক্রসিংটা আমাদের হাতে নয় সিটি করপোরেশনের হাতে। মহাসড়কে আমরা সফল হলেও নগরীর ভিতরে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে আমরা ব্যর্থ হচ্ছি সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কারণে।
তিনি বলেন, নতুন মেয়র ১৪ নভেম্বর দায়িত্ব গ্রহণের পর আশা করি এ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ রদবদল হবে বরিশালে। ইতিমধ্যেই মেয়র খোকন সেরনিয়াবাত এর সাথে আমাদের বৈঠক হয়েছে। তিনি নিজেই নগরবাসীর কি কি প্রয়োজন তা খতিয়ে জানতে চেয়েছেন। ফুটওভার ব্রিজের বিষয়টিসহ আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান ট্রাফিক পুলিশের এই কর্মকর্তা।