কাউন্সিলর কালাম মোল্লা আত্মগোপনে স্বস্তিতে সাধারন মানুষ কাউন্সিলর কালাম মোল্লা আত্মগোপনে স্বস্তিতে সাধারন মানুষ - ajkerparibartan.com
কাউন্সিলর কালাম মোল্লা আত্মগোপনে স্বস্তিতে সাধারন মানুষ

3:16 pm , July 1, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ অবশেষে নগরীর আতঙ্ক এবং চিহ্নিত তোলাবাজ বিতর্কিত কাউন্সিলর আজাদ হোসেন কালাম মোল্লার সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের লাগামে টান পড়েছে। অবৈধ প্রভাব খাটিয়ে দখল সন্ত্রাস ও বিসিসি’র কর্মচারীকে লাঞ্চিত করতে গিয়ে মামলার জালে ফেঁসে গেছে সে। ফলে মাত্র দু’দিন আগেও যার হুংকারে সাধারণ মানুষ ছিলো আতংকিত, সেই কালাম মোল্লা নিজেই এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তার এমন পরিনতিতে সাধারন মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। একই সাথে মামলা দায়েরের তিনদিন পার হলেও তাকে গ্রেপ্তার না করায় সাধারন মানুষের ক্ষোভ বেড়েছে এয়ারপোর্ট থানার পুলিশের উপর। সাধারন মানুষের অভিযোগ পুলিশ কৌশলে গ্রেফতার করছে না নগরীর ভয়ঙ্কর চাঁদাবাজ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর কালাম মোল্লাকে। স্থানীয়দের দাবী পুলিশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদেই কালাম মোল্লা বেপরোয়া। কালাম মোল্লার চাঁদাবাজিসহ সকল অপকর্মের মাধ্যমে আনা অর্থের একটি অংশ পুলিশের পকেটে যায়। তাই পুলিশ তাকে দেখেও না দেখার কৌশলে এড়িয়ে যাচ্ছে। যদিও পুলিশের দাবী ঘটনার পর থেকে আত্মগোপনে থাকায় তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, নগরীর বীরমুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগের প্রবীন নেতা প্রয়াত জলকাদের মোল্লার ছেলে আজাদ হোসেন কালাম মোল্লা। ব্যক্তি হিসেবে জলকাদের মোল্লার বেশ প্রভাব ছিল। সেই সাথে সাথে নিজেকে ক্ষমতাসীন দলীয় সাইনবোর্ড নিয়ে কালাম মোল্লা নিজেকে অপরাধ জগতের ডন হিসেবে প্রতিষ্ঠার মিশন শুরু করে। যে কারনে কাউকেই গুরুত্ব না দিয়ে নিজের সিদ্ধান্ত বহাল রাখছে। দলের জন্য কোন অবদান না রাখলেও নেতা বনে গত ১০ বছরে নিজের আখের গুছিয়ে নিয়েছে সে। গড়িয়ারপাড় এলাকায় মাদক ব্যবসার নেতৃত্ব, ট্রাক থামিয়ে চাঁদাবাজী, সাধারণ মানুষের জমি দখল, নারীদের শ্লীলতাহানী সহ একের পর এক বিতর্কিত কর্মকান্ডের মাধ্যমে থাকে সব সময় আলোচনায়। সন্ত্রাসী কালাম মোল্লার অপকর্মের শিকার হয়েছে পুলিশ এবং রাস্তার পাগলও। এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে থানায় একাধিক অভিযোগও রয়েছে।
এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ১ জুন একটি সালিশ-বৈঠকে কালাম মোল্লার হুমকি’র শিকার হন একই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনির। তাকে লাঞ্ছিত করে কালাম মোল্লা। এই ঘটনায় একই দিন কালাম মোল্লার বিরুদ্ধে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন এসআই মনির।
তাছাড়া চাঁদাবাজীর ভাগ না দেয়ায় ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর বিশাল বহর নিয়ে এসে পুলিশের সামনে নগরীর বান্দ রোডস্থ বিভাগীয় ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সশস্ত্র হামলা করে কালাম মোল্লা। তার সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলায় অন্তত ১০ জন আহত হয়েছিলো। এই ঘটনায় থানায় অভিযোগ দেয়া হয়েছে।
অপর একটি সূত্র জানায়, নগরীর শীতলাখোলা এলাকায় কালাম মোল্লার জমি রয়েছে। ওই জমির পাশে এক আমেরিকা প্রবাসী বাড়ি নির্মান কাজ শুরু করেন। এজন্য ওই প্রবাসীর কাছে মোটা অংকের চাঁদা দাবী করে কালাম মোল্লা। তা না দেয়ায় বন্ধ করে দেয়া হয় নির্মান কাজ। পরে এক আওয়ামী লীগ নেতার হস্তক্ষেপে চাঁদা দেয়া ছাড়াই নির্মান কাজ করেন ওই প্রবাসী।
এদিকে গড়িরপাড় এলাকায় চাঁদাবাজীর দুর্গ গড়ে তুলেছে কালাম মোল্লা। তিনি তথা কথিত শ্রমিক সংগঠনের নামে প্রকাশেই ট্রাক থামিয়ে চাঁদাবাজী করছে। চাঁদা না দেয়া ট্রাকগুলো প্রবেশ করতে পারছে না নগরীতে। তাছাড়া গড়িয়ারপাড় এলাকায় বিশাল এক মাদক সিন্ডিকেটের নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বিশেষ করে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পরে তার সন্ত্রাসী কর্ম আরো বেপরোয়া হয়ে যায়। তারই অংশ হিসেবে কালাম মোল্লা গড়িয়ারপার এলাকায় সড়ক জনপদ ও বিসিসি’র জমি দখল করে। দখল করা জমিতে বানিজ্যিক স্টল নির্মান কার্যক্রম শুরু করেন তিনি। গত শুক্রবার দখল কার্যক্রমে বাধা দিতে যান সিটি কর্পোরেশনের সড়ক পরিদর্শকরা (আরআই) রেজাউল কবির ও মীর মাসুদ রানা। এজন্য কালাম মোল্লার হাতে শারীরিক লাঞ্চনার শিকার হন বিসিসি’র আরআই মীর মাসুদ রানা। এই ঘটনায় শুক্রবার রাতেই কালাম মোল্লার বিরুদ্ধে এয়ারপোর্ট থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। এমনকি ঘটনার পর দিন অর্থাৎ শনিবার কালাম মোল্লার অবৈধ স্থাপনা গুড়িয়ে দেয় বিসিসি।
এ প্রসঙ্গে এয়ারপোর্ট থানার ওসি মো. মাহাবুব আলম বলেন, কালাম মোল্লা কোন পুলিশ কর্মকর্তাকে হুমকি দিয়েছে কিনা সে বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে তার বিরুদ্ধে কয়েকটি অভিযোগ রয়েছে। ইমান আলী বাবুল শরীফ অভিযোগগুলো করেছেন। সেগুলো তদন্তনাধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশনের আরআই যে মামলাটি করেছে ওই মামলায় কাউন্সিলর আজাদ হোসেন কালাম মোল্লাকে যে কোন সময় গ্রেফতার করা হতে পারে। কিন্তু সে আত্মগোপনে রয়েছে। বিধায় তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। কালাম মোল্লার অবস্থান নিশ্চিত হতে পারলেই তিনি গ্রেফতার হবে বলে জানিয়েছেন ওসি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT