বিদ্যুৎ বিতরন ব্যবস্থায় চরম দূর্ভোগে নগরবাসী বিদ্যুৎ বিতরন ব্যবস্থায় চরম দূর্ভোগে নগরবাসী - ajkerparibartan.com
বিদ্যুৎ বিতরন ব্যবস্থায় চরম দূর্ভোগে নগরবাসী

3:15 pm , June 22, 2019

নাছিম উল আলম ॥ বর্ষার দুঃসহ গরমের সাথে লাগামহীন বিদ্যুৎ বিভ্রাটে অতিষ্ঠ বরিশাল মহানগরবাসী সহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ এলাকার মানুষ। চিকিৎসা সেবা থেকে জরুরী পানি সরবরাহ পর্যন্ত বিপর্যস্ত। শিল্প ও ব্যবসাÑবানিজ্যের অবস্থাও নাজুক। আষাঢ়ের এসময়েও দক্ষিণাঞ্চলে তাপমাত্রার পারদ ৩৪-৩৫ডিগ্রী সেলসিয়াসে। চলতি মৌশুমে বরিশালে তাপমাত্রার পারদ ৩৬.৮ডিগ্রীতেও উঠে গিয়েছিল। এখনো বরিশাল বিভাগীয় সদরের আকাশে মেঘ জমলে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। বজ্রপাতের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয় মহানগরীর বিদ্যুৎ সরবরাহ। এমনকি দক্ষিণাঞ্চলের গ্রাম-গঞ্জে পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার চেয়ে শহরগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ও বিতরন ব্যবস্থা ক্রমশই নাজুক আকার ধারন করছে বলেও হতাশ গ্রাহকগন। অভিযোগ রয়েছে, দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলা ও ছয়টি উপজেলা সদরে ‘ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানী-ওজোপাডিকো’ বিদ্যুৎ বিতরন ও সরবরাহের দায়িত্ব থাকলেও গ্রাহক পর্যায়ে নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ পৌছে দেয়ার ক্ষেত্রে এ কোম্পানী সাফল্যের কাছেও পৌছতে পারেনি। ২০০২ সালের ৪ নভেম্বর ওজোপাডিকো গঠন সহ ২০০৫-এর ১ এপ্রিলে কোম্পানিটির বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর পর থেকে গত প্রায় ১৪ বছরেও গ্রাহক সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারেনি পিডিবি’র অধিভূক্ত এ কোম্পানীটি। তবে এসময়কালে কোম্পানিটির কর্মকর্তাÑকর্মচারীদের বেতন ভাতা তিনগুন এবং বিদ্যুতের দরও প্রায় আড়াইগুন বেড়েছে। কিন্তু গ্রাহকের ঘরে নিরবিচ্ছিন্নভাবে বিদ্যুৎ পৌছে দেয়ার ক্ষেত্রে এ কোম্পানিটির সফলতা তলানিতে। খোদ বরিশাল মহানগরীর বিদ্যুৎ বিতরন ব্যবস্থাও এখন সাম্প্রতিককালের নাজুক পর্যায়ে। তবে ওজোপাডিকো’র মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবী, তিন দশকেরও পুরনো সঞ্চালন, সরবরাহ ও বিতরন লাইন সহ ওভারলোডেড ট্রান্সফর্মার সহ জরাজীর্ণ বিদ্যুৎ সরঞ্জাম দিয়ে এ নগরীর বিতরন ব্যবস্থা চলছে সম্পূর্ণ জোড়াতালী দিয়ে। নগরীর যে প্রায় ২৫টি ফিডারে রূপাতলী, কাশীপুর ও পলাশপুর ৩৩/১১কেভি সাব-স্টেশন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে, সেগুলোর পূণর্বাসন ও আধুনিকায়নও জরুরী। ২টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় রূপাতলী থেকে কাশীপুর ও পলাশপুর সাব-স্টেশনমুখি ৩৩কেভী লাইন পূণর্বাসন কাজ শুরু হলেও মাঝপথে থেমে আছে। অপরদিকে নগরীর বিতরন লাইন সহ ১১/.০৪ ট্রান্সফর্মার সহ সংযূক্ত সরঞ্জামাদীও দীর্ঘদিনের পুরনো। তবে গত এক দশকে এ নগরীতে অন্তত ৫শ ১১/.০৪ ট্রন্সফর্মার পরিবর্তন করা হলেও সেগুলোর প্রয়োজনীয় রক্ষনাবেক্ষন হচ্ছে না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ নগরীতে বিদ্যুতের দূর্বল ও ভঙ্গুর বিতরন ব্যবস্থার জন্য নিয়মিত মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষন-এর অভাবকে দায়ী করেন ওয়াকিবহাল মহল। আর বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে ঘনবসতিপূর্ণ এ নগরীতে ৩৩ কেভি ও ১১ কেভি লাইন ব্যবস্থাপনার জন্য স্থান সংকুলান না হবার কথা বলা হয়ে থাকে। তবে খোজ নিয়ে জানা গেছে, এ নগরীর ১১ কেভি ফিডারগুলোতে গড়ে ৪০টি করে ট্রন্সফর্মার থাকলেও তার নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষন সহ ১১কেভি সরবরাহ ও .০৪ কেভি বিতরন লাইনগুলোও নিয়মিত রক্ষনাবেক্ষন হচ্ছেনা। ট্রান্সফর্মারগুলোর তেল পরিবর্তন সহ লুপ, জাম্পার সমুহও নিয়মিত পর্যবেক্ষন ও রক্ষনাবেক্ষনের অভাব রয়েছে।
গত দুদিন ধরে এ নগরীর সার্কিট হাউজ ফিডার, আলেকান্দা ফিডার ও হাতেম আলী কলেজ ফিডারে একাধিকবার গোলযোগের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত হাতেম আলী কলেজ ফিডারটি ৮বার ট্রিপ করেছে। এছাড়াও ঐদিন দুপুরে প্রায় দু ঘন্টা ৩টি ফিডার বন্ধ করে মেরামত কাজ করা হয়েছে। শণিবার রূপাতলীÑপলাশপুর ৩৩কেভি লাইনটি বন্ধ থাকায় বিকল্প ব্যবস্থায় কাশীপুর সাব-স্টেশন থেকে পলাশপুর সাব-স্টেশনে বিদ্যুৎ নিতে গিয়ে দুটি সাব-স্টেশনের প্রায় ১৪টি ফিডারে দিনের বেশীরভাগ সময়ই লোডশেডিং করতে হয়। এছাড়াও দপদপিয়া ৩৩কেভি সাব-স্টেশনটিও শণিবার দীর্ঘ সময় বন্ধ ছিল। অথচ সারা দেশের মত এ নগরীতেও কোন বিদ্যুৎ ঘাটতি নেই।
এ নগরীতে বেশীরভাগ সময়ই কোন পূর্ব ঘোষনা ছাড়াই একেকটি ৩৩ কেভি সাব-স্টেশন ঘন্টার পর ঘন্টা বন্ধ রেখে কাজ করা হচ্ছে। ফলে নগরীর মানুষ বিদ্যুতের সাথে পানি ও জরুরী চিকিৎসা পরিসেবা নিয়েও চরম দূর্ভোগের মধ্যেই আছেন। ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বরিশাল মহানগরীর বিদ্যুৎ বিতরন ও সরবরাহ ব্যবস্থা নির্বিঘœ করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন ওজোপাডিকো’র মাঠ পর্যায়ের প্রকৌশলী থেকে শুরু করে কর্মচারীদের দায়িত্ব-কর্তব্যের প্রতি আন্তরিক হওয়া। গ্রাহক সন্তুষ্টি অর্জনেরও কোন বিকল্প নেই। পাশাপাশি যে দুটি উন্নয়ন প্রকল্প চলমান রয়েছে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণ মান সম্মতভাবে তা শেষ করারও কোন বিকল্প নেই বলে মনে করছেন মহলটি।
এসব বিষয়ে ওজোপাডিকো’র ভারপ্রাপ্ত পরিচালক-কারিগরি ও প্রধান প্রকৌশলীর সাথে আলাপ করা হলে তিনি সব কিছু নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষন সহ দিক নির্দেশনা প্রদান এবং মূল্যায়নের কথা জানান। খুব শীঘ্রই বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্যুৎ বিতরন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাপক ইতিবাচক পরিবর্তনের কথাও জানান তিনি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT