রিপ্রেনজেটিভদের কুপিয়ে জখমের নির্দেশ দিলেন শেবাচিম পরিচালক! রিপ্রেনজেটিভদের কুপিয়ে জখমের নির্দেশ দিলেন শেবাচিম পরিচালক! - ajkerparibartan.com
রিপ্রেনজেটিভদের কুপিয়ে জখমের নির্দেশ দিলেন শেবাচিম পরিচালক!

3:18 pm , June 10, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. বাকীর হোসেনের বিরুদ্ধেঔষধ কোম্পানীর (রিপ্রেজেন্টেটিভ) প্রতিনিধিদের কুপিয়ে মাটিতে ফেলার নির্দেশ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার এক রিপ্রেজেন্টেটিভের সাথে হাসপাতালের কর্মচারীর অসদাচারন ও দুর্ব্যবহারের ঘটনায় পরিচালকের কাছে নালিশ করতে গেলে চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী মামুনকে নির্দেশ দেন তিনি। রিপ্রেজেন্টেটিভদের সংগঠন ফারিয়ার নেতারা এ অভিযোগ করে অভিযুক্ত মামুনের দৃস্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন। ২ বছর আগে হাসপাতালের বিপুল পরিমান সরকারী ওষুধ সহ চতুর্থ শ্রেনীর সরকারী কোয়ার্টার থেকে মামুন ও তার মা হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। পরবর্তীতে মামলার খবর গোপন রেখে হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেনীর চাকুরী পায় মামুন। পুলিশের দৃস্টিতে মামুন চতুর্থ শ্রেনীর সরকারী কোয়ার্টারের মাদকসেবীদের হোতা হিসেবে পরিচিত। এছাড়াও ১৫ দিন পূর্বে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বির্তকিত এই কর্মচারীকে অন্যত্র বদলির নির্দেশ দেন। নির্দেশের পর মামুনকে বদলি করে সাত দিন পরে পূর্বের পদে আবার ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
ঘটনার শিকার স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের প্রতিনিধি মো. মেজবাউদ্দিন বলেন, গতকাল সোমবার সকাল ৯টা ৩ মিনিটে হাসপাতালের শিশু বর্হিবিভাগের চিকিৎসক ডা. ফালাহ আল দ্বীনকে হাসপাতালের প্রধান ফটকে নামিয়ে দিয়ে তিনি মোটর সাইকেল ঘুরাচ্ছিলেন। এ সময় হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী মামুন পরিচালকের বরাত দিয়ে তাকে ধরে নিয়ে যেতে উদ্যত হয়। তিনি বলেন, সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ঔষধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের হাসপাতালে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তিনি হাসপাতালে প্রবেশ করেননি, কোম্পানীর কোন কাজও করেননি, একজন চিকিৎসককে গেটে নামিয়ে দিয়েছেন মাত্র, এতে কি অপরাধ হয়েছে জানতে চাইলেই মামুন উত্তেজিত হয়ে তার শার্টের কলার ধরে টানাটানি করে এবং অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করে। আশেপাশে উপস্থিত বিভিন্ন কোম্পানীর প্রতিনিধিরা তাৎক্ষনিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করেন।
এ ঘটনার পর ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের সংগঠন ফারিয়ার নেতারা পরিচালকের কাছে তার অফিস কক্ষে অভিযোগ করতে যান। চতুর্থ শ্রেনীর একজন কর্মচারীর লাঠি নিয়ে ঘুরে বেড়ানো এবং শিক্ষিত মানুষদের সাথে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ পরিচালক তাদের উপর চড়াও হন পরিচালক। এ সময় অভিযুক্ত মামুনের উপস্থিতিতে পরিচালক বলেন, ‘লাঠি নয় এরপর ছুরি নিয়ে ঘুরে বেড়াবে’। যাকে সামনে পাবে তাকেই কোপাবে। পরিচালক মামুনকে উদ্দেশ্য করে বলেন, কি পারবিনা কোপাইতে ? মামুন ‘পারমু’ স্যার বলে হ্যাঁ সূচক সন্মতি দিলে এরপর থেকে কাউকে হাসপাতাল কম্পাউন্ডে পেলে কুপিয়ে মাটিতে শোয়াইয়া (শুইয়ে) দিতে নির্দেশ দেন তিনি। এতে রিপ্রেজেন্টেটিভরা হতভম্ব হয়ে পরিচালকের কক্ষ থেকে বেরিয়ে যান।
ঘটনার শিকার মেজবাউদ্দিন বলেন, তিনি যদি কোন অন্যায় করেন তাহলে তার কোম্পানী তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। আর যদি হাসপাতালের কর্মচারী কোন অন্যায় করে তাহলে তার বিরুদ্ধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু সেখানে পরিচালক তাদের কোন কথাই শোনেনি। উল্টো এরপর থেকে তাদের কোপানোর নির্দেশ দিয়েছেন কর্মচারীকে। হাসপাতালের পরিচালকের মতো একজন সরকারী কর্মকর্তার কাছ থেকে এই ব্যবহার কাম্য নয় বলে তিনি জানান।
ফার্মাসিউটিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ এসোসিয়েশনের (ফারিয়া) বরিশাল বিভাগীয় সভাপতি রেনেটার জোনাল ম্যানেজার শহীদ হোসেন মুন্না জানান, গতকাল সকালে তাদের এক সদস্য লাঞ্চিত হওয়ার পর তারা জরুরী বৈঠক করেন। সেখানে কোন সিদ্ধান্ত আসেনি। আগামীকাল বুধবার ফের ফারিয়ার সভা আহ্বান করা হয়েছে। ওই সভার পরে তারা কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন।
শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকীর হোসেন বলেন, সকাল ৯টা থেকে ১টা পর্যন্ত হাসপাতাল কম্পাউন্ডে কোন রিপ্রেজেন্টেটিভ কিংবা মোটর সাইকেল প্রবেশ নিষেধ। তিনি সিসি ক্যামেরায় দেখছিলেন, প্রধান গেটের সামনে কিছু রিপ্রেজেন্টেটিভ ঘুরঘুর করছে। এরপর তিনি মামুন সহ ৩জন কর্মচারীকে তাদের ডেকে আনতে পাঠিয়েছেন। তার কথা বলার পরও তারা আসেনি। শিক্ষিত হয়েও তারা তার অশিক্ষিত কর্মচারীকে তুই তোকারী বলে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কর্মচারী মামুন একজনের শার্টের কলার ধরে। এ ঘটনার পর তারা তার কাছে নালিশ করতে গেলে তিনি উপমা হিসেবে রিপ্রেজেন্টেটিভদের বলেছেন, কথা না শুনলে তো দা-ছুরি নিয়ে নামতে হবে। ‘ছুরি দিয়ে কোপানো’ কোন নির্দেশ নয়, এটা ‘কথার কথা’ বলে দাবী করেন পরিচালক।
ফারিয়ার একটি সূত্র বলেছে, ঈদের সপ্তাহখানেক আগে হাসপাতালের প্রায় দেড় হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সৌজন্য ইফতার করানোর জন্য ফারিয়ার নেতাদের কাছে আবদার করেছিলেন পরিচালক। ফারিয়া এই আবদার প্রত্যাখ্যান করার পর থেকেই পরিচালক ওষুধ কোম্পানীর প্রতিনিধিদের উপর বিরূপ হন বলে দাবী তাদের।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT