পুরিÑউড়িশ্যা উপকুলে তান্ডব চালিয়ে শক্তি ক্ষয় করে দক্ষিনের পথে ফনি পুরিÑউড়িশ্যা উপকুলে তান্ডব চালিয়ে শক্তি ক্ষয় করে দক্ষিনের পথে ফনি - ajkerparibartan.com
পুরিÑউড়িশ্যা উপকুলে তান্ডব চালিয়ে শক্তি ক্ষয় করে দক্ষিনের পথে ফনি

3:48 pm , May 3, 2019

প্রতিবেদক ॥ ঘূর্ণিঝড় ফণি’র প্রভাবে শুক্রবার দুপর থেকে দেশের দক্ষিন উপকুল আবহাওয়া কিছুটা পরিবর্তন হতে শুরু করলেও সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত তা আশংকাজনক ছিল না। তবে মধ্যরাতের পরেই ফনি সুন্দরবন-এর সর্ব দক্ষিনে হিরন পয়েন্ট থেকে পশ্চিমের রায়মঙ্গল হয়ে পশ্চিমবঙ্গ উপকুলে আছড়ে পড়ার কথা রয়েছে। দক্ষিনাঞ্চলেল পাঁচশতাধীক আশ্রয় কেন্দ্রে শুক্রবার সকাল থেকে সআ পর্যন্ত অন্তত ৪০ হাজার নারী-শিশু ও বয়স্কদেও আশ্রয় দেয়অ হয়েছে।
সকাল থেকে তীব্র রোদের পরে দুপুর ১টার দিকে অনেকটা আকষ্মিকভাবেই দক্ষিনাঞ্চল জুড়ে হালকা বৃষ্টি শুরু হলেও মিনিট পনেরর মধ্যে তা থেমে যায়। পুনরায় দুইটার দিকে দশ নটিক্যাল মাইল বেগের ঝড়ো হাওয়ার সাথে সামান্য বৃষ্টিপাত হলেও একইভাবে তা পনের মিনিটের মাথায় বন্ধ হয়ে গেছে। তবে ঐ সামান্য ঝড়ো হাওয়াতেই বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবারহ বন্ধ হয়ে যায়। বিকেলে আরো এক দফঅ হালকা বৃষ্টিতে গোটা দক্ষিনাঞ্চল থেকে দাবদহ বিদায় নিলেও জজনমনে স্বস্তি ছিলনা। টানা দাবদহের পরে শুক্রবার দু দফায় ১৩মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের পরেও বরিশালে তাপমাত্রার পারদ ৩৫.২ডিগী সেলসিয়াসে ওঠে। রাত ৮টার দিকে এরিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সমগ্র দক্ষিন উপকুল জুড়েই মেঘলা আকাশের সাথে গুমোট আবহাওয়া বিরাজ করছিল। বাতসের তেমন তীব্রতা নেই। অমবশ্যার ভরা কোটালে ভর করে এগিয়ে আসা ঘূর্ণিঝড় ফনি’র প্রভাবে বঙ্গোপসাগর কিছুটা ফুসে উঠছে। সকাল ১০টায় শুরু হওয়া জোয়ারে উপকুলভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় দুই ফুট বেশী উচ্চতা নিয়ে নদ-নদীগুলো প্রবাহিত হয়েছে। তবে বিকেল ৪টার পরে শুরু হওয়া ভাটার সময় পরিস্থিতি কি হয় তা এখনো বোঝা যাচ্ছে না।
এরই মধ্যে পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ ও কলাপাড়া এবং বাগেরহাটের শরনখোলার কয়েকটি স্থানে ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি প্রবেশ করে জনবসতি ও ফসলী জমির জন্য সংকট তৈরী করছে। রাত ১০টায় পুনরায় জোয়ারে পরিস্থিতির অরো অবনতির আশংকা করছেন গ্রামবাশী। তবে ঘূর্ণিঝড় ফণি রাত ৩টায় শুরু হওয়া ভাটির সময় সুন্দরবন উপকুলে আঘাত হানলে ঝড়ের তীব্রতা হ্রাস সহ ক্ষয়ক্ষতির পরিমানও কিছুটা হৃাস পাবার ব্যাপারে আশাবাদী উপকুলবাসী। রাত ৮টায় উড়িশ্যা অতিক্রম করে পশ্চিমবঙ্গের দিঘা’র কাছে ফনির তীব্রতা দেড়শ কিলোমিটারে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ উপকুলে পৌছতে সে আরো শক্তি ক্ষয় করবে।
ঘন্টায় প্রায় ২শ কলোমিটার বেগের ঝড়ো হাওয়ার সাথে প্রবল বর্ষন নিয়ে ফনি’র শুক্রবার সকাল সাড়ে ৮টায় পুরিতে আছড়ে পড়ে। তীব্র মাত্রার এ ঝড় মধ্যরাতের পরে বাংলাদেশের দক্ষিণÑপশ্চিম ও ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণÑপূর্ব উপকুলে পৌছে যাবে বলে আবহাওয়াবীদগন আশংকা করছেন। তবে সরকারী নির্দেশে উপকুলের ১৩টি জেলার ৪০টি উপজেলার সাড়ে ৩শরও বেশী ইউনিয়নের কয়েক লাখ নারী ও শিশু সহ বয়স্ক এবং অসুস্থদের অগ্রাধীকার ভিত্তিতে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার কাজ শুরু হয় সকাল থেকে। বিশেষ করে উপকুলীয় বণ্যা নিয়ন্ত্রন বাঁধের বাইরে ও ভেতরের ঝুকিপূর্ণ এলাকার নারী ও শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে। উপকুলের ঝুকিপূর্ণ এলাকা থেকে ৪ সহশ্রাধীক আশ্রয় কেন্দ্রে সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত ১০ লাখ মানুষকে সরিয়ে আনার কথা বলেছে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রনালয়। রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচী-সিপিপি’র ৫৫ হাজার সেচ্ছাসেবক উপকুলের ৪০টি উপজেলার সাড়ে ৩শ ইউনিয়নে তার ৩ হাজার ৬৮৪টি ইউনিটের মাধ্যমে যুদ্ধকালীন তৎপরতায় উদ্ধার অভিযান সহ প্রচারনার কাজে রয়েছে। বৃহস্পতিবার দিনভর উপকুল জুড়ে মেগাফোনের মাধ্যমে সাইরেন বাজান ছাড়াও ঘন জনবসতিপূর্ণ এলাকায় মাইক যোগে প্রচারানার পাশাপাশি বিপদ সংকেতপূর্ণ ৩টি করে লাল পাতকা উত্তোলন করা হয় দক্ষিন উপকুল জুড়ে। সিপিপি’র বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, খুলনা, চট্টগ্রাম,কক্সবাজার ও নোয়াখালী জোনাল অফিসগুলোর সাথে উপকুলের ১৪৬টি ভিএইচএফ ও এইচএফ স্টেশনের মাধ্যমে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা সহ মনিপটরিং অব্যাহত রয়েছে।
তবে ঝুকিপূর্ণ এলাকার মানুষকে আশ্রয় কেন্দ্রে নয়া সম্ভব হলেও লাখ লাখ গবাদিপশু নিয়ে চরম অনিশ্চয়তায় উপক’লবাশী। দূর্যোগের সময় উপকুলের এক কোটিরও বেশী গৃহপালিত পশু পাখির জন্য কোন নিরাপদ আশ্রয়স্থল এখনো গড়ে ওঠেনি। উপকুলের বেশীরভাগ গৃহকর্তাই গবাদী পশুর জন্য নিজের জীবন বিপন্ন করে হলেও বাড়ী ছাড়তে চাচ্ছেন না। এদিকে আজ মধ্যরাতের পরে ফনি দেশের দক্ষিন-পশ্চিম উপকুলে আঘাত হানলেও দীর্ঘ পথ পারি দিতে গিয়ে ঝড়টি অনেক শক্তি ক্ষয় করছে। পাশাপাশি শুক্রবার সকাল থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত বঙ্গোপসাগরে দুটি ভাটার সৃষ্টি হওয়ায় ঝড়ের শক্তি আরো কিছুটা হ্রাস পাবার সম্ভাবনার ব্যাপারে আশাবাদী আবহাওয়া বীদগন। সেক্ষেত্রে ফনি দক্ষিন-পশ্চিমের সুন্দরবন উপকুলে আঘাত হানলেও তার তীব্রতা ৮০ কিলোমিটারের মধ্যেই থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল। উপরন্তু প্রকৃতির এ তান্ডবকে রুখে দিতে পারে ‘প্রকৃতিক ভারসাম্যের অন্যতম রক্ষাকবজ সুন্দরবন’। ফলে এঝড় নিয়ে আতংকিত না হয়ে পরিপূর্ণ সতর্কতার সাথে তা মোবলার পরমর্শ সরকারী মহলে। পাশাপাশি সিপিপি’র সেচ্ছাসেবকরাও যুদ্ধকালীন তৎপড়তায় উপকুলীয় দূর্যোগপ্রবন এলাকায় কাজ করে যাচ্ছে দিনরাত । তবে সুপার সাইক্লোন-‘ফনি’ দড়জায় কড়া নাড়লেও তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের চেয়ে দুই ডিগ্রী বেশী রয়েছে। যা এধরনের ঘূর্ণিঝড়ের অন্যতম অনুষঙ্গ বলে মনে করছেন আবহাওয়াবীদগন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT