সকল ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষনা ফণী মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্কতায় বিসিসি-জেলা প্রশাসন সকল ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষনা ফণী মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্কতায় বিসিসি-জেলা প্রশাসন - ajkerparibartan.com
সকল ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ ঘোষনা ফণী মোকাবেলায় সর্বোচ্চ সতর্কতায় বিসিসি-জেলা প্রশাসন

3:11 pm , May 2, 2019

মর্তুজা জুয়েল ॥ ঘূর্ণিঝড় “ফণী” মোকাবিলায় বরিশাল সিটে কর্পোরেশন এবং জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতামূলক প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। যে কোন ধরনের প্রানহানী এবং ক্ষতি এড়াতে মাঠ পর্য়ায়ে কাজ করছেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাদ সাদিক আবদুল্লাহসহ, জেলা প্রশাসন, দূর্যোগ প্রস্তুতি বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, বিদ্যুত বিভাগ, বিআইডব্লিউটিএ, পুলিশ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তর। মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ ও জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমানের নির্দেশে জরুরী বিদ্যুত ব্যবস্থা, উপরে পড়া গাছ দ্রুত অপসারন, জরুরী খাদ্য সহায়তা, আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্ততকরন, নদী তীরবর্তী বাসিন্দাদের নিরাপদে অবস্থান, জরুরী ঔষধ সরবরাহ, নৌ চলাচল বন্ধসহ সকল ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। এ সকল নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসন পৃথকভাবে একাধিক বৈঠক করেছেন সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে।
গতকাল বৃহস্পতিবার  বিকেলে ফণী মোকাবেলায় পূর্ববর্তী অবহিতকরণ সভা করেছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন। প্রথমবারেরমত গঠিত হওয়া বরিশাল সিটি কর্পোরেশন দূর্যোগ প্রস্তুতি কমিটির সভাপতি ও বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাদ সাদিক আবদুল্লাহর সভাপতিত্বে এ সভা হয়। সেখানে দূর্যোগ মোকাবিলায় সকল ধরনের প্রস্তুতি গ্রহনের সিদ্ধান্ত হয়। সভায় মেয়র সেরনিয়াবাদ সাদিক আবদুল্লাহ  বলেন, সিটি কর্পোরেশনের মধ্যে নদী তীরবর্তী ও বর্ধিত এলাকা ৫, ৬, ৯, ১০, ১১, ১২, ২৬ ও ২৪ নং ওয়ার্ড কিছুটা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে জেলার যে কোন স্থানের দূর্যোগের ঘটনা ঘটলে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে প্রয়োজন হলে সহায়তা করা হবে। এ সময় তিনি সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুত বিভাগের কর্মকর্তাদের তাৎক্ষনিক একটি জেনারেটর চালু রাখার নির্দেশ দেন। তিনি আরো বলেন, ৩০টি ওয়ার্ডের ৩০টি নিয়ন্ত্রন কক্ষ খোলা হবে, পাশাপাশি একটি প্রধান নিয়ন্ত্রন কক্ষ খোলা হচ্ছে। দুযোর্গ মোকাবেলায় ৩০টি স্বেচ্ছা সেবক টিম গঠন করা হবে। সভায় অন্যান্যদের মধ্যে কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খাইরুল ইসলাম , বরিশাল মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মো: ইউনুস, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো: মাহাফুজুর রহমান, বরিশাল সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু, বরিশাল সিভিল সার্জন ডা: মো: মনোয়ার হোসেন, বিসিসির সচিব ইসরাইল হোসেন, প্রধান প্রকৌশলী খান মো: নুরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ হোসেন চৌধুরী, বরিশাল প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এ্যাড. এসএম ইকবাল, দৈনিক আজকের পরিবর্তনের প্রকাশক ও সম্পাদক কাজী মিরাজ মাহমুদ, বরিশাল সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি কাজল ঘোষ, সকল ওয়ার্ডের কাউন্সিলরগন, ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন। এরআগে দুপুরে সিটি মেয়র বরিশাল মহানগরীর নদী তীরবর্তী এলাকা স্পীডবোট যোগে পরিদর্শন করেন।
এদিকে ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় দফায় দফায় সভা করছে বরিশাল জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন সংস্থা। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এরই মধ্যে সব ধরণের প্রস্তুতি নিয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টায় এবং বিকেল সাড়ে ৩ টায় দুইটি সভা করেছে জেলা ও বিভাগীয় প্রশাসন। বিকেলের সভা থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্য্যালয়ের সঙ্গে ভিডিও কনআরেন্সে যুক্ত হয় প্রশাসনের উর্ধতন কর্মকর্তারা। এ সময় বিভাগীয় কমিশনার রাম চন্দ্র দাশ, ডিআইজ মোঃ সফিকুল ইসলাম, পুলিশ কমিশনার শাহবুদ্দিন খান, পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম, র‌্যাব-৮ এর উর্ধতন কর্মকর্তাগন উপস্থিত ছিলেন। সার্বিক বিষয়ে বরিশালে জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান বলেন, ৩ মে আঘাত হানতে পারে ফণী। তাই এটির মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছে বরিশাল। এরইমধ্যে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও উন্নয়ন সংস্থার সাথে দফায় দফায় সভা করা হয়েছে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে দূর্যোগ মোকাবিলা নিয়ে আগাম প্রস্তুতি মূলক কর্মকান্ড পরিচালিত হচ্ছে। দূর্যোগের সতর্কতা নিয়ে জনসাধারনকে অবহিত করার জন্য ইউনিয়ন পর্যায়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিভিন্ন সংস্থার স্বেচ্ছাসেবকদের প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ১ লাখ ২৫ হাজার লোকের ধারনক্ষমতা সম্পন্ন জেলার ২৩২টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার পাশাপাশি বিভিন্ন বিদ্যালয় ভবন, কমিউনিটি সেন্টার ও উপাসানালয় ভবনও প্রস্তুত রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দূর্যোগ পরবর্তী ক্ষতিগ্রস্থদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমানে শুকনো খাবারসহ বিভিন্ন সহায়তার ব্যবস্থাও রাখার হয়েছে। এরইমধ্যে ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)র আওতাধীন বরিশাল বিভাগের ১ হাজার ১০৮টি আশ্রয়কেন্দ্র ও ২৫হাজার পাচ জন  জন স্বেচ্ছাসেবক প্রস্তুত রাখা হয়েছে। যেহেতু আবহাওয়া বার্তায় জলোচ্ছাস ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার কথা বলা হয়েছে, পাশাপাশি এমন দূর্যোগের পর বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দেয়। তাই পানি বিশুদ্ধ করণ ট্যাবলেট ও চাপকল নিরাপদে ঢেকে রাখার জন্য গ্রাম পর্যায়ে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় জরুরী ভিত্তিতে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা ডাকা হয়েছে। এ সভায় বিকাল সাড়ে ৪টায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে সরাসরি ভিডিও কনফারেন্সে মাধ্যমে সংযুক্ত হবেন প্রিন্সিপাল  সেক্রেটারি। ঘুর্নিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচীর উপ-পরিচালক আব্দুর রশীদ জানান,যে কোন ধরনের দূর্ঘটনা ও ক্ষতি এড়াতে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে মাইকিং ও প্রচারনা করছে ঘুর্নিঝর প্রস্তুতি কর্মসূচী বিভাগ। এদি?কে উপকূলীয় এলাকায় ৭ নং নৌ সতর্ক সংকেত ঘোষনা করা হয়েছে। ভিআইডব্লিইটিএ এর পরিদর্শক হুমায়ন কবির জানান,ঘুর্নিঝড় দ্রুত উপকূ?লের দি?কে এগি??য়ে আসায় ব?রিশাল নদী বন্দর থে?কে  সকল নৌযান চলাচল পরব?র্তি নি?র্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বন্ধ ঘোষনা ক?রে?ছে বিআইডব্লিউটিএ। নিরাপত্তার জন্য সকল নৌযানগুওেলাকে ছোট খাল ও অধিক নিরাপদ স্থানে নোঙ্গর করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অভ্যন্তরীন ও ঢাকা-বরিশাল রুটসহ সকল ধরনের নৌ চলাচলের উপর এ নিষেধাজ্ঞা জারী করেছে বিআইডব্লিউটিএ। পাশাপাশি বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও ফেরী চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা জারী করার কারণে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে দক্ষিনাঞ্চল। আবহাওয়া বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল হালিম জানান,গতকাল রাত ৯ টা পর্যন্ত পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ঘুর্নিঝরটি ৮১০ কিলোমিটার দক্ষিন পশ্চিমে অবস্থান করছে। ঘুর্নিঝরটি আজ সন্ধ্যায় উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এর প্রভাবে বরিশাল সহ গোটা দেশেই দমকা হাওয়া ও বৃষ্টিপাত হওয়ার সম্বাবনা রয়েছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT