পোর্টরোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র তরমুজ ও ফুট’র দখলে পোর্টরোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র তরমুজ ও ফুট’র দখলে - ajkerparibartan.com
পোর্টরোড মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র তরমুজ ও ফুট’র দখলে

3:10 pm , March 30, 2019

খান রুবেল ॥ নগরীর অন্যতম বেসরকারি মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র পোর্ট রোড। দক্ষিণাঞ্চলের সর্ববৃহৎ এই অবতরণ কেন্দ্র থেকে প্রতিদিন শত শত মন ইলিশের আমদানী এবং রফতানী হয়ে থাকে। কিন্তু সেই ইলিশ মোকাম এখন মৌসুমী ফলের দখলে। সাগর ও নদীতে জাটকা ধরা বন্ধ থাকায় ফাঁকা মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রে তরমুজ ও বাঙ্গি (ফুট) এর হাট বসেছে। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাজার হাজার পিস তরমুজ ও ফুট আমদানী এবং রফতানী হচ্ছে মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র থেকে। মৎস্য আড়ৎদাররা কিছু সময়ের জন্য মৎস্য ব্যবসার পরিবর্তনে মৌসুমী ফলের ব্যবসা করে লাখ লাখ টাকা উপার্জন করছেন। সরেজমিনে দেখাগেছে, জাটকা নিধনে নিষেধাজ্ঞার ফলে নগরীর পোর্ট রোডে কীর্তনখোলা নদীর তীর ঘেষা বেসরকারি মৎস্য অবতরণ মৎস্য শূণ্য হয়ে আছে। অবতরণ কেন্দ্রের এক পাশে অল্প কিছু ইলিশ ও অন্যান্য প্রজাতির মাছ থাকলেও বাকি বিশাল জায়গা জুড়ে তরমুজ আর বাঙ্গি’র সমারোহ। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা থেকে ট্রলার ভরে তরমুজ এবং বাঙ্গী আসছে এ মোকামে। শত শত মৎস্য শ্রমিক ট্রলারের তরমুজ পোর্ট রোডের আড়ৎ গুলোর সামনে স্তুপ করে রাখছে। কোন কোন শ্রমিক ট্রলার থেকে তরমুজ এবং বাঙ্গি সারাসরি তুলে দিচ্ছেন ট্রাকে। এ দিয়ে জীবিকা নির্বাহের চেষ্টা করছেন সহ¯্রাধিক মৎস্য শ্রমিক। আলাপকালে নগরীর পোর্ট রোডের ‘ভাই ভাই ফিস’র আড়ৎদার মো. আব্দুল কুদ্দুস জানান, জাটকা সংরক্ষণের জন্য নদী ও সাগরে জাটকা ধরা বন্ধ ঘোষনা করেছে সরকার। এর ফলে মার্চ ও এপ্রিল মাসে অভয়াশ্রমে মাছ ধরা নিষিদ্ধ’র পাশাপাশি জাটকা ইলিশ সংরক্ষণে টানা ৮ মাসের অভিযান চলছে। এর ফলে পোর্ট রোডের মৎস্য আড়ৎএ ইলিশ-আমদানী রফতানী বন্ধ থাকবে। বিশেষ করে মার্চ ও এপ্রিল দুই মাস ইলিশ শিকার পুরোপুরি বন্ধ থাকায় আড়ৎদার, পাইকার এমনকি শ্রমিকদের দিনাতিপাত করতে হয়। এজন্যই বিকল্প ব্যবসা হিসেবে দু’মাস পোর্ট রোডের মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র থাকে মৌসুমী ফলের দখলে। আব্দুল কুদ্দুস বলেন, পোর্ট রোডের মৎস্য আড়ৎএ প্রতিদিন ২০টির মত ট্রলার আসছে তরমুজ ও ফুট নিয়ে। প্রতিটি ট্রলারে কম করে হলেও ৫ হাজার করে তরমুজ থাকছে। সে অনুযায়ী প্রতিদিন গড়ে লক্ষাধিক পিস তরমুস এবং প্রায় অর্ধ লক্ষ ফুট আসছে। ভোলা, লালমোহন, চর কলমী, চর বিশ্বাস, চালিতাবুনিয়া, দশমিনা, ঘোষের হাট, বেলুচর সহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলা থেকে তরমুন এবং ফুটি পাইকারী বিক্রি করার জন্য নিয়ে আসা হচ্ছে পোর্ট রোডের মৎস্য আড়তে। অপর মৎস্য আড়তদার কামাল হোসেন বলেন, শত হিসেবে তরমুজ ও ফুট বিক্রি হয়ে থাকে। সে অনুযায়ী ছোট ও বড় সাইজের একশ পিস তরমুজের পাইকারী মূল্য সর্বনি¤œ ৫ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত। অবশ্য গত বছরের থেকে এ বছর তরমুজের মূল্য কিছুটা বেশি দাবী করে ওই ব্যবসায়ী বলেন, এ বছর বর্ষার কারনে উপকূলীয় অঞ্চলের তরমুজ নষ্ট হয়ে গেছে। যা রক্ষা পেয়েছে সেগুলো বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হচ্ছে। যে কারনে মূল্য কিছুটা বেশি। তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চল থেকে আসা এসব তরমুজ এবং ফুট পোর্ট রোড থেকে ট্রাক যোগে রফতানী হচ্ছে ঢাকা সহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায়। বিশেষ করে রাজধানী ঢাকা, নাটর, সিলেট, বগুরা ও যশোরে তরমুজের রফতানী বেশি হয়। বরিশাল থেকে প্রতিদিন ওইসব অঞ্চলে কমপক্ষে ২০টির মত ট্রাক তরমুজ ভর্তি করে নিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি ট্রাকে কমপক্ষে হলেও ৩ হাজার পিস তরমুজ এক সাথে বহন করা যায়। এদিকে পোর্ট রোডের মৎস্য শ্রমিক মনসুর আলী বলেন, এ মোকামে হাজার হাজার মন ইলিশ আসতো। যে কারনে আমরা শ্রমিকরা মাথায় ইলিশের সাজি বহন করে প্রতিদিন অনেক টাকা আয় করতে পারতাম। যা দিয়ে আমাদের সংসার ভালোভাবেই চলে যেত। কিন্তু ইলিশ শিকার বন্ধ থাকায় আমাদের আয় বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক মৎস্য শ্রমিক গ্রামে গিয়ে দিনমজুরী করছে। কেননা মৎস্য আড়ৎএ এখন মৌসুমী ফল উঠলেও তাতে তেমন আয় হচ্ছে না। প্রতিদিন সর্বোচ্চ ২ থেকে ৩শ টাকা আয় হয়। যা দিয়ে সমিতির কিস্তি, সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ সহ সংসার পরিচালনা কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পোর্ট রোডের মৎস্য পাইকারী ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. আলী আশ্রাফ বলেন, পোর্ট রোডে লাইসেন্সধারী ২৫০ জন এবং লাইসেন্স বিহিন আরো ৭৫ জন মৎস্য আড়ৎদার রয়েছেন। যার বেশিরভাগ আড়তদাররাই এখন মৌসমী ফল তরমুজ ও ফুট’র ব্যবসা করছে। এতে না পোশালেও লোকসান ঠেকাতে মৎস্য ব্যবসায়ীরা এ ব্যবসা করতে বাধ্য হচ্ছে জানিয়ে মো. আলী আশ্রাফ বলেন, সরকার শুধুমাত্র জেলেদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু একটি ইলিশের সাথে অন্তত অর্ধশত লোক জড়িত থাকে। যারা এই ইলিশ দিয়েই তাদের জীবীকা নির্বাহ করেন। কিন্তু জাটকা সংরক্ষণ কিংবা অন্যান্য অভিযানের মধ্যে ওইসব ব্যক্তিদের পুনবার্সনের কোন ব্যবস্থা না করায় মৌসুমী ফলের ব্যবসা বেছে নিতে হয় আড়ৎদারদের। তাই ইলিশের সাথে সম্পৃক্ত জেলেদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি সরকারের দৃষ্টি দেয়া উচিৎ বলেও মনে করেন এই ব্যবসায়ী।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT