দুর্ঘটনায় ছাত্রীসহ ৭ জন নিহত ও দোষীদের শাস্তির দাবীতে সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ দুর্ঘটনায় ছাত্রীসহ ৭ জন নিহত ও দোষীদের শাস্তির দাবীতে সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ - ajkerparibartan.com
দুর্ঘটনায় ছাত্রীসহ ৭ জন নিহত ও দোষীদের শাস্তির দাবীতে সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

2:49 pm , March 23, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ গড়িয়ার পাড়ে বাস-মাহেন্দ্র সংঘর্ষে শিক্ষার্থী সহ ৭ জন নিহতের প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএম কলেজ শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে, চালককে গ্রেফতারের প্রতিবাদে বরিশাল সহ দুর্পাল্লার রুটে বাস ধর্মঘট ও তিনটি অটোটেম্পু (মাহেন্দ্র) ভাংচুর করেছে বাস শ্রমিকরা। গতকাল শনিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা সোয়া ১২টা পর্যন্ত নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কে এই ঘটনা ঘটে। পরে বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এদিকে, সোয়া ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিয়ে ক্লাশে ফেরার পাশাপাশি সড়কে বাস চলাচল শুরু হয়। এর আগে শুক্রবার সকালে বরিশাল-বানারীপাড়া আঞ্চলিক মহাসড়কে বাস ও মাহেন্দ্রা মুখোমুখি সংঘর্ষে বিএম কলেজের মাষ্টার্স এর গনিত প্রথম বর্ষের ছাত্রী সহ ৭ জন নিহত হন। আহত হয় স্কুল ছাত্রী সহ ৪ জন। এই ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে নিহতের ঘটনায় বিচার সহ নিরাপদ সড়কের দাবীতে বিএম কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি নথুল্লাবাদ হোসাইনিয়া মাদরাসার সামনে পৌছে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। এর ফলে প্রথমে সেখানেই অবস্থান নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের সামনে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ করে তারা। সেখানে শিক্ষার্থীরা কালো পতাকা হাতে নিয়ে শিক্ষার্থী সহ ৭ জন নিহতের ঘটনায় দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী করেন। পাশাপাশি সড়কে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন যানবাহনের কাগজপত্র ও চালক লাইসেন্স প্রত্যক্ষ করেন।
এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বাসদ বরিশাল জেলার সদস্য সচিব ডা. মনিষা চক্রবর্তী ও তার কর্মীরা। তারাও নিরাপদ সড়ক ও সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের ঘটনায় দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী করেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থী বিএম কলেজ মাস্টার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র তানভীর আলম শিমুল বলেন, আমাদের দাবী একটাই তা হলো সড়কে জীবনের নিরাপত্তা। আর তাই নিরাপদ সড়ক এবং বিএম কলেজের মাস্টার্স এর গনিত বিভাগের শিক্ষার্থী শীলা হালদার সহ সকল নিহতের ঘটনায় ঘাতক বাস চালক ও মালিকের দ্রুত বিচার দাবী জানান শিক্ষার্থীরা।
এদিকে সড়ক অবরোধ ও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের খবর পেয়ে বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তিনি শিক্ষার্থীদের দাবী মেনে নেয়ার আশ্বাস এবং আগামী সোমবার বাস মালিক-শ্রমিক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে বৈঠকে বসার আশ্বাস দেন। শিক্ষার্থীরা মেয়রের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সড়ক অবরোধ তুলে নেন এবং ক্লাসে ফিরে যান। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, আমিও চাই দোষীরা দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি পাক। তবে সহিষ্ণু আন্দোলনের মাধ্যমে তা নিশ্চিত করতে হবে। তাছাড়া চারদিকে নির্বাচন চলছে। এই আন্দোলনে অনুপ্রবেশকারীরা ভিন্ন ইস্যু তৈরী করতে পারে। সে জন্য সহিংসতা পরিহার করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। অপরদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পূর্বে সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিক্ষোভ করেছে বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা। দুর্ঘটনায় ৭ জন নিহত হওয়ার প্রতিবাদে বাস চালক আব্দুল জলিলকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদ ও তার মুক্তি দাবীতে অভ্যন্তরিন সড়কে যানবাহন চালাচল বন্ধ করে দেয় তারা।
একই সময় শ্রমিকরা নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল সংলগ্ন অটো টেম্পু (মাহেন্দ্রা) স্ট্যান্ডে হামলা করা হয়। এ সময় তারা তিনটি মাহেন্দ্রা ভাংচুর করে। খবর পেয়ে কোতয়ালী ও এয়ারপোর্ট থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে। বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, চালকের মুক্তির দাবীতে নয়, আমাদের আন্দোলন ছিলো গ্রেপ্তারকৃত চালককে যাতে থানায় আটকে রেখে নির্যাতন না করা হয়। তাকে যাতে দ্রুত আদালতের কাছে সোপর্দ করা হয় সে জন্য শ্রমিকরা আন্দোলন করেছিলো।
তিনি বলেন, বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ গ্রেপ্তারকৃত চালককে থানা থেকে দ্রুত আদালতে সোপর্দ করার বিষয়ে আমাদের আশ্বস্থ করেছে। এ কারনে আমরা আমাদের আন্দোলন ও অবরোধ প্রত্যাহার করে নিয়েছি। ফলে বেলা সোয়া ১২টার পর থেকে অভ্যন্তরিন সহ দুপাল্লার রুটে বাস চলাচল শুরু হয়েছে। এয়ারপোর্ট থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) আব্দুর রহমান মুকুল জানিয়েছেন, শ্রমিকদের সমস্যা আগেই সমাধান হয়েছিলো। কিন্তু শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ ও তাদের বিক্ষোভের কারনে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিলো। পরে সি?টি মেয়র ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ তুলে নেয়। তারা ক্যাম্পাসে ফিরে গেছে। বর্তমানে পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রনে রয়েছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT