আবারো বন্ধের পথে শেবাচিম’র ৫শ’ শয্যার বর্ধিত ভবনের নির্মাণ কাজ আবারো বন্ধের পথে শেবাচিম’র ৫শ’ শয্যার বর্ধিত ভবনের নির্মাণ কাজ - ajkerparibartan.com
আবারো বন্ধের পথে শেবাচিম’র ৫শ’ শয্যার বর্ধিত ভবনের নির্মাণ কাজ

3:19 pm , March 6, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বিরুপ পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারছে না বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের নির্মানাধিন ৫ তলা বিশিষ্ট বর্ধিত ভবনটি। শুরু থেকে গত প্রায় ১১ বছরে নানা জটিলতায় একাধিকবার আটকে থাকা পাঁচশ শয্যা’র এ ভবনের নির্মান কাজ আবারো বন্ধের পথে রয়েছে। সম্প্রতি নতুন ভবনে চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করতে নির্মান কাজে তড়িৎগতি ফিরলেও তাতে বাধা হয়ে দাড়িয়েছে একটি মামলা। ফলে নতুন ভবনে রোগীর চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম শুরুর বিষয়টি আবারো অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এজন্য গণপূর্ত বিভাগকেই দায়ি করছেন শেবাচিম হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। সূত্রমতে, দক্ষিণাঞ্চল-পশ্চিমাঞ্চলবাসির চিকিৎসা সেবার সর্বশেষ নির্ভরযোগ্য প্রতিষ্ঠান শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বিভিন্ন সময়ে হাসপাতালটিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে। তিনশ’ শয্যা থেকে কয়েক দফায় উন্নিত করা হয় পাঁচশ শয্যায়। সর্বশেষ কাগজে-কলমে এক হাজার শয্যায় উন্নিত হয়েছে হাসপাতালটির নতুন এ ভবন। এদিকে চিকিৎসা ব্যবস্থার পাশাপাশি বাড়তে থাকতে রোগীর সংখ্যাও। বিগত কয়েক বছর ধরেই এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে তিন থেকে চারশ রোগী ভর্তি হচ্ছে। সে অনুযায়ী এ হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে দেড় থেকে পৌনে দুই হাজার রোগী ভর্তি থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। জায়গা সংকুলান না হওয়ায় এসব রোগীদের ওয়ার্ডের বাইরে বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। অপরদিকে রোগীর চাপ সামাল দিতে ২০০৮ সালে হাসপাতালের মূল ভবনের পূর্ব পাশে ১০ তলা ভিত্তিতে সাততলা বিশিষ্ট আরো একটি ভবন নির্মান প্রকল্প গ্রহন করেন তৎকালিন সরকার। যে প্রকল্পের নাম দেয়া হয় মর্ডানাইজেশন এন্ড এক্সটেনশন ভবন। একই বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ৩০ শতাংশ জমির ওপর ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫শ’ শয্যার ৭ তলা ভবন নির্মান কাজ শুরু হয়। গণপূর্ত বিভাগের তত্ত্বাবধায়নে ঢাকার ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সিকদার আজাদ কনস্ট্রাকশন ও জেভি মার্কেন্টাইল কর্পোরেশন দুই বছরের চুক্তিতে ভবন নির্মান কাজ শুরু করে। চুক্তি অনুযায়ী ২০১০ সালের মার্চ মাসে পূর্ণাঙ্গ বর্ধিত ভবন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নিকট হস্তান্তরের কথা ছিলো। কিন্তু কাজ শুরুর ছয় মাস না যেতেই দুই তলা কর্তন করে ২১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ তলা ভবন নির্মানের সংশোধিত কার্যাদেশ দেয় গণপূর্ত বিভাগ। নতুন বর্ধিত ভবনটির নীচতলায় বহিঃর্বিভাগ, দ্বিতীয় তলায় প্রশাসনিক ব্লক ও রোগীদের জেনারেল ওয়ার্ড, তৃতীয় তলায় পোষ্ট অপারেটিভ ও কেবিন, চতুর্থ এবং পঞ্চম তলায় রাখা হয় ওটি ব্লক। ভবনটি ওঠা নামার জন্য চারটি লিফট ও পৃথক পাঁচটি সিঁড়ির ব্যবস্থাও রয়েছে নকশায়। এদিকে কাজে ধিরগতি ও গণপূর্ত বিভাগের তৎকালিন কর্মকর্তাদের কমিশন বানিজ্যের কারনে ধীরগতি চলে আসে ভবন নির্মান কাজে। এমনকি নির্মান সামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির অজুহাতে ৬০ ভাগ কাজ সম্পন্ন না হতেই নির্মান কাজ বন্ধ করে দেয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। দফায় দফায় চিঠি পাওয়ার পরেও কাজ শেষ না করায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা করার পাশাপাশি ২০১১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত চুক্তির মেয়াদ বাড়িয়ে দেয় গণপূর্ত বিভাগ। তাতেও কাজ সম্পন্ন করতে না পারায় ২০১২ সালের মাঝামাঝি সময় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কাজ থেকে অব্যাহতি ও জামানত বাজেয়াপ্ত করা হয়। শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গিয়ে গড়ায়। ঠিকাদার বাতিল আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে রীট করা হলে বর্ধিত ভবন নির্মান কাজ পুরোপুরি ভাবেই স্থবির হয়ে পড়ে। এদিকে সর্বশেষ আইনী জটিলতা কাটিয়ে ২০১৪ সালের নতুন করে ভবনের অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করতে দরপত্র আহ্বান করে গণপূর্ত বিভাগ। এজন্য ব্যয় নির্ধারন করা হয় ১৯ কোটি টাকা। কিন্তু নতুন ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেয়ার আগেই উচ্চ আদালতে আরো একটি রীটের কারনে সেই দরপত্রও বাতিল করা হয়। শুরু থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত পর পর ৪টি রীটের কারনে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বন্ধ থাকে শেবাচিম হাসপাতালের মর্ডানাইজেশন অব এক্সটেনশন ভবনের নির্মান কাজ। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটি। তারা দফায় দফায় মিটিং, মানববন্ধন সহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে। সর্বশেষ বর্তমান সরকারের গত মেয়াদের স্বাস্থ্য মন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও শেবাচিম হাসপাতালের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনি কমিটির সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ-এমপি’র হস্তক্ষেপে ভবনের অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করতে পুনরায় দরপত্র আহ্বান করে গণপূর্ত বিভাগ। চতুর্থ দফায় টেন্ডারে ১০ পার্সেন্ট লেসে ৯ কোটি ১৩ লাখ টাকায় শেবাচিমের বর্ধিত ভবনের অবশিষ্ট কাজের ঠিকাদারী পায় মেসার্স কহিনুর কনস্ট্রাকশন। চুক্তি অনুযায়ী ২০১৮ সালের এপ্রিলে ভবনটি হস্তান্তরের কথা ছিলো। কিন্তু তা না পারায় মেয়াদ বৃদ্ধি একই বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়িয়ে নেয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কিন্তুদ্বিতীয় দফায় বর্ধিত মেয়াদ শেষ হলেও এখনো চলমান রয়েছে ভবন নির্মান কাজ। তার মধ্যে নতুন করে দায়ের হওয়া আরো একটি রীট নতুন ভবনে নির্মানে রোগীর চিকিৎসা সেবা পুনরায় অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিয়েছে। গণপূর্ত বিভাগ মেডিকেল উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী জুবায়েদ বিন জসিম বলেন, ভবন নির্মান, টাইলস, দরজা-জানালা ও রং সহ বিভিল ওয়ার্ক শেষ হয়েছে। এখন গ্যাস (অক্সিজেন), লিফট ও ইলেকট্রিক এর কাজ বাকি রয়েছে। সম্প্রতি এ কাজ সম্পন্ন করতে দরপত্র কার্যক্রমও শেষ করা হয়। ৩ কোটি টাকার এই দরপত্রের কার্যাদেশ পায় ¯িœগ্ধা স্পেক্ট্রা নামক একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু গ্যাসের টেন্ডার পদ্ধতিকে চ্যালেঞ্চ করে একজন ঠিকাদার উচ্চ আদালতে মামলা করেছে। যে কারনে পূর্বের ওই টেন্ডারটি বাতিল করা হয়েছে। মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে দরপত্র আহ্বান করা সম্ভব হচ্ছে না। এদিকে নতুন ভবন নিয়ে জটিলতার জন্য গণপূর্ত বিভাগকে দায়ী করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন বলেন, সম্প্রতি হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় নতুন ভবনের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়। এসময় ভবনটির কাজ সম্পন্ন করতে গণপূর্ত বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়। কিন্তু তারা ৩ কোটি টাকার নতুন প্রকল্পের অজুহাত দেখিয়ে কাজ বন্ধ করে রেখেছে। যার কারনে দক্ষিণাঞ্চলের রোগীদের ভোগান্তি সহসাই শেষ হচ্ছে না। তিনি বলেন, গত ডিসেম্বরে নতুন ওই ভবনটি আমাদের কাছে হস্তান্তরের কথা ছিলো। কিন্তু তা হয়নি। এখন যে পরিস্থিতি তাতে আগামী জুন মাসের মধ্যেও ভবনটির কাজ সম্পন্ন করতে পারে কিনা তা নিয়েও আমরা সন্দিহান। বিষয়টি নিয়ে গণপূর্ত বিভাগের কোন অগ্রগতি না থাকাতে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন হাসপাতাল পরিচালক।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT