3:31 pm , March 5, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালÑফরিদপুরÑঢাকা জাতীয় মহাসড়কের বরিশাল প্রান্তের প্রায় ৬০ কিলোমিটার অংশের সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করেছে সড়ক অধিদপ্তর। ১২১ কোটি টাকার সম্পূর্ণ দেশীয় তহবিলে বরিশাল সড়ক বিভাগ দেশের ৮ নম্বর এ জাতীয় মহাসড়কটির সংস্কার ও উন্নয়ন কাজ সম্প্রতি শেষ করেছে। প্রকল্পের আওতায় মহাসড়কটির ভুরঘাটা প্রান্ত থেকে বরিশাল হয়ে লেবুখালীর পায়রা সেতু পর্যন্ত ৬০ কিলোমিটারের অংশে ১৮ ফুট থেকে ২৪ ফুটে উন্নীত করা ছাড়াও পুরো রাস্তাটির ‘ওভার-লে’ করা হয়েছে। এছাড়াও ঐ মহাসড়কের ‘মেজর জলিল সেত’ু ও ‘বীর শ্রেষ্ঠ মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর’ সেতুর প্রায় ১২ কিলোমিটার সংযোগ সড়কের ওপর ‘ডিবিএসটি’র আস্তরন করে রাস্তাটিকে আরো টেকসই ও স্থায়ীত্ব বৃদ্ধি করা হয়েছে। এর ফলে দক্ষিনাঞ্চলের সাথে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও বৃহত্তর ফরিদপুর ও উত্তরবঙ্গের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটছে। প্রকল্পের আওতায় মহাসড়কটির দুটি কালভার্ট নির্মান কাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে। এছাড়াও জাপান উন্নয়ন তহবিল ‘জাইকা’র আর্থিক সহায়তায় বরিশালÑফরিদপুর জাতীয় মহাসড়কে বেশ কিছু পুরনো সেতুর স্থলে ৪ লেনের নতুন সেতুর নির্মান কাজও আগামী ৩০ জুনের মধ্যে সম্পন্ন হবে বলে সড়ক অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। দেশীয় তহবিলেই বরিশালÑঝালকাঠীÑপিরোজপুরÑখুলনা মহাসড়কের বরিশাল ঝালকাঠী অংশের কালিজিরা সেতু পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার রাস্তা এবং বরিশালÑগৌরনদী-কোটালীপাড়া-গোপালগঞ্জÑখুলনা মহাসড়কের আগৈলঝাড়া বাইপাস সহ এর সংযোগ সড়কসমুহ প্রশস্ত এবং মান উন্নয়নের কাজও শেষ হয়েছে সম্প্রতি। প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে বরিশাল সড়ক বিভাগ এসব সড়কের সংস্কার কাজ সম্পন্ন করেছে। ফলে সমগ্র খুলনা বিভাগ ছাড়াও মংলা এবং বেনাপোল ও ভোমরা বন্দরের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা যথেষ্ট নির্বিঘœ হয়েছে। ১৯৬০ থেকে ৬৫ সালের মধ্যে নির্মিত বরিশালÑফরিদপুরÑঢাকা মহাসড়কটি সময়ের বিবর্তনে অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ অবস্থায় পৌছে। ৫ টন বহন ক্ষমতায় নির্মিত মহাসড়কটির ওপর এখন ৪০ টন পণ্যবাহী যানবাহনও চলছে। এর সাথে ১৯৮৮ ও ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বণ্যায়ও মহাসড়কটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। ২০১৭-এর নজিরবিহীন প্রবল বর্ষনে সারা দেশের সাথে দক্ষিণাঞ্চলের সড়ক যোগাযোগ রক্ষাকারী এ জাতীয় মহাসড়কটির বেশীরভাগ অংশে অত্যন্ত নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। ফলে মহাসড়কটির বরিশাল অংশের সম্প্রসারন ও সংস্কার কাজে বেশ কিছু পরিবর্তন আনে বরিশাল সড়ক বিভাগ সহ উর্ধতন প্রকৌশলীগন। সড়কটির সম্প্রসারন কার্যক্রম সহ ওভারলে কার্পেটিং কাজেরও নকশা পরিবর্তন করতে হয়। ফলে মহাসড়কটির বেশী ক্ষতিগ্রস্থ অংশের ওভারলে’র পুরুত্ব বৃদ্ধি সহ ম্যকাডম এবং বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রমে কিছু পরিবর্তন আনতে গিয়ে ১০৪কোটি টাকার প্রকল্প ব্যায় ১২১কোটিতে উন্নীত হয়। সড়ক ও সেতু মন্ত্রনালয় তাদের দায়িত্ব পরিধীর মধ্যে এ ব্যায় বৃদ্ধি সহ সংশোধীত প্রকল্পটি অনুমোদনের পরে এর উন্নয়ন কাজ সম্প্রতি শেষ হয়েছে।
গত বছরের শুরুতে ১০৪ কোটি টাকার দেশীয় তহবিলে দক্ষিনাঞ্চলের সাথে সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ রক্ষাকারী বরিশালÑফরিদপুরÑঢাকা জাতীয় মহাসড়কের বরিশালÑভুরঘাটা ও বরিশালÑলেবুখালী অংশের ৬০কিলোমিটার সড়কের সম্প্রসারন ও উন্নয়নে প্রকল্পটির কাজ শুরু হয়। ৪টি প্যকেজে নির্মান প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যাদেশ দেয়ার পরে উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ শুরু হলেও মাঝ পথে এসে প্রবল বর্ষনে বরিশালÑভ’রঘাটা অংশের ৪৮ কিলোমিটার মহাসড়কের মধ্যে প্রায় ১৮কিলোমিটার অংশই মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
সম্প্রতি এমহাসড়কটির সংস্কার ও উন্নয়ন সহ সম্প্রসারনের কাজ সমাপ্তির ফলে দক্ষিনাঞ্চলের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা যথেষ্ট নির্বিঘœ হয়েছে। এর ফলে পায়রা সমুদ্র বন্দর ও কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্রের সাথেও সড়ক যোগাযোগে আরো সুগম হবে বলে জানিয়েছেন বরিশাল সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান। চুক্তি অনুযায়ী আগামী তিন বছর এ মহাসড়কের মেরামত ও রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্ব থাকবে নির্মান প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে।
তবে এখনো বরিশালÑফরিদপুর জাতীয় মহাসড়কটি চার লেনে উন্নীতকরন প্রকল্পটি আলোর মুখ দেখেনি। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক-এডিবি’র আর্থিক সহায়তায় এলক্ষে ইতোমধ্যে সম্ভাব্যতা সমিক্ষা ও বিস্তারিত নকশা প্রনয়ন সম্পন্ন হলেও কোন দাতা মেলেনি বলে জানা গেছে। এডিবি কুয়াকাটা ও পায়রা সমুদ্র বন্দর সহ বরিশাল বিভাগীয় সদর হয়ে ফরিদপুর পর্যন্ত পরিপূর্ণ নকশা ও সম্ভাব্যতা সমিক্ষা সম্পন্ন করেছে।
তবে প্রকল্পটি বাস্তায়নের লক্ষে প্রয়োজনীয় জমি হুকুম দখলে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাব সম্প্রতি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি-একনেক অনুমোদন করেছে। আগামী অর্থ বছরেই বরিশালÑফরিদপুর মহাসড়ক ৪ লেনে উন্নীতকরন প্রকল্পের জন্য জমি হুকুম দখল প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবার আশা করছেন কতৃপক্ষ।