3:38 pm , March 4, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নগরীর রূপতলীতে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষন ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের মাঠ দখল করে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের অফিস কমপ্লেক্স নির্মান চেস্টার প্রতিবাদে দিনভর বিক্ষোভ করেছে সুবিধা বঞ্চিত, নিপীড়িত শিশু-কিশোরীরা। একমাত্র খেলার মাঠটি রক্ষায় না খেয়ে বিক্ষোভের সময় অঝোঁড়ে কেদেছে এসব শিশু-কিশোরীরা। সোমবার (০৪ মার্চ) সকাল থেকে কেন্দ্রের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে ব্যাট-বল, ফুটবল সহ বিভিন্ন ক্রীড়া সামগ্রী সহ বিকেল পর্যন্ত বিক্ষোভ করে তারা। জেলা সমাজ সেবা কমপ্লেক্স নির্মানের জন্য আনা নির্মান সামগ্রী সরিয়ে না নেয়া পর্যন্ত খাবার গ্রহন না করে তারা কেন্দ্রের ফটকের সামনে অবস্থান নেওয়ার কথা বলেন। খেলার মাঠ রক্ষার এই দাবী প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানাতে চায় তারা। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে সমাজ সেবা বিভাগের উপ-পরিচালক শাহাপাড় পারভীন ঘটনাস্থলে গিয়ে সেখানে অফিস কমপ্লেক্স নির্মান না করার প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পর শিশু-কিশোরীরা। বিক্ষোভ প্রত্যাহার করে খাবার গ্রহন করেন। কেন্দ্রের নিবাসি নগরীর এ ওয়াহেদ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেনীর ছাত্রী তানজিলা আক্তার বলেন, কেন্দ্রের মধ্যে এতবড় অফিস ভবন নির্মান করা হলে আমাদের খেলাধুলা সহ সুযোগ-সুবিধা বন্ধ হয়ে যাবে। নিরাপত্তা ঝুকিতে থাকতে হবে আমাদের। পুনর্বাসন কেন্দ্রের নিবাসি ও এ ওয়াহেদ বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেনীর ছাত্রী নিকিতা আক্তার বলেন, ইতিপূর্বে আমাদের একটি ভাড়া ভবনে থাকতে হয়েছে। সেখানে স্কুলে যাওয়া ছাড়াও বাকি সময়টাতে বন্ধি জীবন কাটাতে হয়েছে। সেখান থেকে আমাদের এই পুনর্বাসন কেন্দ্রে স্থানান্তর করায় এখানে আমরা খেলার মাঠ পেয়েছি। কিন্তু এখন সেই মাঠটিতেও এখন ভবন নির্মানের পায়তারা করা হচ্ছে। আমরা আমাদের একমাত্র খেলার মাঠটিতে কোন ভবন নির্মান করতে দেব না। এজন্য তারা সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষন ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের উপ-প্রকল্প পরিচালক শুভংকর ভট্টাচার্য জানান, ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষন ও পুনর্বাসন প্রকল্পের উদ্ধোধন করেন। ২০১৬ সালে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ খাতের আওতায় সরকারী কর্মসূচীর আদলে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষন ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের কার্যক্রম চলছে।
বরিশালে এই কার্যক্রমের আওতায় সোমবার পর্যন্ত ৯৪ জন সুবিধা বঞ্চিত ও আইনী সাহায্যপ্রার্থী সহ ১৪ ক্যাটাগরির শিশু-কিশোরীর বসবাস। এর আগে একটি ভাড়া বাড়িতে তাদের কার্যক্রম চলতো। তারা সেখানে বন্দি জীবন কাটাতেন। ২০১৭ সালের ১০ নভেম্বর রূপাতলীতে সমাজ সেবা বিভাগের অব্যবহৃত স্থাপনা ও জমিতে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষন ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। সেখানে খেলার মাঠ সহ সুপরিসর জায়গা রয়েছে। তবে এখানে বালিকাদের (মেয়ে) একটি ডরমেটরির ৫টি কক্ষে থাকার ব্যবস্থা হলেও ৯২ জন বালক (ছেলে) শিশু-কিশোরদের এখনো ভাড়া ভবনেই থাকতে হচ্ছে। সম্প্রতি ওই স্থানে জেলা সমাজসেবা বিভাগের বহুতল অফিস কমপ্লেক্স নির্মানের টেন্ডার হয়। সোমবার সকালে ঠিকাদারের লোকজন মালামাল সহ কমপ্লেক্স নির্মান করতে আসলে শিশু-কিশোরীরা তাদের খেলার মাঠ এবং খোলা মেলা জায়গা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশংকায় কেন্দ্রের প্রধান ফটকে অবস্থান নিয়ে শেখ রাসেল এর ছবি এবং বিভিন্ন দাবী সম্বলিত প্লাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। এসময় শিশুদের অঝোড়ে কাঁদতে দেখা যায়। সমাজ সেবা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপ-পরিচালক শাহাপাড় পারভীন বলেন, রূপাতলীতে সমাজ সেবা বিভাগের জায়গায় জেলা অফিস কমপ্লেক্স নির্মানের টেন্ডার হয়েছে। ভবনের প্লান সহ সাইট প্লান পাশ হয়েছে। ভবন নির্মানের জন্য ঠিকাদার মালপত্র এনেছে। এতে শিশুরা তাদের খেলার মাঠ হাতছাড়া হয়ে যাওয়ার আশংকা করছে। তিনি বলেন, শিশু-কিশোরীরা দুপুরের খাবার গ্রহন না করে বিক্ষোভ করছিলো। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের বুঝিয়ে শান্ত করে খাবার খাওয়ানের ব্যবস্থা করেছি। বিষয়টি নিয়ে আমরা জেলা প্রশাসকের কাছে যাব। এ নিয়ে আমরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিব। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ নিশ্চয়ই শিশুদের দাবী এবং কমপ্লেক্স নির্মানের বিষয়টি বিবেচনা করবেন।