নগর ভবনে ফিরেছে শৃঙ্খলা ও গতি নগর ভবনে ফিরেছে শৃঙ্খলা ও গতি - ajkerparibartan.com
নগর ভবনে ফিরেছে শৃঙ্খলা ও গতি

3:00 pm , February 23, 2019

মর্তুজা জুয়েল \ শৃঙ্খলা ও গতি ফিরে এসেছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের কর্মকান্ডে। দীর্ঘদিন অচলাবস্থা, শ্রমিক কর্মচারী অসন্তোষ, ঘূষ দূর্নীতি আর অনিয়ম বন্ধ হয়ে সাম্প্রতিক সময়ে স্বচ্ছতার সঙ্গে চলছে নগর ভবনের দাপ্তরিক কর্মকান্ড। ফলে এর প্রভাব পড়েছে গোটা নগরী জুরে। ভবিষ্যতে পরিকল্পিত নগরী গরে তোলার মাধ্যমে নগরীর চলমান সকল সমস্যার স্থায়ী সমাধানে হাতে নেয়া হয়েছে মাষ্টার প্লান পরিকল্পনা। এ পরিকল্পনা অনুযায়ী চলবে আগামীর স্থায়ী উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড। এজন্য নগরবাসীর নিকট কিছুটা সময় চেয়েছেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। সরেজমিনেসিটি কর্পোরেশনে গিয়ে দেখা গেছে দাপ্তরিক সময়ে সকল কমকর্তা কর্মচারী যে যার ডেস্কে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন। প্রতিটি টেবিলেই উপস্থিত রয়েছেন নির্দিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারী। সেবা গ্রাহকরা আসলে তাৎক্ষনিক তাদের সমস্যা সমাধান করা হচ্ছে। উপকারভোগীরা কাজে সন্তুষ্ট হয়ে কাউকে বখশিস দিতে চাইলেও কেউ তা গ্রহন করছেন না। নগরীর ০৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সুমন জানান,তিনি হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধ করতে এসেছেন । ২০ মিনিটের মধ্যে তার কাজ হয়ে গেছে। পূর্বে হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে এলে ১/২ ঘন্টা অপেক্ষা করতে হতো। এরপর বার বার ফোন করে নির্দিষ্ট কর্মকর্তাকে অফিসে আনতে হতো। কখনো তাদের যথাসময়ে অফিসে পাওয়া যেত না । তিনি জানান, দুপুরের পর পরই নগর ভবনের কর্মকর্তা -কর্মচারীদের কক্ষ ফাঁকা থাকতো। সেখানে দলীয় লোকজন আর বহিরাগতরা আড্ডা দিয়ে সময় পার করতেন। এখন সে পরিবেশ নেই। নগর ভবনে প্রবেশ করলেই বোঝা যায় এটি একটি জনগুরুত্বপূর্ন এবং সেবা প্রদানকারী দপ্তর। একইভাবে মেডিকেল এলাকার বাসিন্দা ইলিয়াস জানান,প্রতিদিন সন্ধ্যার কিছুক্ষন পরেই পরিচ্ছন্ন কর্মীরা সড়ক ঝাড়– দিয়ে যায়। ফলে কোথাও এখন ময়লা আবর্জনার স্তুপ নেই । এ কারনে মশার উৎপাতও অনেকটা কমে গেছে। কিন্তু কিছুদিন পূর্বেও এমন চিত্র ছিল না বলে জানান তিনি। সুধূমাত্র সদর রোড সহ কয়েকটি সড়ক ঝাড়– দেয়া হতো। এখন প্রতিটি অলি গলিতে সন্ধ্যার পরেই পৌছে যাচ্ছে নগর ভবনের পরিচ্ছন্ন কর্মিরা। নগরভবন সূত্রে জানাগেছে, নগরবাসীর দৈনন্দিন সেবা প্রদানের জন্য প্রথমেই দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের অপ তৎপরতা বন্ধ করেছেন সিটি মেয়র। অন্যায়ের সাথে কোন ধরনের আপোষ না করে একের পর এক দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তাকে শাস্তির আওতায় এনেছেন। ফলে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ দায়িত্ব গ্রহনের পরই নগর ভবনে গতীশীলতা তৈরী হয়। নগর ভবনে কাজের স্বচ্ছতা তৈরীতে অডিটের মাধ্যমে একের পর এক দূর্নীতি ও অনিয়মের বিষয় উঠে আসে। ঐ সকল বিষয়গুলো মাথায় রেখে সামনে যাতে আর দূর্নীতি না হয় এজন্য তাৎক্ষনিক পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়েছে। নগরীর সমস্যা নিজে পর্যবেক্ষন করতে পূর্ব ঘোষনা ছাড়াই গভীর রাতে সরেজমিনে পরিদর্শন করে সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা করছেন মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। এসময় কোন নেতা কর্মিদের বহর কিংবা মিডিয়া কর্মিদের সাথে না নিয়ে নিজেই সরেজমিনে পরিদর্শন করে প্রকৃত সমস্য উদঘাটন করেন। ড্রেনেজ ব্যবস্থা সচল রাখতে বর্ষা মৌসুম আসার কয়েক মাস পূর্বে থেকেই নিজে উপস্থিত থেকে ড্রেনেজ ব্যবস্থা তদারকি করছেন। এর ফলে অনেকটা স্বস্তির নিঃস্বাস ফেলতে শুরু করেছে নগরবাসী।
একাধিক কর্মকর্তা জানান, ৩৫০ কোটি টাকার দায় মাথায় নিয়ে দায়িত্বভার গ্রহন করার পরেও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ভাতা দেয়ার মাধ্যমে তাদেরকে নগরবাসীর সেবায় সার্বক্ষনিক নিয়োজিত রেখেছেন। পাশাপাশি ভবিষ্যতের জন্য মাষ্টার প্লান পরিকল্পানা গ্রহন করা হয়েছে।৪৬টি খাল রক্ষা, পরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ,নগর ভবনের কার্য্যালয় সম্প্রসারন,পানি সরবরাহ ব্যবস্থাসহ অন্যান্য বিষয় দিয়ে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। এদিকে মেয়রের দূর্নীতি বন্ধের অভিযানে প্রথম ৪ মাসেই অনেক অনিয়ম ও দূর্নীতি বন্ধ হয়েছে। ঔ সকল দূর্নীতিরি টাকা পূর্বে কর্মকর্তা ও মেয়রের ঘনিষ্ঠজনদের পকেটে যেত। এখন তা জমা হচ্ছে নগর ভবনের কোষাগারে। ফলে এ সকল টাকা নগর উন্নয়নে ব্যয় করে পর্যায়ক্রমে নগর ভবনকে লোকসান থেকে বের করে আনা সম্ভব হবে। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের ভুয়া কর্মচারীর নামে বিপুল অঙ্কের অর্থ লোপাট বন্ধ হওয়ায় স্টাফদের বেতন দেয়ার পরও বিসিসির রাজস্ব আয় দিয়েই উন্নয়ন খাতে অর্থ ব্যয়ের সুযোগ তৈরি হয়েছে এখন। পূর্ববর্তী মেয়রগণ অতিরিক্ত লোকবলের কারণে বিসিসিকে লোকসানি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখিয়ে আসছিলেন নতুন মেয়র দায়িত্ব নেয়ার পর দুর্নীতির এ বিরাট ফাঁক বন্ধ করা হয়েছে। ফলে গত ৩ মাসেই সব বকেয়া পরিশোধের পর বিসিসির কোষাগারে জমা হয়েছে প্রায় ৭ কোটি টাকা। নগর ভবনের হিসাব বিভাগ সূত্রে পাওয়া গেছে এ তথ্য। নতুন মেয়র হিসেবে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর দায়িত্ব গ্রহণের সময়ও ৪ মাসের বেতন-ভাতা বকেয়া ছিল । তিনি দায়িত্ব নিয়ে সকলকে ব্যাংক এ্যাকাউন্ট করার নির্দেশ দেন। স্বচ্ছতার সাথে আগের নিয়ম বন্ধ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নামে আলাদা ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করে বেতন-ভাতা পরিশোধের নির্দেশ দেন। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বেতন যাওয়ার পর প্রায় এক হাজার অস্থায়ী ভুয়া কর্মচারীর সন্ধান মেলে। অথচ প্রতি মাসে ওই ভুয়া এক হাজার কর্মচারীর নামে ৭০-৮০ লাখ টাকা পরিশোধ দেখানো হতো। বছরে এর পরিমাণ সাড়ে ৮ কোটি টাকা। পূর্বে এ পর্যন্ত এই খাতে লোপাট অর্থের পরিমাণ কয়েকশ’ কোটি টাকা। হিসাব বিভাগের অপর এক কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান মেয়র দায়িত্ব নেয়ার আগে হিসাব বিভাগ থেকে প্রায় ২৬শ’ অস্থায়ী কর্মচারীর নামে বেতন হলেও এখন ১ হাজার ৫২৩ জনে নেমে আসে। আগে এ খাতে প্রায় ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয় হলেও এখন তা কমে দেড় কোটির কিছু বেশিতে দাঁড়িয়েছে। যানবাহনের জ্বালানি খাতেও হয়েছে সাগর চুরি। গত বছর ২৩ অক্টোবর দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই নগর ভবনের গাড়ি ব্যবহার করছেন না নতুন মেয়র। তিনি তার ব্যাক্তিগত গারি ব্যাবহার করছেন। বেতন-ভাতাও নিচ্ছেন না তিনি। অথচ নতুন মেয়রের নামে জ্বালানি বরাদ্দের বিষয়টি কানে আসে তার। এর কিছুদিন পরই গাড়ির তেল চুরি করে বিক্রির সময় হাতে-নাতে ধরা পড়েন একজন চালক। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করার পর এ খাতেও নজর দেন তিনি। গত দু’মাস ধরে জ্বালানি তেল খাতে নগর ভবনের ব্যয় হচ্ছে মাসে সাড়ে ৪ থেকে পৌনে ৫ লাখ টাকা। অথচ এ খাতে আগে মাসে ১৪ থেকে ১৫ লাখ টাকা ব্যয় দেখানো হতো।ট্রেড লাইসেন্স না করেই দীর্ঘ দিন ধরে ব্যবসা করছেন- এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৬ হাজারের বেশি। মাসোয়ারার বিনিময়ে তাদের ব্যবসার সুযোগ দেয়া হচ্ছিল। এ খাতে বছরে লোকসানের পরিমাণ প্রায় ৫ কোটি টাকা। হোল্ডিং ট্যাক্স বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে বরিশাল নগরীতে ৫০ হাজার ৩৫০টি হোল্ডিং রয়েছে। সরকারি হোল্ডিংয়ের সংখ্যা ৬৬২। বছরে এসব হোল্ডিং থেকে গড়ে প্রায় ১৭ কোটি টাকা ট্যাক্স আদায়ের কথা। হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণেও দুর্নীতি ধরা পড়েছে। চুরি, ঘুষ, তদবির এবং সুপারিশের কারণে ট্যাক্স ফাঁকি ধরা পড়েছে। বছরে ট্যাক্স ফাঁকির পরিমাণ ৮-১০ কোটি টাকা। এসকল অনিয়ম বন্ধের পরে এখন নগর ভবন ৯০ ভাগ ঘুষ ও দূর্নিতিমুক্ত । এসকল বিষয়ে বৃস্পতিবার সিটি কর্পোরেশনের সভাকক্ষে আয়োজিত তথ্য বাতায়নের উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাদ সাদিব আবদুল্লাহ বলেন, পূর্বের প্রতিটি বিষয়ে বিভিন্ন অনিয়ম ধরা পড়ছে। ফলে যেখানেই হাত দিচ্ছি সেখানেই সংশোধনের প্রয়োজন হচ্ছে । একারনে বিভিন্ন বিষেয়ে একটু সময় লাগছে ।এজন্য নগরবাসীকে আমাকে কিছুটা সময় দিকে হবে। নগরবাসী অঅমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে তা পালনে অঅমি প্রতিশ্রæতিবদ্ধ।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT