ধ্বসে পড়ার শংকা নিয়ে দাড়িয়ে আছে নগরীর ঝুঁকিপূর্ন ৩৩ ভবন ধ্বসে পড়ার শংকা নিয়ে দাড়িয়ে আছে নগরীর ঝুঁকিপূর্ন ৩৩ ভবন - ajkerparibartan.com
ধ্বসে পড়ার শংকা নিয়ে দাড়িয়ে আছে নগরীর ঝুঁকিপূর্ন ৩৩ ভবন

3:29 pm , January 18, 2019

খান রুবেল ॥ প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা ভূমিকম্পে ধ্বসে পড়ার ঝুঁকি নিয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে নগরীর ৩৩টি ঝুঁকিপূর্ন ভবন। ২০১৩ এবং ২০১৫ সালে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ বসবাস অনুপযোগী ঝুঁকিপূর্ন হিসেবে চিহ্নিত করেছিলো ৩৪টি ভবন। এর মধ্যে একটি স্বেচ্ছায় ভেঙে ফেলেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু দফায় দফায় নোটিশ দেয়ার পরেও উচ্ছেদ কিংবা ভেঙে ফেলা হয়নি বাকি ৩৩টি ভবন। বরং নগর কর্তৃপক্ষের নিবরতার সুযোগে ঝুঁকিপূর্ন হিসেবে চিহ্নিত করে ভবন গুলোতে লাগিয়ে দেয়া সাইন বোর্ড খুলে ফেলেছে সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি বাহির থেকে সংস্কারকরে ঝুকিপূর্ণ তার মধ্যেই ঝুঁকি নিয়েই চলছে মানুষের বসবাস সহ দৈনন্দিন কার্যক্রম। তাই ভবন ধ্বসে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আগেই এ বিষয়ে প্রয়োজনিয় ব্যবস্থা গ্রহনে নগর পিতা সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ’র দ্রুত পদক্ষেপের দাবী জানিয়েছেন সচেতন মহল। বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালে সর্বপ্রথম নগরীর ঝুঁকিপূর্ন ভবনের তালিকা তৈরী করে নগর কর্তৃপক্ষ। এরপর সর্বশেষ ২০১৫ সালে ওই তালিকার হালনাগাদ হয়। নগর কর্তৃপক্ষ এবং বুয়েট এর পরীক্ষা নিরীক্ষার প্রতিবেদন অনুযায়ী নগরীর ৩৪টি ভবন বসবাস অনুপযোগী ঝুঁকিপূর্ন হিসেবে চিহ্নিত হয়। প্রকৌশল বিভাগের দেয়া তথ্য অনুযায়ী নিয়ম না মেনে ভবন নির্মান, দীর্ঘ দিনের পূরানো ভবনে ফাটল, একের অধিক তলা ভবন জরাজীর্ন অবস্থায় থাকা, হেলে পড়া, ফাটল, পরিত্যক্ত সহ নানা কারনে ভবনগুলো ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষনা করা হয়েছিলো। পরবর্তীতে ঝুঁকিপূর্ন ভবন গুলো ভেঙে ফেলার উদ্যোগ নেয়া হলেও জনবল ও যন্ত্রাংশ সংকটের কারণে সেই সিদ্ধান্ত থেকে পিছিয়ে যায় নগর কর্তৃপক্ষ। তবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙতে রাজনৈতিক বাঁধার অভিযোগও রয়েছে।
বিসিসি’র স্টেট অফিসার মো. মাহবুবুর রহমান সাকিল বলেন, ঝুঁকিপূর্ন ভবন ভাঙার জন্য নগর কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সাল থেকে ১৬ সাল পর্যন্ত চার দফা নোটিশ দিয়েছে। নোটিশ পেয়ে সদর রোডের একটি ঝুঁকিপূর্ন ভবন নিজ উদ্যোগে ভেঙে ফেলা হয়েছে। তবে বাকি ৩৩টি ভবন না ভাঙায় তাতে লাল রং দিয়ে লেখা সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড লাগিয়ে দেয় হয়। যাতে লেখা ছিলো “এই ভবন বসবাস অনুপযোগী ঝুঁকিপূর্ন”। তবে মজার ব্যাপার হলো সাইন বোর্ড গুলো লাগানোর একদিন পরেই তা উধাও হয়ে যায়। অবশ্য এর পরে ঝুঁকিপূর্ন ভবন ভেঙে ফেলতে নতুন করে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।
স্টেট অফিসার বলেন, ২০১৩ ও ২০১৫ সালের সার্ভেতে যে ৩৪টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষনা করা হয়েছিলো তার মধ্যে জানুকিসিংহ রোডের মতি লস্করের বাড়ি, পূর্ব বগুড়া রোডে রবীন্দ্রনাথ সেনের ভবন, আগরপুর রোডের মনু মিয়ার বাড়ি, কাটপট্টি সড়কে সাধনা ঔষধালয় ভবন, সৈয়দ জুম্মান ব্রাদার্স, অমৃত ভবন, আহম্মদ ক্লথ স্টোর, চন্দ্রিকা ব্রাদার্স, মিল্লাত ফার্মেসী, ঈশ্বর বসু রোডের সৈয়দ মঞ্জিল, হাসপাতাল রোডের মান্নান মৃধার ভবন, কালুশাহ্ সড়কের জালাল আহমেদের ভবন, নবগ্রাম রোডে হাতেম আলী কলেজের আলমগীর ছাত্রাবাসের পুরাতন ভবন, কলেজের অভ্যন্তরে বিজ্ঞান ভবন, শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ লেনের ক্ষণিকা ভবন, ব্রজমোহন কলেজের সুরেন্দ্র ছাত্রাবাস ভবন, বগুরা রোডে সালাম চেয়ারম্যানের পুরানো ভবন, হাজী ইসরাইলের বিল্ডিং, নগর ভবনের পেছনে জেলা পুলিশের সাবেক হাজত ও মালখানা, সিএন্ডবি রোডে সদর উপজেলা পরিষদের পুরাতন ভবন, সদর রোডের সৈয়দ ভবন, কাউনিয়া প্রধান সড়কের বেণীলাল গুহের বাড়ি, রূপাতলী গোলচত্তর এলাকায় নলছিটি প্লাজা, কাটপট্টির সৈয়দ কামাল হোসেন রুবেলের ভবন, চিত্ত শাহা ভবন, ফজলুল হক এভিনিউ’র আলহাজ্ব আব্দুর রহমানের গোল্ডেন টাওয়ার, হোটেল বাহাদুর ভবন উল্লেখ্যযোগ্য। তাছাড়া এসব ঝুঁকিপূর্ন ভবনের মধ্যে গত প্রায় ৬ বছরে শুধুমাত্র সদর রোডের সৈয়দ ভবন ভেঙে ফেলা হয়েছে নিজ উদ্যোগে। উত্তর সদর রোডের শাকুর ম্যানশন নামের ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙে ফেলতে উদ্যোগ নেয় মালিক পক্ষ। তবে ভাড়াটিয়াদের বাধায় তা সম্ভব না হওয়ায় সিটি মেয়র বরাবর লিখিত অভিযোগও দিয়েছেন বাড়ির উত্তোরাধিকারী ফাতেমা খাতুন। এছাড়া অপর ভবনগুলো ভাঙার উদ্যোগ নেই। স্টেট অফিসার মাহবুবুর রহমান সাকিল বলেন, ৩৩টি ভবনের মধ্যে মেডিকেল কলেজ লেন এর “ক্ষনিকা” ভবনের মালিক ২০১৬ সালের ১২ এপ্রিল একজন বিএসসি প্রকৌশলীর মাধ্যমে একটি লোড বেয়ারিং সার্টিফিকেট জমা দিয়েছেন। ওই সার্টিফিকেট অনুযায়ী হেলে পড়া ভবনটি বসবাসে কোন ঝুঁকি নেই। একই ভাবে আরো একটি বাড়ির মালিক লোড বেয়ারিং সাটিফিকেট দিয়ে ঝুঁকিপূর্ন তালিকা হওয়া ভবনেই বসবাস করছে। তাছাড়া রূপাতলীর নলছিটি প্লাজা’র মালিক বিসিসি’র প্রকৌশল বিভাগের সার্ভে ভুল হয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন। তার দাবী নলছিটি প্লাজা নয়, বরং তার ভবনের পাশে যে ভবনটি রয়েছে সেটি ঝুঁকিপূর্ন। এমন অজুহাত দেখিয়ে ঝুঁকিপূর্ন ভবনটি ভাংছে না। ভিপি সম্পত্তি’র দোহাই দিয়ে কাটপট্টির ঝুঁকিপূর্ণ ভবনেই চলছে ব্যবসা ও বসবাস। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কোন সুরাহা হয়নি।
নগর ভবনের পেছনে পুলিশের সাবেক হাজত এবং মালখানা রয়েছে। যা ভেঙে ফেলার জন্য জেলা পুলিশ সুপার এবং গণপূর্ত বিভাগকে চিঠি দেয়া হয়েছে। কিন্তুনা ভেঙে ঝুঁকিপূর্ন ভবন সংস্কার করে সেখানেই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। বহাল রয়েছে সদর উপজেলা পরিষদের পুরাতন ভবন, হাতেম আলী কলেজের পুরাতন ছাত্রাবাসটিও।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, শুধুমাত্র তালিকাভুক্ত ওই ৩৩টি ভবনই ঝুঁকিপূর্ন নয়। বরং এর বাইরেও অনেক ঝুঁকিপূর্ন ভবন রয়েছে। নতুন করে সার্ভে না হওয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো চিহ্নিত করা সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষ করে সদর রোডের সোহেল চত্ত্বরে দীর্ঘ বছরের পুরানো ঝুঁকিপূর্ণ ওয়েসিস বিল্ডিং এর পুনঃসংস্কার কাজ চলছে। হাসপাতাল রোডেও রয়েছে আরো একটি ভবন। সম্প্রতি যার কিছু অংশ হেলে পড়ে বলে গুঞ্জন শুরু হয়। এমন আরো অসংখ্য ভবন রয়েছে যা নগর কর্তৃপক্ষের সার্ভিতে বেরিয়ে আসবে। তাই পূর্বের তালিকাভুক্ত ভবন এবং নতুন ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সার্ভে করে তা ভেঙে ফেলার বিষয়ে নগর কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ’র সু-দৃষ্টি কামনা করেছেন সচেতন মহল।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT