7:12 pm , May 23, 2018
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ চিংড়ি রেনু পাচারে সহযোগিতার জন্য প্রতিদিন লাখ টাকা উৎকোচ নেয় বন্দর থানা। গতকাল বুধবার স্থানীয়দের হাতে আটক চিংড়ি রেনু পাচারের মুলহোতা এমন তথ্য ফাঁস করেছে। ওই অভিযোগ সম্পর্কে জানতে বন্দর থানার ওসি মোস্তফা কামালের কাছে ফোন করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। গতকাল ভোর রাতে ৩৫ ড্রাম ভর্তি চিংড়ি রেনুসহ স্থানীয়রা ১৮ জনকে আটক করে স্থানীয়রা। পরে পুলিশ এসে রহস্যজনক কারনে চার জনকে ছেড়ে ১৪ জনকে রেখে দেয়। তাদের প্রত্যেককে দুই হাজার টাকা করে জরিমানা করেন ভ্রাম্যমান আদালতের নির্বাহী হাকিম সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. হুমায়ন কবির। তার নিদের্শে চিংড়ি রেনু নদীতে অবমুক্ত করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বুধবার ভোর ৫টার দিকে সদর উপজেলার নেহালগঞ্জে কয়েকটি ট্রলার থেকে ড্রাম ভর্তি চিংড়ি রেনু পোনা ফেরীতে থাকা ট্রাকে (ঢাকা মেট্রো ট-১৬-৩৯১৬) উঠানো হয়। তখন প্রত্যক্ষদর্র্শীরা বিষয়টি বন্দর থানা ও সাংবাদিকদের অবহিত করে। ওই খবর পেয়ে সাংবাদিক ও বন্দর থানার তিনটি টহল দল ঘটনাস্থলে আসে। কিন্তু দীর্ঘক্ষন পুলিশের তিনটি দল রেনু পোনা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। আটক ১৮ জনের মধ্যে পাচারকারীর হোতা হারুন ও তার সহযোগিদের রক্ষায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে পুলিশ। আটকের পাঁচ ঘন্টা পর বিষয়টি পুলিশের উর্ধ্বতন মহলকে অবহিত করা হয়। কিন্তু এর মধ্যে পুলিশের সহযোগিতায় ৪ জন রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যায়। তাই রেনু পোনা ও ১৪ পাচারকারীদের আটক করে পুলিশ। পরে ১৪ রেনু পোনা পাচারকারীকে ২৮ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেয়া হয়।
তখন আটক পাচার চক্রের হোতা হারুন ওরফে পাতিল হারুন রেনু পোনা পাচারে থানা পুলিশের সহযোগিতার তথ্য ফাঁস করে দেয়। হারুন উপস্থিত সাংবাদিকদের জানায় “ রেনু পোনা নির্বিঘেœ পাচার করার জন্য বন্দর থানা পুলিশকে প্রতিদিন এক লাখ টাকা উৎকোচ দেয়া হচ্ছে। থানার বকসি ফয়জুর রহমান টাকা নেয় বলে দাবী করেছে হারুন।
সাংবাদিকদের তিনি আরো জানান, গোটা দক্ষিণাঞ্চলে চিংড়ি রেনুপোনা পাচারের মুল হোতা গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ার টুলু। সম্প্রতি রেনুপোনা পাচার কালে র্যাব-৮’র হাতে আটক হয়। নামে মাত্র জরিমানা দিয়ে ছাড়া পেয়ে যায় টুলু। তখন সে রেনু পোনা পাচার করবে না বলে মুচলেকা দিলেও ছাড়া পেয়েই পুনরায় তার ব্যবসা করেছে।
হারুন জানায়, মুল হোতা টুটুল হলেও বরিশালের এক এক জোনের দায়িত্বে একজন জন। যার মধ্যে বরিশাল, ভোলা, গলাচিপা, পাথরঘাটার দায়িত্বে আছে নগরীর পোর্ট রোডের মৎস্য আড়ৎদার রনি, তিনি নিজে ও সদর উপজেলার নেহালগঞ্জের জাকির। তবে তিনি (পাতিল হারুন) ও রনি মৎস্য বিভাগ, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী সহ ক্ষমতাসিন দলের নেতাদের ম্যানেজ করেন। দিন, সপ্তাহ এবং মাস হিসেবে তাদেরকে উৎকোচের টাকা পৌছে দিয়ে নির্বিঘেœই পাচার বানিজ্য করে তারা।
প্রতিদিন সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাদের চোখের সামনে থেকে লাখ লাখ পিস চিংড়ি রেনু পোনা দক্ষিণাঞ্চল থেকে পাচার হচ্ছে। বরগুনার আমতলী, পটুয়াখালীর কলাপাড়া, মহিপুর, কুয়াকাটা ও আলীপুর মোকাম থেকে কমপক্ষে ১০টি এবং বরগুনা সদর থেকে প্রতিদিন রেনুপোনা বোঝাই দুই ট্রাক চিংড়ি পাচার হচ্ছে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরায়। যা নগরী হয়েই পাচার হচ্ছে বলে জানিয়েছে রেনু পোনা পাচারকারী পাতিল হারুন।
মৎস্য বিভাগ বলছে, রেনুপোনা ধরতে যে মশারি জাল ব্যবহার করা হচ্ছে তাতে শুধুমাত্র বাগদা চিংড়ি রেনুর ক্ষতি হচ্ছে না বরং ৩৮ প্রচাজির চিংড়ি, ৬ প্রজাতির সামদ্রীক মাছ ও ৫৬ প্রজাতির জুপ্লাংটন সহ মোট ১০০ প্রজাতির জলজ প্রানী প্রতিদিন ধ্বংস হচ্ছে। এতে করে নদী ও সামদ্রীক প্রানী ও মাছের বংশবিস্থার চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।
ওই অভিযোগের বিষয়ে জানার জন্য বন্দর থানার ওসি মোস্তফা কামালের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হয়। কিন্তু সে ফোনের কল রিসিভ করেননি।