জনগন ছাড়া ‘মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ’ নির্মুল সম্ভব নয়-আইজিপি জনগন ছাড়া ‘মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ’ নির্মুল সম্ভব নয়-আইজিপি - ajkerparibartan.com
জনগন ছাড়া ‘মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ’ নির্মুল সম্ভব নয়-আইজিপি

5:56 pm , May 10, 2018

রুবেল খান ॥ আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেছেন, মাদক একটি সামাজিক সমস্যা। এটা পুলিশের একক সমস্যা নয়। একক সমস্যা মনে করলে এর সমাধান হবে না। সামাজিক ভাবেই এর সমাধান করতে হবে। জনগনের সম্পৃক্ততা ও সহায়তায় বাংলাদেশ থেকে যেমন জঙ্গিবাদ নির্মুল করা হয়েছিলো তেমনি করে সকলের সহায়তায় এ দেশ থেকে মাদক নির্মুল করতে হবে। বরিশাল থেকে শুরু করা মাদক নির্মুল কার্যক্রমের মাধ্যমে সকলকে সাথে নিয়ে এদেশ থেকে মাদককে বিদায় জানাতে হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে বরিশাল রেঞ্জ পুলিশ আয়োজিত সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদক বিরোধী সমাবেশে প্রধান অতিথি’র বক্তৃতায় পুলিশ বাহিনীর প্রধান ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী এসব কথা বলেছেন। বরিশাল রেঞ্জ ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম’র সভাপতিত্বে বরিশাল পুলিশ লাইন্স মাঠে অনুষ্ঠিত সমাবেশে আইজিপি আরো বলেন, ‘মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মুলের দায়িত্ব পুলিশের। কিন্তু জনগনের সম্পৃক্ততা ও সহায়তা ছাড়া এই তিনটি সমস্যা পুলিশের একার পক্ষে সমাধান করা সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী আমাকে যখন দায়িত্ব দিয়েছেন তখন তিনি মাদক নিয়ন্ত্রনের চ্যালেঞ্জ ধরিয়ে দিয়েছিলেন। আমি দায়িত্ব গ্রহনের পরে গত তিন মাসের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর দেয়া সেই চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নের জন্য মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি দেখিয়েছি। এরই মধ্যে জনগনের সম্পৃক্ততায় দেশ থেকে মাদক নির্মুলে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ গ্রহন করেছেন জানিয়ে আইজিপি বলেন, মাদক আমাদের দেশে উৎপাদন হয় না। ইয়াবা, ফেন্সিডিল, হেরোইন দেশের বাইরে থেকে আসছে। তাই বাংলাদেশ থেকে মাদক নির্মুল করতে সিমান্ত এলাকা থেকে সকল পর্যায়ে যে যেস্থানে যেভাবে দায়িত্বে আছেন তাদেরকে সেখান থেকেই দায়িত্ব পালন করতে হবে।
আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, সারা বিশ্বে জঙ্গিবাদ দমনে রোল মডেল হিসেবে আমাদের ভূয়সী প্রশংসা করছে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ আমাদের সহযোগিতা এবং পাশে থেকেছে বিধায় আজ আমরা বিশ্বের কাছে প্রশংসিত হয়েছি। তেমন কি সমাজের সকল শ্রেণির মানুষ আমাদের পাশে দাড়ালে মাদক রুখে দিতে পারবো। তবে মাদক নির্মুল করতে হলে আগে মাদকের ডিমান্ড কমাতে হবে। কেননা যতক্ষন ডিমান্ড থাকবে ততক্ষন মাদকও আসতে থাকবে। এজন্য মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের অন্ধকার জগত থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদেরকে মাদকের ভয়াবহতা থিকে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসন করতে হবে। তবেই মাদকের ডিমান্ড কমে যাবে। যেসব পথগুলোতে মাদক আসবে তা বন্ধ করে দিতে হবে।
সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের তথ্য তুলে ধরে আইজিপি বলেন, বর্তমান সরকার দেশের অনেক উন্নয়ন করেছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, বিদ্যুৎ এর উৎপাদন ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি হওয়া সহ আরো অনেক উন্নয়ন এদেশে হয়েছে। আর অল্প দিনের মধ্যেই আমাদের এ দেশ উন্নত দেশে রূপান্তরিত হবে। তাছাড়া আমরা আজ স্যাটেলাইট যুগে পদার্পন করেছি। এছাড়াও দেশে যত উন্নয়ন হয়েছে তা শুধুমাত্র আমাদের প্রধানমন্ত্রীর জন্যই হয়েছে। তার প্রচেষ্টায় আমাদের দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু মাদক আমাদের পিছে টেনে নিচ্ছে। যে যুবসমাজ দেশকে এগিয়ে নিতে শক্তিতে পরিনত হবে সেই যুবসমাজের একটি অংশই মাদকাসক্ত হয়ে আছে। তাদেরকে এগিয়ে নিতে গিয়ে আমাদের আরো সময় দিতে হচ্ছে। যে কারনে দেশকে এগিয়ে নিতেও সময় দিতে হচ্ছে।
পুলিশ বাহিনীর উদ্দেশ্যে আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, পুলিশকে জনমুখি হতে হবে। আমরা নারী, শিশু ও জনবান্ধব হতে না পারলে সেবা দিতে পারবো না। এক একটি থানা হবে সেবার কেন্দ্রবিন্দু। থানায় পুলিশের প্রতিটি সদস্যকে হাসিমুখে থাকতে হবে। সেবাগ্রহীতাদের থানায় হাসিমুখে আমরা বরন করতে হবে। মানুষ অভিযোগ নিয়ে থানায় এসে পুলিশের মুখে হাসি না দেখলে সে অভিযোগ দিতে চাইবে না। আমাদের দায়িত্ব জনগনের সেবা করা। আমাদের দেশ, আমাদের কর্তব্য, আমাদের সংবিধান আমাদের এই দায়িত্ব দিয়েছে। কোন পুলিশ সেবাগ্রহীতাকে সেবা এবং সহযোগিতা না দিলে আপনারা আমাদের বলবেন। পুলিশের কেউ মাদকের সাথে জড়িত থাকলে আমাদের কাছে অভিযোগ দিন। আমরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিবো।
সন্তানদের অভিভাবক ও শিক্ষকদের উদ্দেশ্য করে আইজিপি বলেন, একটি মানুষ শিশু থেকে বেড়ে ওঠা পর্যন্ত যে শিক্ষা পেয়ে থাকে তা বাবা-মা ও শিক্ষকদের কাছ থেকেই পেয়ে থাকে। তাই আমার সন্তান স্কুল, কোচিং এবং খেলার কথা বলে কোথায় যা সে দিকে যতœসহকারে খেয়াল রাখতে হবে। তাকে নৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে হবে। যে শিক্ষা একজন সন্তান পেয়ে থাকে তার বাবা-মা ও শিক্ষকের কাছ থেকে। তাই প্রতি বাবা-মা ও শিক্ষকদে দায়িত্ব নিতে হবে। শুধু পুলিশের দিকে তাকিয়ে থাকলেই হবে না, যার যার অবস্থান থেকে আমাদের সহযোগীতা করলে আমরা অবশ্যই এগিয়ে যেতে পারবো।
দেশের জনগনকে উদ্দেশ্য করে আইজিপি বলেন, ২০১৩-১৪ সালে আমরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের মোকাবেলা করেছি। এজন্য আমাদের ১৭ জন সহকর্মীকে হারিয়েছি। ২ হাজারের মতো সহকর্মী আহত হয়েছে। অনেককে পঙ্গুত্ব বরন করতে হয়েছে। তাতেও আমরা হারিনি। আগুন সন্ত্রাস থেকে দেশকে ফিরিয়ে এনেছি। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমরা যেমন কঠোর ছিলাম তেমন মাদকের বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থানে থাকার ঘোষনা দেন আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।
সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদক বিরোধী সমাবেশের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন অনুষ্ঠানের সভাপতি ও বরিশাল রেঞ্জ এর ডিআইজি মো. শফিকুল ইসলাম। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাড. তালুকদার মো. ইউনুস, পুলিশের সাবেক এসপি মাহবুব উদ্দিন আহমেদ-বীর বিক্রম, বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. শহিদুজ্জামান, বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার মাহফুজুর রহমান, বরিশালের জেলা প্রশাসক মো. হাবিবুর রহমান, বরিশাল জেলার পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম, বরগুনার পুলিশ সুপার বিজয় বসাক, বীর মুক্তিযোদ্ধা কেএসএ মহিউদ্দিন মানিক- বীর প্রতীক, উজিরপুর উপজেলা চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান ইকবাল ও গৌরনদীর পৌর মেয়র হারিছুর রহমান। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন- বরিশাল র‌্যাব-৮ এর অধিনায়ক আতিকা ইসলাম সহ বরিশাল রেঞ্জ এর অতিরিক্ত ডিআইজি এবং বরিশালের ৬ জেলার পুলিশ সুপারগন।
এছাড়াও অন্যান্যদের মধ্যে মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান, গোলাম রউফ খান, কামরুল আমিন, বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাড. গোলাম আব্বাস চৌধুরী দুলাল, সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. একেএম জাহাঙ্গীর, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু, সদ্য বাংলাদেশের নাগরিক্ত অর্জনকারী ব্রিটিশ নাগরীক লুসি হেলেন ফ্রান্সিস হল্ট সহ এপিবিএন ও আরআরএফ পুলিশের এসপি, নৌ পুলিশ, পিবিআই এবং জেলা পুলিশের অতিরিক্ত ও সহকারী পুলিশ সুপার, বিভিন্ন থানার অফিসার ইন-চার্জ, পরিদর্শক সহ বিভাগের বিভিন্ন উপজেলার চেয়ারম্যান, পৌর মেয়র, ইউপি চেয়ারম্যান, কমিউনিটি পুলিশিং সদস্য এবং মাদক ছেড়ে আলোর পথে ফিরে আসা ব্যক্তিবর্গ এবং আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
সমাবেশে শেষে সন্ধ্যায় পুলিশ লাইন্স এর মাঠে সমাবেশ স্থলে অনুষ্ঠিত হয় বর্ণাঠ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি ঢাকা থেকে আসা শিল্পিরা সংগিত পরিবেশ করেন। আইজিপি সহ অন্যান্য অতিথিবৃন্দ উপস্থিত থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT