জেলার ৬ আসনে মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় ধার-দেনা ও দানে ! জেলার ৬ আসনে মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় ধার-দেনা ও দানে ! - ajkerparibartan.com
জেলার ৬ আসনে মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় ধার-দেনা ও দানে !

3:02 pm , December 11, 2018

খান রুবেল ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী হলফ নামা বলছে জেলার ৬টি আসনের প্রার্থীরা প্রায় সকলেই বিত্তশালী। তাদের স্থাবর-অস্থাব সম্পত্তি সহ নগদ অর্থের পরিমান পাহাড় সমান। কিন্তু তার পরেও ধার, দান ও দেনার টাকায় নির্বাচন করছেন তারা। বিশেষ করে আওয়ামী লীগ ও মহাজোটের বেশিরভাগ প্রার্থীই ধার ও দানের টাকায় নির্বাচন করছেন। তবে বিএনপি’র ক্ষেত্রে উল্টোটা। দীর্ঘ দিন ক্ষমতায় না থাকায় আয়-ইনকাম নেই দাবী করা বিএনপি নেতারা নিজেদের অর্থেই নির্বাচন করছেন। সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত হলফনামা’র “খ” অংশ থেকে এমন সব তথ্যই পাওয়া গেছে। নির্বাচন কার্যালয়ে সূত্রে জানাগেছে, একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রার্থীদের নির্বাচনী ব্যয় নির্ধারন করে দেয়া হয়েছে সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা। সে অনুযায়ী প্রার্থীরা তাদের হলফনামায় সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা করে ব্যয় নির্ধারন করে দিয়েছেন। এমনকি ওই টাকার আয়ের উৎস্যও তুলে ধরতে হয়েছে। এতে দেখা যায়, বরিশাল-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী প্রার্থী আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ নির্বাচন করছেন দানের টাকায়। যদিও এই টাকা তাকে স্বেচ্ছাপ্রনোদিত দান করেছেন তারই তিন পুত্র। নির্বাচনের জন্য তার তিন সন্তান তাকে ১৫ লাখ টাকা দিয়েছেন। বাকি ১০ লাখ টাকা ব্যবসা ও কৃষি খাত থেকে নিজস্ব আয় ও ব্যয় দেখিয়েছেন আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ।
একই আসনে বিএনপি’র প্রার্থী ধানের শীষের প্রার্থী এম জহির উদ্দিন স্বপন। ব্যবসা থেকে তার ব্যয় দেখিয়েছেন আড়াই লাখ টাকা। এছাড়া নির্বাচনের জন্য তিনি ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ধার ও ১৬ লাখ টাকা স্বেচ্ছাপ্রনোদিত দান দেখিয়েছেন তিনি।
এছাড়া আসনটিতে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী রাসেল সরদার ব্যবসা থেকে এক লাখ ও দলীয় সদস্যদের কাছ থেকে অনুদান বাবদ পাওয়া দেড় লাখ টাকা নির্বাচনী ব্যয় দেখিয়েছেন।
বরিশাল-২ (উজিরপুর-বাবুগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. শাহে আলম নির্বাচনী ব্যয়ের ২৫ লাখ টাকার ২০ লাখ টাকা নিজের ব্যবসা থেকে এবং বাকি ৫ লাখ টাকা ধার করেছেন। একই আসনে বিএনপি’র ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী সরদার সরফুদ্দিন আহমেদ সান্টু তার পূর্বের ব্যবসা থেকে ২৫ লাখ টাকা নির্বাচনী ব্যয় দেখিয়েছেন। নির্বাচনের জন্য তার কোন ধার কিংবা দেনা নেই বলে উল্লেখ করেছেন।
এ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রার্থী নেছার উদ্দিন ৩ লাখ ৯০ হাজার টাকা ব্যয় দেখিয়েছেন। এর মধ্যে নিজের ব্যবসা থেকে এক লাখ ও স্বেচ্ছাপ্রনোদিত দান দেখিয়েছেন ৯০ হাজার টাকা এবং বাকি ২ লাখ টাকা দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে অনুদান হিসেবে নিয়েছেন।
বরিশাল-৩ (মুলাদী-বাবুগঞ্জ) আসনে বিএনপি’র ধানের শীষের প্রার্থী জয়নুল আবেদীন, জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া টিপু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিকুর রহমান নিজ নিজ ব্যবসা থেকে হওয়া আয় থেকে ২৫ লাখ টাকা করে নির্বাচনী ব্যয় দেখিয়েছেন। তবে এই আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা ও মহাজোটের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান এমপি শেখ মো. টিপু সুলতান ১০ লাখ ৫০ হাজার টাকা নির্বাচনী ব্যায় দেখিয়েছেন। যার মধ্যে নিজের বাড়ি ভাড়া ও সংসদ সদস্য’র ভাতা থেকে ৫ লাখ, শ্যালক সহ দু’জনের কাছ থেকে এক লাখ টাকা ধার এবং স্বেচ্ছাপ্রনোদিত দান পেয়েছেন ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। এছাড়া ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্যদের কাছ থেকে গণ চাঁদা বাবদ এক লাখ টাকা নির্বাচনী ব্যয়ের জন্য পেয়েছেন।
বরিশাল-৪ (হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী পঙ্কজ নাথ এর কোন ধার-দেনা নেই। নির্বাচনী যে ২৫ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়েছেন তা তার নিজের ব্যবসা থেকে আয় করা। তবে তার প্রতিদ্বন্দ্বি নাগরিক ঐক্যের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী জে এম নূরুর রহমান জাহাঙ্গীর নির্বাচনী ব্যয় বাবদ ২২ লাখ টাকা দেখিয়েছেন। যার মধ্যে নিজ ব্যবসা থেকে ১৩ লাখ টাকা, ধার করেছেন ৫ লাখ টাকা ও স্বেচ্ছাপ্রনোদিত দান পেয়েছেন ৪ লাখ টাকা। এ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রার্থী সৈয়দ মুহাম্মদ নূরুল করিম তার নির্বাচনী ব্যয় দেখিয়েছেন মাত্র ৫ লাখ টাকা। যার মধ্যে মধ্যে ঘর ভাড়া বাবদ আয় এক লাখ টাকা ও বাকি ৪ লাখ টাকা ভাই-বোনদের কাছ থেকে স্বেচ্ছাপ্রনোদিত দান হিসেবে পেয়েছেন।
বরিশালের সর্বচ্চ গুরুত্বপূর্ন আসন বরিশাল সদর-৫ আসনটি। এখানে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন কর্ণেল (অবঃ) জাহিদ ফারুক শামীম। নির্বাচনে তার ২৫ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়েছেন। যার মধ্যে বাড়ি ভাড়া ও পেনশন থেকে ১০ লাখ টাকা ব্যয় করবেন তিনি। বাকি ১৫ লাখ টাকার ১০ লাখ টাকা আত্মিয়-স্বজনদের কাছ থেকে ধার ও সুবানুধায়ীদের কাছ থেকে দান পেয়েছেন ৫ লাখ টাকা।
একই আসনে বিএনপি মনোননিত ধানের শীষের প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার নির্বাচনী ব্যয় দেখিয়েছেন ২৫ লাখ টাকা। যা তার ব্যবসা ও কৃষি খাত থেকে আয় হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ আসনে জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী এ্যাডভোকেট একেএম মুরতজা আবেদীন নির্বাচনী ব্যয় দেখিয়েছেন ১৬ লাখ টাকা। যার মধ্যে আইন পেশা ও অন্যান্য ব্যবসা থেকে ৫ লাখ টাকা, ধার বাবদ ৪ লাখ ও স্বজনদের কাছ থেকে স্বেচ্ছাপ্রনোদিত দান পেয়েছেন ৭ লাখা। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রার্থী মুফতী সৈয়দ মো. ফয়জুল করীম তার নির্বাচনী ব্যয় দেখিয়েছেন ৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা। যার মধ্যে ১ লাখ টাকা হাদিয়া ও চার লাখ ৫০ হাজার টাকা অন্যান্যদের কাছ থেকে স্বেচ্ছাপ্রনোদিত দান হিসেবে পেয়েছেন।
বরিশাল-৬ (বাকেরগঞ্জ) আসনে মহাজোটের লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান এমপি বেগম নাসরিন জাহান রতনা তার নির্বাচনী ব্যয় দেখিয়েছেন ২৫ লাখ টাকা। যার মধ্যে ৬ লাখ টাকা তার তিন ভাইয়ের কাছ থেকে ধার করেছেন। বাকি ১৯ লাখ টাকা তার নিজস্ব তহবিলের। বিএনপি মনোনিত ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আবুল হোসেন খানও ২৫ লাখ টাকা ব্যয় দেখিয়েছেন। যার মধ্যে ১৫ লাখ টাকা নিজ ব্যবসা থেকে এবং বাকি ১০ লাখ টাকা দান হিসেবে পেয়েছেন। এর মধ্যে পাঁচ লাখ টাকা দান করেছেন তার ডেনমার্ক প্রবাসী ভাগিনা। বাকি পাঁচলাখ স্বেচ্ছাপ্রনোদিত দান।
এই আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ এর প্রার্থী মো. নূরুল ইসলাম আল আমিন তার নির্বাচনী ব্যয় দেখিয়েছেন মাত্র এক লাখ ২০ হাজার টাকা। যার পুরোটাই তার ব্যবসা থেকে আয় করা। এরা ছাড়াও বরিশালের ৬টি আসনের অন্যান্য প্রার্থীদের বেশিরভাগই একই অবস্থা। তাদের অনেকেই ধার-দেনা এবং অনুদানের টাকায় নির্বাচন করছেন। এদের নির্বাচনী ব্যয় এক লাখ থেকে ২০ লাখ টাকার মধ্যে। উল্লেখ্য, ৯ ডিসেম্বর প্রার্থীতা প্রত্যাহার শেষে বরিশালের ৬টি আসনে দলীয় এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীর সংখ্যা দাড়ায় ৩৮ জনে। যাদের ১০ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতীক পাওয়ার পর দুপুর থেকেই তারা নির্বাচনের প্রচার যুদ্ধে নেমে পড়েন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT