বসবাসের অযোগ্য সরকারী কোয়ার্টার ভবনগুলো বসবাসের অযোগ্য সরকারী কোয়ার্টার ভবনগুলো - ajkerparibartan.com
বসবাসের অযোগ্য সরকারী কোয়ার্টার ভবনগুলো

3:20 pm , November 5, 2018

খান রুবেল ॥ ক্রমশই বসবাস অযোগ্য হয়ে পড়ছে নগরীর সরকারি কোয়ার্টারগুলো। অর্ধশত বছরের পুরনো এই কোয়ার্টারের অবকাঠামো খুবই নাজুক অবস্থায় এসে পৌছেছে। বড় ধরনের দুর্যোগ কিংবা ভূমিকম্পে প্রান হানির আশংকাও করছে অনেকে। আর তাই এরই মধ্যে কলোনী গুলোর কয়েকটি কোয়ার্টার পরিত্যক্ত ঘোষনা করেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর। পরিত্যক্ত ঘোষনা না হওয়ায় অধিকাংশ কোয়ার্টারেই চলছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ঝুঁকিপূর্ন বসবাস। আবার পরিত্যক্ত ঘোষনা হওয়া কোয়ার্টারেও বসবাস করা হচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বিভাগীয় নগরীতে অনেক দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্যই রয়েছে পৃথক কোয়ার্টারের ব্যবস্থা। এসব কোয়ার্টার গুলোতে অর্ধশতাধীক বছরের পূর্বে থেকেই মানুষের বসবাস। কোন কোন কর্মচারী নিজে থাকছেন আবার কেউ কেউ নিজে সাবলেট নিয়ে বেশি টাকায় ভাড়া দিয়ে ব্যবসা করছেন। তবে এসব কোয়ার্টারের অধিকাংশই এখন ব্যবহার অনুপযোগী ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানাগেছে, নগরীতে সর্বাধিক কোয়ার্টার রয়েছে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। প্রথম শ্রেণি থেকে শুরু করে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত সকলেরই আলাদা আলাদা কোয়ার্টার রয়েছে। তবে দ্বিতীয় শ্রেণীর নার্সদের জন্য রয়েছে ডরমেটরীর ব্যবস্থা।

হাসপাতালের ডক্টর্স কোয়ার্টার, তৃতীয় শ্রেণি স্টাফ কোয়ার্টার ও চতুর্থ শ্রেণি স্টাফ কোয়াটার সবগুলোর অবস্থাই খারাপ। এখানে প্রায় সময় ভবনের পলেস্তরা খসে পড়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী কিংবা তাদের পরিবারের সদস্যদের আহত হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। হাসপাতালের প্রথম শ্রেণি অর্থাৎ ডক্টর্স কোয়ার্টারে ৮টি ভবন রয়েছে। যার অধিকাংশই খালি। ভবনের অবস্থা নাজুক হওয়ায় কোন চিকিৎসক সেখানে থাকতে চাচ্ছে না। তাছাড়া তৃতীয় শ্রেণির কোয়ার্টারে ভবনের সংখ্যা ৪টি। তিনটিতে তৃতীয় তলা এবং একটি দ্বিতল ভবন। এখানকার কোয়ার্টারের অধিকাংশ প্লাটই সরকারি সাবলেট বিহিন ভাড়া হচ্ছে। সরকারি কর্মচারীরা বসবাস অনুপযোগী হওয়ায় কেউ ফ্ল্যাট ভাড়া নিচ্ছে না। তবে বহিরাগতদের অবৈধ বসবাস রয়েছে কোয়ার্টার গুলোতে। খুব খারাপ অবস্থা বিরাজমান চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারীদের কোয়ার্টার গুলোর। এখানে ১০টি কোয়ার্টার রয়েছে। তার মধ্যে একটি দ্বিতল এবং অপরটি ১ তলা। বাকি ৮টি তিন তলা বিশিষ্ট ভবন। চতুর্থ শ্রেণি স্টাফ কোয়ার্টারের অধিকাংশ ফ্লাটই সরকারি সাবলেট হচ্ছে না। কেননা কোয়ার্টার ভবনের পরিস্থিতি এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ হচ্ছে যে, যো কোন সময় দুর্ঘটনা ঘটনার আশংকা রয়েছে। এরই মধ্যে চতুর্থ শ্রেণি স্টাফ কোয়ার্টারের ৫ ও ৬নং বিল্ডিং পরিত্যাক্ত ঘোষনা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গণপূর্ত বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী ওবায়েদ হক।

তিনি বলেন, দুটি ভবনের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। তাই ওই দুটি পরিত্যাক্ত ঘোষনা হয়েছে। বাকি যে কোয়ার্টারগুলো রয়েছে সেগুলোরও মেয়াদ উত্তির্ণ হয়েছে। সরকারি বিধি মোতাবেক এক একটি ভবনের মেয়াদ ৫০ বছর। যা এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। তবে যে কোয়ার্টার গুলো রয়েছে সে গুলোর অবস্থা কিছুটা ভালো। তাই সেগুলোতে প্রতি বছরই সংস্কার কাজ করা হচ্ছে। তবে যে দুটি পরিত্যাক্ত ঘোষনা করা হয়েছে সে দুটিতে কাউকে উঠতে দেয়া হচ্ছে না। তবে সরেজমিনে দেখাগেছে, ঝুকিপূর্ন ওই ভবনেও মানুষের অবৈধ বসবাস রয়েছে। তাছাড়া পরিত্যক্ত দুটি সহ অন্যান্য কোয়ার্টার গুলোতে মাদক ব্যবসায়ী, সেবককারী এবং জুয়ারীদের মিলন মেলা ঘটছে।

এদিকে চতুর্থ শ্রেণি স্টাফ কোয়ার্টারের দু’পাশে অবস্থিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের পৃথক দুটি কলোনী। যার একটি বিআইপি কলোনী এবং অপরটি পাউবো সাগরদী কলোনী। দুটি কলোনীর বাসভবন গুলোর অবস্থাই নাজুক। তার মধ্যেই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসবাস চলছে। আবার যেগুলো ঝুঁকিপূর্ণ সেগুলো বহিরাগতদের কাছে ভাড়া দিচ্ছে প্রভাবশালী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবু সাঈদ বলেন, আমাদের দুটি কলোনীতে যে কোয়ার্টারগুলো রয়েছে তা বহু বছরের পুরানো। যে কারনে কিছু কিছু ভবনের অবস্থা খুবই নাজুক হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে আমাদের কয়েকটি কোয়ার্টার অবহার অনুপযোগী পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হয়েছে। বাকি কোয়ার্টার গুলোতে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বসবাস রয়েছে।

তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী এসব ভবন ভেঙে ফেলতে হবে। এজন্য প্রসেসিং এর প্রয়োজন রয়েছে। পরিত্যাক্ত ভবনের বিষয়ে আমরা ঢাকায় চিঠি পাঠিয়েছি। তারা ভাঙার অনুমতী দিলে নিলাম ডেকে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোতে যাকে কেউ না থাকতে পারে সে বিষয়টি লক্ষ রাখা হচ্ছে। এমনকি ভবন গুলো কোন ফ্ল্যাট কর্মচারীদের বরাদ্দও দেয়া হচ্ছে না।

অপরদিকে নগরীর সড়ক ও জনপথ বিভাগের কোয়ার্টার রয়েছে। যা সিএন্ডবি কোয়ার্টার নামেই পরিচিত। সড়ক ও জনপথ কার্যালয় সংলগ্ন সিএন্ডবি সড়কের পাশে অবস্থিত ৬/৭টি কোয়ার্টারের অধিকাংশই জরার্জিন। যার মধ্যে একটি পরিত্যাক্ত ঘোষনা করা হয়েছে। ওই ভবনটি সহ জরাজির্ন অন্য ভবনগুলোতে মাদকের হাট বসছে। ঘটছে অপরাধমুলক নানান কর্মকান্ড।

তাছাড়া এসব কোয়ার্টার যারা রক্ষনাবেক্ষনের দায়িত্বে আছে সেই গণপূর্ত বিভাগের রয়েছে ৫টি কোয়ার্টার। ভাটারখাল এলাকার এই কোয়ার্টার গুলোও বেহাল। তবে এখানকার কোন কোয়ার্টারই পরিত্যক্ত ঘোষনা করা হয়নি বলে জানিয়েছেন সাব ডিভিশন ইঞ্জিনিয়ার মোল্যা রবিউল ইসলাম। অবশ্য সরেজমিনে দেখাগেছে ভিন্ন চিত্র। জরাজির্ণ ভবনে পরিনত হতে চলা ভবন গুলোতে প্রায়শই পলেস্তরা খসে পড়ে বাসবাসকারিরা আহত হচ্ছে। তেমন রক্ষনাবেক্ষনও হচ্ছে না। এক প্রকার বসবাস অনুপযোগী হয়ে পড়ছে ভবনগুলো।

এ প্রসঙ্গে গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রিপন কুমার রায় বলেন, সরকারি ভবনগুলোর মেয়াদ ৫০ বছর দেয়া থাকে। সে অনুযায়ী আমাদের অধিনস্ত গণপূর্ত, শেবাচিম হাসপাতাল সহ অন্যান্য কোয়ার্টার গুলোর মেয়াদ এরই মধ্যে শেষ হয়ে গেছে। কিছু কিছু কোয়ার্টার পরিত্যাক্তও ঘোষনা হয়েছে। কিন্তু ভেঙে ফেলা কিংবা নতুন করে করার বিষয়ে তেমন কোন অগ্রগতী নেই জানিয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, কোয়ার্টারগুলোর ভাড়া এতো বেশি যে কেউ এখন আর সেখানে থাকতে চাচ্ছে না। তাছাড়া প্রতি বছর কোয়ার্টারগুলো ম্যান্টেনেজ এর জন্য খরচ আছে। যা আমরা সঠিক ভাবে পচ্ছি না। তাই যেসব কোয়ার্টার বরাদ্দ হচ্ছে শুধুমাত্র সেইসব কোয়ার্টারই আমরা প্রতি বছর ম্যান্টেনেজ এর চেষ্টা করছি।

তিনি বলেন, পরিত্যাক্ত ভবন নিলামে দিয়ে ভেঙে ফেলা হবে। পাশাপাশি ওইসব ভবন ভেঙে সেখানে ডরমেটরী নির্মানের বিষয়ে আলোচনা চলছে। ঢাকা থেকে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পেলে পরবর্তী কার্যক্রমের দিকে এগোবেন বলে জানিয়েছেন নির্বাহী প্রকৌশলী।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT