অভিভাবকহীন নগরভবনে নাগরিক সেবা বঞ্চিত নগরবাসী অভিভাবকহীন নগরভবনে নাগরিক সেবা বঞ্চিত নগরবাসী - ajkerparibartan.com
অভিভাবকহীন নগরভবনে নাগরিক সেবা বঞ্চিত নগরবাসী

5:31 pm , October 7, 2018

রুবেল খান ॥ অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে নগর ভবন। মেয়র থেকে সচিব পর্যন্ত গুরুত্বপূর্ন সকল পদ শুন্য। একমাত্র নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট পদ পূর্ন থাকলেও তিনিও ছুটিতে যাওয়া প্রস্তুতি নিয়েছেন। এতে নগর ভবনের কর্যক্রমে সৃষ্টি হয়েছে হ য ব র ল পরিস্থিতি। ইচ্ছে মত আসা যাওয়া করছেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। যার ফলে তলানীতে পৌছেছে নাগরিক সেবা। পরিচ্ছন্নতা অভিযানের অভাবে ময়লার স্তুপ সৃষ্টি হওয়া নগরীতে দুর্গন্ধে পথচলা দুস্কর হয়ে পড়েছে। গেলো সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার পর থেকেই এমন পরিস্থিতি বিরাজ করছে। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের যানবাহন, ট্রেড লাইসেন্স, কর আদায়, পানি এবং বিদ্যুৎ শাখা মিলিয়ে বিভিন্ন শাখায় প্রতিদিন সহ¯্রাধিক সেবা গ্রহিতা নাগরিক সেবা নিতে আসছে। কেউ পরামর্শ জানতে আবার কেউ নতুন করে সেবা নিতে আসছে। এতে করে প্রতিদিন বিসিসি’র রাজস্বও আদায় হয়ে আসছে কয়েকগুন। কিন্তু সদ্য সমাপ্ত বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন শুরু থেকেই সেই চিত্র পাল্টে গেছে। কেননা তফসলি ঘোষনার পর থেকেই নগর ভবনে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যে যার ইচ্ছেমত দায়িত্ব পালন করছে। দায়িত্ব পালনে সবচেয়ে বেশি উদাসীনতার পরিচয় দিচ্ছে পরিচ্ছন্নতা বিভাগ। এ শাখার সংশ্লিষ্টদের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে খেয়াল খুশিমতো। ইচ্ছে হলে ময়লা আবর্জনা পরিক্ষার করা হচ্ছে, আর না চাইলে নয়। বিভিন্ন শাখা কেন্দ্রিক কিছু সেবা কার্যক্রম চললেও প্রকৌশল শাখা পুরোটাই ঘুমিয়ে আছে। মোট কথা ছন্নছাড়া ভাব বিরাজ করছে গোটা নগর ভবন জুড়ে। তবে বর্তমানে এই পরিস্থিতি আরো প্রকট হয়ে দাড়িয়েছে। নাগরিক সেবা পুরোপুরি ভাবেই বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম ঘটেছে। এর কারন নগর ভবনে দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতি।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার কয়েক দিনের মধ্যেই বদলী হন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান। তিনি জেলা প্রশাসক পদে পদলী হয়ে অন্যত্র চলে যান। তার অবর্তমানে ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন সচিব মো. ইসরাইল হোসেন। তাকেও এরই মধ্যে দুই দফায় ঝালকাঠি ও খুলনায় বদলী করা হয়েছে। অবশ্য আপদকালিন সময়ের জন্য তাকে নগর ভবনে সচিব পদে বহাল রাখা হলেও তিনি কর্মস্থলে নেই। দাপ্তরীকে সম্মেলনে যোগদিতে বর্তমানে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। এর মধ্যেই আবার অতিরিক্ত ছুটি নেয়ার প্রস্তুতিও চলছে তার।
এদিকে সর্বশেষ গত ৪ঠা অক্টোবর পদত্যাগ পত্র স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রনালয়ে পদত্যাপত্র পাঠিয়েছেন বিদায়ী মেয়র মো. আহসান হাবিব কামাল। সেই থেকে তিনিও আর নগর ভবনে যাচ্ছেন না। তাই নগর ভবনে একমাত্র ভরসা হিসেবে রয়েছেন নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইমতিয়াজ মাহমুদ জুয়েল। তিনি দায়িত্বে থাকলেও অর্থনৈতিক ক্ষমতা দেয়া হয়নি তাকে। আর তিনিও আসা-যাওয়া আর খুটিনাটি সমস্যা সমাধান করেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যাচ্ছে। অবশ্য নগর ভবনে গুঞ্জন রয়েছে সকল নাই এর মধ্যে থেকে ছুটি যাবার প্রস্তুতি নিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটও। এমনটি হলে পুরোটাই অভিভাবক শূণ্য হয়ে পড়বে নগর ভবন।
গতকাল রোববার নগর ভবনে গিয়ে দেখা যায় বেহাল চিত্র। দুপুর ১টা না বাজতেই কর আদায় শাখা, পানি শাখা, যানবাহন লাইসেন্স শাখা, বিদ্যুৎ শাখায় শূণ্যতা দেখা দেয়। অধিকাংশ কর্মকর্তাকেই দেখা যায়নি। সেই সাথে কর্মচারীরাও দুপুরের খাবারের অজুহাতে বেরিয়ে পড়েছেন। এমনকি ঠিক সময়ে কর্মস্থলে খুজে পাওয়া যায়নি জনসংযোগ কর্মকর্তা আহসান রোমেলকেও। সেই মুহুর্তে গ্রাহকদের ভীর দেখা যায় নগর ভবনে বিভিন্ন শাখায়। যারা বিভিন্ন বিষয়ে সেবা এবং পরামর্শ গ্রহনের জন্য আসেন। কিন্তু কাউকে না পেয়ে তাদেরও একসময় চলে যেতে হয়েছে।
আলাপকালে নতুন হোল্ডিং এর জন্য আসা কয়েকজন গ্রাহক বলেন, গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে নতুন হোল্ডিং করার জন্য নগর ভবনে আসছি। কিন্তু আবেদন গ্রহন করা হলেও কাজ হচ্ছে না। রাজত্ব কর্মকর্তা না থাকার অজুহাতে আমাদের দিনের পর দিন পার করানো হচ্ছে। একই অভিযোগ করেছেন পানি শাখায় সেবা নিতে আসা আরো কয়েকজন গ্রাহক।
দুপুর দেড়টায় এ বিষয়ে কথা বলতে নগর ভবনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. ইমতিয়াজ মাহমুদ জুয়েল এর সাথে কথা বলতে তার কক্ষে গিয়ে তাকেও পাওয়া যায়নি। তার কক্ষের সামনে দায়িত্বে থাকা পিওন বলেন, ‘ম্যাজিষ্ট্রেট স্যার লাঞ্চ করার জন্য গেছেন’।
এদিকে বিভিন্ন শাখায় দায়িত্বে থাকা কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, নগর ভবনে অভিভাবক পর্যায়ের কোন কর্মকর্তাই নেই। এজন্য স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। নতুন করে কোন গ্রাহক সেবা দিতে অর্থাৎ কর, ট্রেড লাইসেন্স বা সম্পর্কিত অন্য সেবা দিতে হলে রাজস্ব কর্মকর্তার প্রয়োজন বাধ্যতামুলক। কিন্তু রাজস্ব কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা সচিব তিনি বর্তমানে ঢাকায় রয়েছেন। যে কারনে নতুন সেবা নিতে আসা গ্রাহকদের পরামর্শ আর তাদের আবেদন জমা রাখা ছাড়া আমাদের কিছু করার নেই। আমরা পারি শুধুমাত্র পুরানো সেবাগ্রহিতাদের কাছ থেকে পাওয়া আদায় বা জমা দেয়ার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করতে।
এদিকে নগর ভবনে যে পরিস্থিতি বিরাজমান তার থেকেও করুন চিত্র ফুটে উঠছে নগরীর রাস্তাঘাটে। খানাখন্দে মরন ফাঁদে পরিনত হওয়া সড়কের পাশাপাশি অন্যতম সমস্যা হয়ে দাড়িয়েছে জমে থাকা ময়লা আবর্জনা। স্কুল-কলেজ এর সামনে থেকে শুরু করে চলাচলের প্রধান সড়ক গুলোর পাশে ময়লা আবর্জনার স্তুপ জমে থাকলেও তা অপসারনের উদ্যোগ নেই। এক স্থান থেকে সরিয়ে আরেক স্থানে স্তুপ করে রেখেই দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছেন তারা।
সম্পর্তিক বিষয়ে জানতে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে বিসিসি’র এনেক্স ভবনে পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা দীপক লাল মৃধার বক্তব্য জানতে গেলেও সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি। এনেক্স ভবন থেকে জানানো হয় তিনি নগর ভবনে আছেন। সে অনুযায়ী নগর ভবনে গিয়েও তার খোঁজ পাওয়া যায়নি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT