কলাপাড়ায় তিন ফসলী জমি অধিগ্রহণের প্রতিবাদে মাথায় কাফনের কাপড় বেধেঁ মানববন্ধন কলাপাড়ায় তিন ফসলী জমি অধিগ্রহণের প্রতিবাদে মাথায় কাফনের কাপড় বেধেঁ মানববন্ধন - ajkerparibartan.com
কলাপাড়ায় তিন ফসলী জমি অধিগ্রহণের প্রতিবাদে মাথায় কাফনের কাপড় বেধেঁ মানববন্ধন

5:34 pm , September 14, 2018

কলাপাড়া প্রতিবেদক ॥ পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় মাথায় কাফনের কাপড় বেঁেধ তিন ফসলী জমি অধিগ্রহনের প্রতিবাদে হাজার হাজার মানুষ মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করেছে। গতকাল শুক্রবার বেলা ১১ টায় উপজেলার ধানখালীর কালু মিয়ার সোমবাড়িয়া বাজারে শিশু, কিশোর, যুবক, বয়বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, নারী-পুরুষসহ সর্ব স্তরের মানুষ এ মানববন্ধন কর্মসূচীতে অংশগ্রহন করেন।

পরে জুম্মাবাদ স্থানীয় হযরত আফাজ উদ্দিন শাহ সূফী জামে মসজিদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারবর্গের জন্য এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাতে দেশ পরিচালনার সফলতা অব্যাহত থাকার ও এ উত্তরোত্তর ধারাবাহিকতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মিলাদ দোয়া দূরুদ পাঠ শেষে মোনাজাত করা হয়। আগামী শুক্রবার ধানখালী ইউনিয়নের সকল মসজিদে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য দোয়া ও মোনাজাতের আয়োজন করছেন ধানখালীবাসী।

মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন মো. বাহারুল আলম সানু উকিল, হাজী মো. কালাই মোল্লা ও মো. ফরিদ তালুকদার প্রমূখ। তাদের দাবী, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ উপেক্ষা করে তিন ফসলী জমি অধিগ্রহন, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে সুপেয় পানির খাল ভরাট এবং তাপ বিদ্যূৎ কেন্দ্র নির্মানের বার কিলোমিটারের মধ্যে পুনরায় ভূমি অধিগ্রহন না করার দাবি জানান। “জীবন দেব জমি দেব না”, “লাশ হব জমি দেব না”, “বাচাঁর মত বাচঁবো”, “রাখে আল্লাহ মারে কে”, এ স্লোগান ওই এলাকাবাসীর।

সরেজমিনে মানববন্ধনে অংশ নেয়া ও মানববন্ধন পরবর্তী সময়ে উপস্থিতিদের সাথে কথা বলে লক্ষ্য করা গেছে, তাদের অশ্রুসিক্ত কান্না ভেজা কন্ঠে উৎকন্ঠার ছাপ। যেন তাদের ছুটির ঘন্টা বেজে গেছে, বিদায় নিতে হবে শত শত বছরের পুরনো ঘর-বাড়ী ছেড়ে অন্যত্র। বাংলাদেশের নাড়ীর টানে বাড়ী ফেরা হবে না যেন এ জীবনে তাদের। চিরতরে পিতৃভূমি ছেড়ে যাবার মন ভাঙ্গা দুঃখের আওয়াজ যেন তাদের তাড়া করছে।

দিনমজুর মো. ইসমাইল হাওলাদার (৭৫) বলেন, জমিতে ধান, ডাইল, তরমুজ, বাদাম, ভূট্টা, আলু, মরিচ চাষ কইরা সংসার চালাই, পোলাপান, নাতি-পুতিগো লেহাপড়া করাই, এহন ‘মোগো বাড়ী-ঘর যদি লয়া যায়, তাহলে আমাগো মরন ছাড়া কোনো উপায় নাই। মোরা যামু কই? মরা যদি লাগে এই জমিতেই মরমু, আরেক জাগায় যামু না, জমি লইয়া গ্যালে বাপ-দাদার কবর রক্ষা করমু ক্যামনে, মোর এহন খাওয়া-লওয়া আর ঘুম হারাম অইয়া গ্যাছে’।

গৃহীনি মোসা. খালেদা বেগম (৭০) বলেন, এতদিন ভালই কাটছে, জমি নিয়া গ্যালে আরেক জায়গায় ঘর-বাড়ি কইরা সংসার করার যোগ্যতা মোগো নাই, সরকার যে টাহা দেবে হ্যাতে আরেক জায়গায় জমি কেনতে পারমু না, পোলাপানগো মানুষ করতে পারমু না’।

পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মো. জিসান জানায়, জীবনে উচ্চ শিক্ষা অর্জন করতে চেয়ে ছিলাম। আমাদের জমি সরকার নিয়ে গেলে আমাদের থাকার জায়গা থাকবে না, লেখা পড়াও শিখতে পারবো না। পথে ঘাটে শ্রমিকের কাজ করতে হবে, আমাদের লেখাপড়া ও নিজেদের মাটিতে বসবাস করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছি।

উপজেলার ধানখালী ইউনিয়নের পাঁচজুনিয়া, ধানখালীর ছৈলাবুনিয়া, নিশানবাড়িয়া ও পার্শ¦বর্তী চম্পাপুর ইউনিয়নের দেবপুর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দাদের দাবী, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা অনুযায়ী তিন ফসলী জমিতে কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের জন্য অধিগ্রহন করা হবে না। তার পরও উপজেলার একমাত্র ধানখালী ও চম্পাপুর ইউনিয়নে তিন ফসলী জমিকে অনাবাদী ও জনশূন্য দেখিয়ে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরকে ভূল বুঝিয়ে একের পর এক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের জন্য জমি অধিগ্রহন প্রক্রিয়া চলছে। কোন মতেই জমি অধিগ্রহন করে তাপ বিদ্যূৎ কেন্দ্র নির্মান করতে দেবে না ওই এলাকার স্থায়ী বাসিন্দারা। ইতিপূর্বে ধানখালী থেকে নর্থ-ওয়েস্ট-১৩২০ মেগাওয়াট, আরপিসিএল-১৩২০ মেগাওয়াট, আশুগঞ্জ-১৩২০ মেগাওয়াট, সিমেন্স-৩৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রায় ৩ হাজার একর ভূমি অধিগ্রহণ করেছে। এখন যদি সেনাকল্যাণ সংস্থা আরো ১এক হাজার একর ভূমি অধিগ্রণ করে তাহলে ধানখালীতে তিন ফসলী জমির কোন চিহ্ন থাকবে না। তাছাড়া একটি ইউনিয়ন থেকে পাঁচ  টি পাওয়ার প্লান্টের জন্য সকল তিন ফসলী জমি অধিগ্রহণ করা খুবই অমানবিক। জমি অধিগ্রহন হলে ওই এলাকার প্রায় তিন হাজার পরিবারের জীবন-যাপন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে এবং প্রায় ১০ হাজার চলমান শিক্ষার্থীর ঝড়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে জানান ওই এলাকাবাসী।

এ বিষয়ে পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. মামুনুর রশিদ জানান, আমার কাছে ওই এলাকার আতাউর রহমান নামে একজন ভদ্রলোক আসছিল। আমাকে তিনি এ ব্যাপারে অবগত করেছেন। তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান করার জন্য সরকারের জন প্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশ রয়েছে। তবে তিন ফসলী জমি অধিগ্রনের আওতায় না আনাই উচিৎ। যতদূর সম্ভব আমাদের চেষ্টা আছে তিন ফসলী জমিতে তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্র না করার।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT