6:57 pm , June 23, 2018
রুবেল খান ॥ বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপির দলীয় প্রার্থী মনোনয়ন প্রশ্নে একই সুরে কথা বলছেন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। ইতিপূর্বে যারা ঢাক-পিটিয়ে নিজেদের মেয়র প্রার্থী ঘোষনা করেছেন তারা সবাই হাই কমান্ডের বরাত দিচ্ছেন। বিএনপি’র যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন সিদ্ধান্তে হাই কমান্ডের সাথে সুর মিলাচ্ছেন তারা। আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রেক্ষাপট ও প্রার্থীতার বিষয়টি বিবেচনা করে মজিবর রহমান সরোয়ারকেই একমাত্র যোগ্য প্রার্থী হিসেবে দেখছেন মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। যে কারনে আসন্ন সিটি নির্বাচনে মজিবর রহমান সরোয়ারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে মতপ্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
সূত্রমতে, বরিশাল সহ তিনটি সিটি’র নির্বাচনকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ট্রাম্প কার্ড হিসেবে দেখছেন অনেকে। বিশেষ করে দীর্ঘ বছর ক্ষমতার বাইরে থাকা দেশের প্রধান রাজনৈতিক বিরোধী দল বিএনপির কাছে জাতীয় নির্বাচনের আগে তিন সিটি’র নির্বাচন পরিস্থিতি ইস্যু হতে পারে। আর তাই সেভাবেই আগাচ্ছে দলটির হাই কমান্ড। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ বরিশালে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহকে নৌকার প্রার্থী মনোনিত করেছে। বিএনপির হাই কমান্ডও যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ারকে ধানের শীষের প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে প্রার্থীর নাম ঘোষণা হয়নি। আসন্ন গাজীপুর সিটি নির্বাচনের পরিস্থিতি এবং পরিবেশের উপর ভিত্তি করে বিএনপি’র প্রার্থী ঘোষনা হবে বলে জানিয়েছেন দলের কেন্দ্রীয় নির্ভরযোগ্য সূত্র। ওই নির্বাচনের পরিস্থিতি’র উপরে পরবর্তী তিন সিটিতে বিএনপি’র অংশগ্রহন করা না করার বিষয়টিও অনেকটা নির্ভর করছে বলে মনে করছেন দলের সংশ্লিষ্টরা। আবার গাজীপুর সিটি নির্বাচন পরিস্থিতি বর্তমান আলোচনায় থাকা বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী’র নামটিও ঘুরে দাড়াতে পারে। তবে পরিস্থিতি যাই হোক হাই কমান্ডের সিদ্ধান্তের সাথে একমত হয়েছেন বরিশালে বিএনপি’র দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে সামিল হওয়া ৭ নেতা। তারা দলের মনোনয়ন সংগ্রহ পরবর্তী জমা এবং স্থায়ী কমিটির কাছে সাক্ষাত দিলেও দলের বিপক্ষে গিয়ে নির্বাচন করবেন না বলে সেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশী ওইসব নেতাদের সাথে আলাপকালে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন তারা। তাই ইতিপূর্বে বরিশালে বিএনপি’র বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার গুঞ্জন থাকলেও বর্তমানে তা কেটে গেছে বলে মনে করছেন দলের নেতা-কর্মীরা।
দলের মনোনয়ন প্রসঙ্গে বিএনপি’র দক্ষিণ জেলার সভাপতি আলহাজ্ব এবায়েদুল হক চাঁন বলেন, আমি মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার করতে দলের মনোনয়নের আশায় মনোনয়ন ফরম জমা এবং সাক্ষাত দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত দল থেকে প্রার্থী হিসেবে কাউকে ঘোষনা করেনি। যে কারনে এখন পর্যন্ত আমি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে দলের হাই কমান্ডের উপর ভরসা রয়েছে। তারা কোন ভুল সিদ্ধান্ত নিবেন না। দল যদি আমার বাইরে অন্য কাউকে সমর্থন দেয় তবে আমি তাকেই সমর্থন দিবো। কিন্তু যতক্ষণ পর্যন্ত প্রার্থী ঘোষনা না হবে ততক্ষন পর্যন্ত কোন ব্যক্তিকে সমর্থন দিবো না।
বরিশাল সিটি’র বর্তমান মেয়র ও বিএনপি’র সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা মো. আহসান হাবিব কামাল বলেন, পূর্বে দলের মনোনয়ন পেয়ে আমি মেয়র নির্বাচিত হয়েছি। আশা করি আমি মেয়র হিসেবে সফল হয়েছি। তাই পুনরায় দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী। তবে এখনো কোন সিদ্ধান্ত দেয়নি। দল থেকে যাকে ধানের শীষের প্রার্থী করবে দলের স্বার্থে আমি তার পক্ষেই কাজ করবো।
বিএনপি’র বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাড. বিলকিছ আক্তার জাহান শিরিন জানান, আমি মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনের মনোনয়ন ফরম কিনেছি। পাশাপাশি নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেতে দলের মনোনয়ন ফরম কিনে তা জমা দিয়েছি। স্থায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দ আমার সাক্ষাতকারও নিয়েছে। তাই প্রার্থী ঘোষনার আগ পর্যন্ত আমি মনোনয়ন প্রত্যাশী।
তিনি বলেন, আমরা চেয়েছি যারা আওয়ামী লীগের সাথে আতাত করে চলে দল যাতে তাদের মনোনয়ন না দেয়। তৃনমুলের এমন দাবীর পরিপ্রেক্ষিতে আমি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছি। তবে মজিবর রহমান সরোয়ার সিনিয়র নেতা। তিনি কেন্দ্রের যুগ্ম মহাসচিব। দল থেকে তাকে মেয়র পদে মনোনয়ন দিলে সে ক্ষেত্রে দলের ভুল হবে না। কেননা তিনি আন্দোলন সংগ্রামে দলের সাথেই ছিলেন। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমি বা আমরা কাউকে সমর্থন দেইনি। দল থেকে যাকে নমিনেশন দিবে তাকেই আমরা সমর্থন জানাবো। সে ক্ষেত্রে মনোনিত প্রার্থীকে অবশ্যই বিএনপি’র প্রকৃত কর্মী হতে হবে।
অপরদিকে মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন দৌড়ে এগিয়ে থাকা মজিবর রহমান সরোয়ার বলেছেন, সিটি নির্বাচনের কোন ইচ্ছা আমার নেই। হাই কমান্ডারে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দল আমাকে মেয়র প্রার্থী করেছে। বিএনপি’র মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আমাকে ডেকে নিয়েছেন। তার উপস্থিতিতে স্থায়ী কমিটি আমার সাক্ষাত গ্রহন করেছে। আমি তাদের কাছেও নির্বাচনে অংগ্রহনে অনিচ্ছার কথা জানিয়েছি। তার পরেও দল থেকে যদি আমায় প্রার্থী করা হয় সে ক্ষেত্রে দলের হাই কমান্ডের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবো।
এদিকে নির্বাচনে দলের প্রার্থী হওয়ার বিষয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সবাই এক সুরে কথা বললেও তাদের মধ্যে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে প্রশ্ন ভর করেছে। বর্তমান সরকারের অধীনে কোন নির্বাচন সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হবে না বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির নেতারা। তবে অন্য সিটি’র মত বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন হতে দেয়া যাবে না বলেও হুশিয়ারী দিয়েছেন তারা। বিএনপি থেকে যাকেই মনোনয়ন দেয়া হোক না কেন জাল ভোট এবং কারচুপি ছাড়া সুষ্ঠু ভোট করতে যতটা ঐক্যবদ্ধ হওয়া দরকার বিএনপি তা করবে বলেও জানিয়েছেন উল্লেখিত নেতারা।