বর্ষার আগমনে বেড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্যুৎ বিভ্রাট বর্ষার আগমনে বেড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্যুৎ বিভ্রাট - ajkerparibartan.com
বর্ষার আগমনে বেড়েছে দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্যুৎ বিভ্রাট

6:53 pm , June 10, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বর্ষা নিয়ে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু আগমনের শুরুতেই নগরীসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা লন্ডভন্ড হয়ে যায় শনিবার রাতে। টানা এক সপ্তাহের দুঃসহ তাপদহের পরে শনিবার মাগরিবের নামাজের পরেই নগরী সহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশীরভাগ এলাকায় ২৫ থেকে ৪৫ কিলোমিটার বেগের দমকা আর ঝড়ো হাওয়ার সাথে বজ্রবৃষ্টি শুরু হয় দক্ষিণের জনপদে।
কিন্তু স্বস্তির এ বৃষ্টি দূর্ভোগ বাড়ায় বিদ্যুৎ বিভ্রাটে। খোদ বরিশাল মহানগরী থেকে দক্ষিণাঞ্চলের অনেক এলাকাই মধ্যরাত পর্যন্ত ছিল অন্ধকারে নিমজ্জিত। রূপাতলী-কাশিপুর ৩৩ কেভি সঞ্চালন লাইনে ত্রুটির কারণে বরিশাল মহানগরীর একটি বড় এলাকার মসজিদগুলোতে মুসুল¬ীগন শনিবার রাতে অন্ধকারেই তারাবীর নামাজ আদায় করেন। কোন কোন এলাকায় মধ্য রাতের আগে-পরে বিদ্যুৎ আসলেও গতকালও অনেক এলাকা ছিল বিদ্যুৎ বিহীন। গতকাল সকাল থেকে খোদ শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল সহ নগরীর বেশ কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ ছিল না ঘন্টার পর ঘন্টা।
বিদ্যুৎ নিয়ে বরিশাল মহানগরী সহ দক্ষিণাঞ্চবাসীর দুঃখ আর দূর্ভোগ দীর্ঘদিনের। জাতীয় পর্যায়ে বিদ্যুতের ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত সমগ্র দক্ষিণাঞ্চল। পাশাপাশি সংকট না থাকলেও বিতরণ ও সরবরাহ ব্যবস্থার লাগাতার ত্রুটির কারনেও এ অঞ্চলের মানুষ নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বছরের পর বছর।
জরাজীর্ণ বিদ্যুৎ বিতরন ব্যবস্থা এ অঞ্চলের সাধারন মানুষের দূর্ভোগকে ইতোমধ্যে সব বর্ণনার বাইরে নিয়ে গেছে। বরিশাল মহানগরীতে গ্রীড সাব-স্টেশন থেকে বিদ্যুৎ নিয়ে ওজোপাডিকো’র ৩৩ কেভি লাইন ও ৩টি ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশনে সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ঐসব ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশনগুলো থেকে মহানগরী ছাড়াও ঝালকাঠী শহর ও সন্নিহিত এলাকায় .০৪ কেভি বিতরন লাইনের মাধ্যমে গ্রাহক পর্যায়ে সরবরাহ করা হয়। কিন্তু নগরীর রূপাতলী মূল ৩৩ কেভি সাব-স্টেশন ছাড়াও কাশীপুর ও পলাশপুর ৩৩/১১ কেভি সাব-স্টেশন দুটির পাওয়ার ট্রান্সফর্মারগুলো ওভারলোডেড হয়ে যাওয়ায় ঘাটতি না থাকলেও চাহিদা অনুযায়ী বিদ্যুৎ দিতে পারছে না ওজোপাডিকো। ফলে এ রমজানেও কাশিপুর সাব-স্টেশনে সংযূক্ত ৩টি ফিডারে ইফতারী থেকে সেহেরী পর্যন্তই লোডশেডিং নির্ধারিত হয়ে গেছে। এখানে ৩০ বছরের পুরনো ১০ এমভিএ দুটি পাওয়ার ট্রান্সফর্মারের মাধ্যমে বর্তমানে কোন অবস্থাতেই ১৮ মেগাওয়াটের বেশী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছেনা। অথচ চাহিদা প্রায় ২৫ মেগাওয়াট। উপরন্তু তিন দশকের পুরনো এসব ট্রান্সফর্মার-এর মাধ্যমে বাড়তি চাপ দূরের কথা ক্ষমতানুযায়ীও বিদ্যুৎ বিতরন করা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় আছেন কর্তৃপক্ষ।
প্রায় একই পরিস্থিতি নগরীর পলাশপুর সাব-স্টেশনেও। সেখানের ১০ এমভিএ দুটি পাওয়ার ট্রান্সফর্মারের মাধ্যমে ১৮-১৯ মেগাওয়াটের বেশী বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব না হলেও চাহিদা প্রায় ২২ মেগাওয়াট। ফলে সান্ধ্য পিক আওয়ার থেকে মধ্যরাত পর্যন্তই বিভিন্ন ফিডারে লোডশেড করতে হচ্ছে। দুঃসহ দূর্ভোগেই তারাবীর নামাজ আদায় করতে হচ্ছে রোজাদার মুসুল্ল¬ীদের। ওভার লোডেড হয়ে গতবছর পলাশপুর সাব-স্টেশনের ১০ এমভিএ’র একটি ট্রান্সফর্মার পুড়ে গেলে মাস দুয়েকের চেষ্টায় সেখানে ১টি নতুন ট্রান্সফর্মার স্থাপন করা হলেও পুরনো ট্রান্সফর্মারটি আর মেরামত করা হয়নি।
রূপাতলী মূল ৩৩ কেভি সাব-স্টেশনেও ৩০ বছরের পুরনো ১০ এমভিএ দুটি ট্রান্সফর্মার দিয়ে কাজ চলছে। এমনকি মৃদু তাপপ্রবাহের সময় দিনের বেলাতেও এসব সাব-স্টেশনের পাওয়ার ট্রান্সফর্মারগুলো ওভার লোডেড হয়ে যাচ্ছে। ফলে অনেক সময় দিনের বেলাতেও লোডশেড অবধারিত হয়ে পড়ছে বরিশাল মহানগরীতে। অথচ বিদ্যুতের কোন ঘাটতি নেই।
তবে এসব বিষয়ে ওজোপাডিকো’র প্রধান প্রকৌশলী ও ভারপ্রাপ্ত পরিচালক-কারিগরি’র সাথে আলাপ করা হলে তিনি জানান, ‘আমরা বরিশালে একটি অতি স্পর্শকাতর-অন্তবর্তিকালীন সময় পার করছি। আগামী মাসের মধ্যেই রূপাতলী সাব-স্টেশনে ৪০ এমভি’এর দুটি নতুন ট্রান্সফর্মার চালু হলে কাশিপুর ও পলাশপুরের কিছু ফিডারের লোড ভাগ করে দেয়া সম্ভব হবে। ফলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে। পাশাপাশি কাশীপুর ও পলাশপুর সাব-স্টেশন দুটিতে ২০ এমভিএ’র নতুন পাওয়ার ট্রান্সফর্মার সরবরাহ ও সংযোজনে সরবারকারীকে কার্যাদেশ দেয়ার কথা জানান তিনি। চলতি বছরের শেষভাগেই এসব ট্রান্সফর্মার চালু হলে পরিস্থিতির আশাব্যঞ্জক উন্নতি ঘটবে বলেও জানান তিনি।
তবে সাব-স্টেশন আর ট্রান্সফর্মারের সমস্যার সমাধান হলেও বিতরণ ব্যবস্থার ত্রুটি দূর হবে কবে, তা বলতে পারছেন না কেউ। আকাশে মেঘ জমলে আর সামান্য বাতাসেই এ নগরীতে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। কাশিপুর ও পলাশপুর সাব-স্টেশনমুখী দুটি ৩৩ কেভি লাইন ছাড়াও ১১ কেভি এবং .০৪ কেভি বিতরন লাইন ও ট্রান্সফর্মার সহ এর সাথে সংশ্লিষ্ট বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসমূহের জরাজীর্ণ অবস্থা নগরীর প্রায় ১ লাখ গ্রাহককে চরম দূর্ভোগে রেখেছে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT