4:01 pm , April 27, 2024
বিশেষ প্রতিবেদক ॥ বরিশালে আবাদ লক্ষ্য থেকে কিছুটা পিছিয়ে থেকেও গমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করেছে। যা গত কয়েকটি বছরের চেয়ে কিছুটা আশাব্যঞ্জক বলে মনে করছেন কৃষিবীদরা। তবে ভাটি এলাকার বিলম্বিত আবাদের এ অঞ্চলে গম একটি নতুন ফসল হলেও আধুনিক বীজ এবং আবাদ প্রযুক্তি কৃষকের কাছে যথাযথভাবে না পৌঁছায় এর গড় ফলন এখনো হেক্টর প্রতি ৩.২৩ টনের মত। যা জাতীয় পর্যায়ের ৩.৮০ টনের কিছুটা পিছিয়ে। খাদ্য বিভাগ ৩৪ টাকা কেজি দরে গম কিনতে শুরু করছে।
তবে সদ্যসমাপ্ত রবির আবাদ মৌসুমে বরিশাল অঞ্চলে গমের আবাদ আগের বছরের ৫৬ হাজার ৯৯৯ হেক্টরের চেয়ে ১ হাজার ১৫৯ হেক্টর অতিরিক্ত, ৫৮ হাজার ১৫৮ হেক্টরেপৌঁছলেও লক্ষ্যমাত্রা ৫৮ হাজার ২২২ হেক্টরের চেয়ে ৬৪ হেক্টর পেছনে ছিল। কিন্তু উৎপাদন ১ লাখ ৯২ হাজার ৭৩২ টনের লক্ষ্য অতিক্রম করে ১ লাখ ৯৩ হাজার ৪৬৪ টনে পৌঁছেছে। যাকে মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদরা গত কয়েক বছরের ব্লাষ্ট সংক্রমনজনিত বিপর্যয়ের পরে আশাব্যঞ্জক বলেই মনে করছেন।
সদ্য বিদায়ী রবি মৌসুমে দেশে ৩ লাখ ২৩ হাজার হেক্টরে আবাদ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে প্রকৃত আবাদ ছিল ৯৪%, ৩.১৩ লাখ হেক্টরে। আবাদ ৬% পিছিয়ে থাকায় ১২.২৮ লাখ টন উৎপাদন লক্ষ্য থেকে ৩১ হাজার টন কম, ১১.৯৭ লাখ টনে স্থির হয়। যা গত বছরের চেয়ে ৭ হাজার টন কম। তবে বরিশাল অঞ্চলে দানাদার এ খাদ্য ফসলের উৎপাদন আশার আলো দেখাচ্ছে।
সদ্য সমাপ্ত রবির আবাদ মৌসুমে দেশে হেক্টর প্রতি গমের উৎপাদন গত বছরের চেয়ে কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর-ডিএই সূত্রে জানা গেছে। ফলে অপ্রচলিত এ দানাদার খাদ্য ফসলের ভবিষ্যত অনেক উজ্জল বলেও মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদরা মনে করছেন।
সারা দেশের মত বরিশাল কৃষি অঞ্চলেও গম আবাদের ইতিহাস খুব বেশী দিনের না হলেও ‘দানাদার খাদ্য ফসল’ হিসেবে তা ইতোমধ্যেই তৃতীয় শীর্ষস্থান দখল করেছে। নদ-নদীবহুল বরিশাল অঞ্চলের মাটি গম আবাদের জন্য যথেষ্ট উপযোগী। গম উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান সারা বিশে^ প্রথম ২০টি দেশের মধ্যে।
আমাদের ‘কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট-বারি’ ও ‘গম গবেষনা ইনস্টিটিউট’এর বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে উচ্চ ফলনশীল ও পরিবেশ উপযোগী একাধিক গম-এর উন্নত জাত উদ্ভাবন করেছেন। এমনকি ছত্রাকবাহী ‘ব্লাষ্ট’ প্রতিরোধী জাতের গম বীজ এবং আমাদের দেশের মত কম শীত প্রধান অঞ্চলের জন্য ‘শতাব্দী’ নামের গম বীজ উদ্ভাবন করেছেন বারি’র বিজ্ঞানীরা। বারি উদ্ভাবিত গম বীজের মধ্যে ‘কাঞ্চন, আকবর, অঘ্রানী, শতাব্দী ছাড়াও সৌরভ-বারি-১৯ ও গৌরব-বারি-২০’ নামের উচ্চ ফলনশীল গম বীজও উদ্ভাবন করা হয়েছে। এসব বীজ থেকে হেক্টর প্রতি সাড়ে ৪ টন পর্যন্ত গম উৎপাদন সম্ভব বলে ‘বারি’র দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। এছাড়া গম গবেষনা ইনস্টিটিউট-এর বিজ্ঞানীরা আরো একাধিক উচ্চ ফলনশীল গম বীজ উদ্ভাবন করেছেন।
২০১৭ সালে দেশের ৫টি জেলায় ছত্রাকবাহী রোগ ‘ব্লাষ্ট’এর সংক্রমনের পরে সরকার গমের আবাদ ও উৎপাদন কিছুটা নিরুৎসাহিত করে। ফলে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় এ দানাদার খাদ্য ফসলের ভবিষ্যত অনিশ্চয়তায় পড়ে। এমনকি ব্যয় সাশ্রয়ী এ খাদ্য ফসলের ভাল দাম পেয়ে কৃষকরা আশার আলো দেখলেও তা নিয়ে নতুন শংকা তৈরী করে ছত্রাকবাহী রোগ ‘ব্লাষ্ট’।
আশার কথা, ২০১৭ সালের পরে বরিশাল কৃষি অঞ্চল সহ দেশের কোথাও ব্লাষ্ট-এর সংক্রমন না থাকায় কৃষি যোদ্ধারা আবার যথেষ্ট আশাবাদী হয়ে গম আবাদে মনোনিবেশ করছেন বলে ডিএই’র দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে। ফলে গত বছর রবি মৌসুমে সারা দেশের মত বরিশাল কৃষি অঞ্চলেও গম আবাদ ও উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। তবে দেশে এখনো গমের মোট আবাদ ৫ লাখ হেক্টরে উন্নীত করতে না পারাকে হতাশাব্যঞ্জক বলে মনে করছেন কৃষিবীদরা।
এ লক্ষ্যে কৃষক পর্যায়ে উন্নত বীজ ও আবাদ প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে গমের গড় উৎপাদন হেক্টর প্রতি ন্যূনতম ৪ টনে উন্নীত করার লক্ষে ‘নিবিড় কর্মসূচী’ গ্রহনের তাগিদ দিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদরা। পাশাপাশি আবাদ অন্তত ৫ লাখ হেক্টরে উন্নীত করে দেশে গমের মোট উৎপাদনও ২০ লাখ টনে নিয়ে যাওয়া খুব কঠিন নয় বলেও মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদরা।
এক্ষেত্রে বরিশাল কৃষি অঞ্চলেও আবাদ অন্তত দ্বিগুন করার সুযোগকে কাজে লাগাতে পরামর্শ দিয়েছেন কৃষিবীদরা। তাদের মতে, এখনো গমের উচ্চ ফলনশীল ও উন্নত বীজ সহ এর আবাদ প্রযুক্তি মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কাছে যথাযথভাবে পৌছছে না। এ বিষয়গুলো নিশ্চিত করার পাশাপাশি ন্যায্য দাম পেলে বরিশালের কৃষকরা গম আবাদ ও উৎপাদনে আরো আগ্রহী হবে বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদরা। এক্ষেত্রে বরিশাল অঞ্চলে রবি মৌসুমে অনাবাদী বিপুল পরিমান জমির একটি অংশকে গম আবাদের আওতায় আনার সুযোগকে কাজে লাগানোরও তাগিদ দিয়েছেন কৃষিবীদরা।