3:19 pm , October 30, 2021

পরিবর্তন ডেস্ক ॥ করোনার কারণে এক বছর ধরে স্বজনদের দেখা পাননি বহুল আলোচিত বরগুনার রিফাত শরীফ হত্যা মামলার ফাঁসির দ-প্রাপ্ত আসামি ও নিহত রিফাতের স্ত্রী আশেয়া সিদ্দিকা মিন্নি।গত এক বছর ধরে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকা মিন্নি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন বলে জানিয়েছেন তারা বাবা মোজ্জাম্মেল হোসেন কিশোর। গতকাল শনিবার দুপুরে এমনটাই দাবি করেন তিনি।যদিও এ বিষয়ে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার হালিমা খাতুন এবং জেলার শাহ শরীফের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও এ বিষয়ে তাদের মন্তব্য পাওয়া যায়নি।এর আগেও গত ২৫ জুন নিজ বাড়িতে এই প্রতিবেদকের কাছে কারান্তরীণ মিন্নির অসুস্থতার কথা জানিয়েছিলেন মোজাম্মেল হোসেন কিশোর।নিজের স্বামীকে খুনের পরিকল্পনার দায়ে গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নিকে ফাঁসির আদেশ দেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত।এরপর ওই বছরের ২৯ অক্টোবর বরগুনা জেলা কারাগার থেকে মিন্নিকে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়।করোনা কারণে কারাবন্দীদের সঙ্গে স্বজনদের দেখা-সাক্ষাৎ বন্ধ থাকায় কারাবিধি অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহে একবার পরিবারে সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলার সুযোগ পান মিন্নি।মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘গত বুধবার মোবাইল ফোনে মিন্নি ওর অসুস্থতার কথা আমাদের জানিয়েছে।মিন্নির নি¤œ রক্তচাপ, ঘাড়ে ব্যথা এবং দাঁতে ব্যথা।এসব অসুস্থতার জন্য কারা কর্তৃপক্ষ মিন্নিকে দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা দিয়ে আসছে।কিন্তু তাতে মিন্নি কোন উন্নতি না হয়ে বরং অবনতি হচ্ছে।তাই মিন্নির উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন।’তিনি আরো বলেন, ‘মিন্নির উন্নত চিকিৎসার জন্য চারমাস আগে সংশ্লিষ্ট দফতরে আবেদন কারা হয়েছিল।কিন্তু আজ পর্যন্ত সেই আবেদনের কোন সুরাহা হয়নি।তাই মিন্নির উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রধান বিচারপতির কাছে আবেদন করা হয়েছে।তবে এ বিষয়েও এখন পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।’এ বিষয়ে গাজীপুরের কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার শাহ শরীফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মিন্নির বিষয়ে জানতে কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার হালিমা খাতুনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে অনুরোধ করেন।পরে সিনিয়র জেল সুপার হালিমা খাতুনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।এরপর তার ফোনে ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও তিনি তার উত্তর দেননি।উচ্চ আদালতে বিচারাধীন রিফাত হত্যা মামলার বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের চার অক্টোবর আলোচিত এ মামলার ডেথ রেফারেন্স ও নথি হাইকোর্টে এলেও তা সংশ্লিষ্ট দফতরেই পড়ে আছে।আলোচিত এ মামলার পেপারবুক তৈরির উদ্যোগ এখনও গ্রহণ করা হয়নি।এ বিষয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম মুনীর সাংবাদিকদের বলেন, ‘পেপারবুক প্রস্তুত করে বেঞ্চ নির্ধারণ করে দিলেই দ্রুত এ মামলার শুনানির উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।’ আলোচিত ও চাঞ্চল্যকর মামলার আপিল দ্রুত নিষ্পত্তিতে রাষ্ট্রপক্ষ সদা তৎপর বলেও জানান তিনি।২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনের সড়কে রিফাত শরীফকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করে নয়ন বন্ডের গড়া কিশোর গ্যাং ‘বন্ড বাহিনী’।এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি হয়।ওই বছরের ২ জুলাই মামলার এ ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত নয়ন বন্ড পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে মারা যান।এরপর ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর রিফাত হত্যা মামলায় ২৪ জনকে আসামি করে দুটি ভাগে বিভক্ত করে আদালতে অভিযোপত্র দাখিল করে পুলিশ। এর মধ্যে ১০ জন প্রাপ্তবয়স্ক এবং ১৪ জনকে অপ্রাপ্তবয়স্ক অভিযুক্ত করা হয়।এ মামলায় ফাঁসির দ-প্রাপ্তরা হলেন- মো. রাকিবুল হাসান ওরফে রিফাত ফরাজী (২৪), আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন (২২), মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত (২০), রেজোয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয় (২৩), মো. হাসান (২০) এবং আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি (২০)।