সংস্কারের অভাবে ধ্বংস হচ্ছে কুয়াকাটার পালতোলা সেই নৌকাটি সংস্কারের অভাবে ধ্বংস হচ্ছে কুয়াকাটার পালতোলা সেই নৌকাটি - ajkerparibartan.com
সংস্কারের অভাবে ধ্বংস হচ্ছে কুয়াকাটার পালতোলা সেই নৌকাটি

3:25 pm , September 9, 2019

এ.এম মিজানুর রহমান বুলেট,কুয়াকাটা ॥ সংস্কারের অভাবে হারিয়ে যাচ্ছে আদিবাসী রাখাইনদের আড়াইশ বছরেরও বেশি পুরানো ঐতিহ্যবাহী পালতোলা নৌকা। প্রতœতাত্ত্বিক নিদর্শন স্বরুপ নৌকাটি সংরক্ষনের উদ্যোগ নেয় খুলনা প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর। নৌকাটি নতুন করে পুর্বের আদলে তৈরী করে দর্শনার্থীদের জন্য কুয়াকাটা কেরানী পাড়ার বৌদ্ধ বিহারের পাশে স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। যাদুঘর নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হয়। জমি অধিগ্রহন করে টিনসেট একচালা একটি ঘর নির্মান করে ২০১৩ সালের ২১ আগস্ট প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর আনুষ্ঠানিক ভাবে উম্মুক্ত করে দেয় দর্শনার্থীদের জন্য। এরপর আর কোন তদারকি নেই সংশ্লিষ্ঠ কর্তৃপক্ষের। টিনের ওই একচালা ঘরটি ঝড় বাতাসে ভেঙ্গে পরে যাওয়ায় গত দুই বছর ধরে বৃষ্টিতে ভিজে ও রৌদ্রের তাপে নস্ট হয়ে গেছে নৌকাটি। আস্তে আস্তে নৌকাটির অংশ বিশেষ খুলে গিয়ে আদিবাসিদের আদি স্মৃতি বিজড়িত এই কথিত সোনার পালতোলা নৌকা।
কুয়াকাটায় আগত পর্যটকদের কাছে আদি নিদর্শন হিসেবে অন্যতম পালতোলা এই নৌকাটি। রাখাইনদের আদি নিদর্শন ও ইতিহাস ঐতিহ্যের স্বাক্ষ্য বহনকারী নৌকাটির বেহাল দশা দেখে পর্যটকরা হতাশ হয়েছেন। প্রতœতত্ত্ব বিভাগ দ্রুত এ যাদুঘরটি সংস্কারের এর ব্যাবস্থা না নিলে অচিরেই কালের স্বাক্ষী পালতোলা জাহাজটি হারিয়ে যাবে বলে এমনটাই মত পর্যটক ও স্থানীয়দের।
জানা যায়,কুয়াকাটার ইতিহাস ঐতিহ্য ও রাখাইনদের কালের স্বাক্ষী পাল তোলা এই নৌকায় করে প্রায় পৌন তিন’শ বছর আগে মায়ানমারের তৎকালীণ আরাকান রাজ্য থেকে পালিয়ে এসে পটুয়াখালীর কুয়াকাটাসহ উপকূলের বিভিন্ন স্থানে বসতি স্থাপণ করেন রাখাইনরা। রাখাইনদের সেই পালতোলা জাহাজ বা নৌকাটি আজ ধংসের মুখে। রাখাইনদের ইতিহাস সুত্রে আরো জানা যায়, ওই সময় নৌকাটি সমুদ্রের সাথে সংযুক্ত ছোট খালের মধ্যে ফেলে রাখা হয়। পরবর্তীতে জলোচ্ছাস ও বন্যায় নৌকাটি তলিয়ে গিয়ে আস্তে আস্তে পলিমাটির নিচে হারিয়ে যায়। কালের বির্বতনে আড়াইশ বছর পরে আশির দশকে পালতোলা নৌকাটি গরু মহিষের পানির চাহিদা মিটাতে কুয়া খুড়ঁতে গিয়ে রাখালদের নজরে আসে। তখন স্থানীয়রা নৌকাটি উত্তোলনের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। কথিত রয়েছে নৌকাটি তুলতে গিয়ে এক ব্যক্তি মারাও যান। নৌকাটি উদ্ধার নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে ভৌতিক ও কাল্পনিক নানা কল্প কাহিনীর গল্প শোনা গেছে। নৌকাটি আবার মাটির নিচে চাপা পরে যায়।
ভূমি ক্ষয়ে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের বালু মাটি সরে গিয়ে ২০১০ সালের শেষের দিকে ৭২ ফুট দৈর্ঘ্য ২৪ ফুট প্রস্ত বিশাল এই পালতোলা নৌকাটি আবার দৃশ্যমান হয় জনসম্মুখে। ওই সময়ে নৌকাটি নিয়ে বিভিন্ন গনমাধ্যমে লেখালেখির পর প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের নজরে আসে। ২০১৩ সালের ২৭ জানুয়ারী সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের অর্থয়ানে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তর নৌকাটি মাটি থেকে উদ্ধারের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রায় কোটি টাকারও বেশি খরচ করে সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় নৌকাটি উদ্ধার করে কুয়াকাটা শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার সংলগ্ন টিন সেট একচালা একটি স্থাপণা তৈরী করে সেখানে রাখা হয়। কুয়াকাটা যাদুঘর নামে নাম করণ করা হয়। কুয়াকাটায় আগত পর্যটকরা এক নজর দেখার জন্য প্রতিদিন ভীড় জমায় সেখানে। বৃষ্টির পানি ও রৌদ্রে পুড়ে নৌকাটির কাঠ খুলে গিয়ে এখন ধংস হতে চলছে।
খুলনা বিভাগীয় প্রতœতত্ব অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, আড়াইশ বছর পুর্বে নৌকাটি যে আদলে গড়ে তোলা হয়েছিল গভেষণা করে নতুন করে ওই আদলে গড়ে তোলার জন্য গভেষক দল কাজ করছেন। কবে নাগাত গভেষনা শেষে আবার নৌকাটি নির্মাণ কাজ শুরু করবেন তা এখনও অধরাই রয়ে গেছে।
কালের স্বাক্ষী এই নৌকাটির এমন বেহাল দশায় রাখাইনরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কুয়াকাটা কেরানীপাড়ার শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহারের ঠাকুর (বানতে) জ্ঞানেত্র মহাথের বলেন, আদি পূর্ব পুরুষের এই নৌকাটি নিয়ে অনেক স্মুতি রয়েছে ও ইতিহাস রয়েছে আমদের রাখাইদের। নৌকাটি সংরক্ষনের জন্য কোটি টাকার জমি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে মন্দির কমিটির পক্ষ্য থেকে। তিনি বলেন এ নিয়ে জেলা প্রশাসনের সাথে সংস্কার বিষয়ে কথা বলবেন।
এ নিয়ে কথা হয় কুয়াকাটা ট্যুর অপারেটর এসোশিয়েশন সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার’র সাথে। তিনি বলেন, কুয়াকাটার আদিবাসী রাখাইনদের ইতিহাস ঐতিহ্যে ও সংস্কৃতির স্বাক্ষী বহনকারী এই নৌকাটি অযতেœ অবহেলায় পরে রয়েছে। যা মোটেই কাম্য নয়। পর্যটকদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপুর্ণ নিদর্শন। দ্রুত এটি সংরক্ষন করা প্রয়োজন হয়ে পরেছে। ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তোফায়েল আহমে¥দ তপু বলেন, নৌকাটির উপরে টিনসেট না থাকায় রৌদ্রে শুকায় ও বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে কুয়াকাটার পুরানো স্মৃতি। কর্তৃপক্ষের নজর না থাকায় এই দৃশ্য দেখতে হয় আমাদের। আমি তাদের আবারও আবেদন জানাই এই কাজটি দ্রুত করার জন্য।
বরিশাল ও খুলনার দ্বায়িত্বে থাকা প্রতœতত্ত্ব বিভাগের আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতা বলেন, কুয়াকাটার পালতোলা জাহাজটির সংস্কার এবং যাদুঘরের ভবন নির্মাণের কাজ কিছু দিনের মধ্যেই শুরু হবে আশা করছি। তবে র্নিদিষ্ট তারিখ এখনও বলা যাবে না।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT