2:54 pm , June 13, 2019
পরিবর্তন ডেস্ক ॥ ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট উপস্থাপন করছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গতকাল বৃহস্পতিবার স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের এই বাজেট প্রস্তাব উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে মন্ত্রিসভার অনুমোদনের পর ওই প্রস্তাবে সই করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। নতুন অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত এই ব্যয় বিদায়ী অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের ১৮ শতাংশ বেশি। এতে আগামী ২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির হার ৮ দশমিক ২ শতাংশ হবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছে। চলতি রাজস্ব বছরের প্রত্যাশিত প্রবৃদ্ধির ওপর নির্ভর করেই এমনটা ধরা হয়েছে। বাজেটে উন্নয়ন ব্যয় ধরা হচ্ছে দুই লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। এবারের বাজেট বক্তব্যের আকার আর গতানুগতিক থাকছে না। কমিয়ে আনা হয়েছে বাজেট বক্তৃতার আকার। নতুন বাজেটের সম্ভাব্য আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। যা মোট দেশজ উত্পাদনের (জিডিপি) ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি বাজেটের আকার ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। সে হিসাবে নতুন বাজেটের আকার বাড়ছে ১২ দশমিক ৬ শতাংশের বেশি। বাজেটে ঘাটতির পরিমাণ ধরা হয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৫০ কোটি টাকা। যা চলতি অর্থবছরের বাজেট থেকে ২০ হাজার ৬৫৭ কোটি টাকা বেশি। আসন্ন বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরা হচ্ছে ৮.২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে ৮.১৩ শতাংশ অর্জিত হবে বলে ইতোমধ্যে খসড়া হিসাব করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। এছাড়া নতুন বাজেটে মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য ৫.৫ শতাংশে আটকে রাখার পরিকল্পনা থাকছে। বাজেটে যেসব খাতে সংস্কারের প্রস্তাব করা হচ্ছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ব্যাংকিং খাত, পুঁজিবাজার, সঞ্চয়পত্র ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ থাকছে। এছাড়া প্রথমবারের মতো উদ্যোগ থাকবে বেকারদের ‘স্ট্যার্ট আপ ফান্ড’ নামে একটি তহবিলের। ১০০ কোটি টাকার এ তহবিল থেকে স্বল্পসুদে সহজশর্তে ঋণ নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে পারবেন নতুন উদ্যোক্তারা। এর বাইরে নতুন উদ্যোগের মধ্যে থাকছে প্রবাসীদের জন্য বীমা সুবিধা। বাজেটে রাজস্ব আদায়ে বড় আকারের ব্যয় মেটাতে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এর লক্ষ্য দেওয়া হচ্ছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। বাকিটা এনবিআর বহির্ভূত উৎস থেকে আদায় করার লক্ষ্য থাকছে। সবমিলিয়ে অনুদানসহ আয় হবে ৩ লাখ ৮১ হাজার ৯৭৮ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ১৩ দশমিক ১ শতাংশের সমান। আগামী অর্থবছরের বাজেট সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ (অনুদানসহ) দাঁড়াবে ১ লাখ ৪১ হাজার ২১২ কোটি টাকা। অনুদান ছাড়া এ ঘাটতির পরিমাণ হবে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। তবে অন্য বছরের মতো জিডিপির ৫ শতাংশের মধ্যেই রাখা হয়েছে ঘাটতির আকার। এই ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক উত্স থেকে ৬৩ হাজার ৮৪৮ কোটি টাকা সংগ্রহের লক্ষ্য রয়েছে। এছাড়া অভ্যন্তরীণ উত্স থেকে ৭৭ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হবে। এর মধ্যে ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে ৪৭ হাজার ৩৬৪ কোটি টাকা এবং সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়া হবে ২৭ হাজার কোটি টাকা। অর্থমন্ত্রীর আশাবাদ, তার প্রথম বাজেট হবে ১৬ কোটি মানুষের স্বপ্ন পূরণের অঙ্গীকার। শুধু এক বছরের জন্য নয়, সুদূরপ্রসারী লক্ষ্য নিয়ে বিশেষ করে ২০৪১ সালকে টার্গেট করে তৈরি করা হয়েছে এবারের বাজেট। সেটি কতোটা বাস্তবায়নযোগ্য হবে সেটি দেখতে অপেক্ষা করতে হবে আরেকটি বছর।