3:15 pm , April 7, 2019

খান রুবেল ॥ কথায় আছে ‘বাইরে ফিটফাট, ভিতরে সদর ঘাট’। কথার মত করেই চলছে নগরীর মিষ্টান্নের দোকানগুলো। বাইরে সাজানো-গুছানো থাকলেও ভেতরে ভেতরে মিষ্টান্ন তৈরীতে চলছে ভেজালের মহৎসব। স্বল্প পুঁজিতে বেশি লাভের আশায় স্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিধি না মেনেই তৈরী হচ্ছে দই, মিষ্টি, ছানা, ফিরনী সহ যাবতীয় মিষ্টান্ন। আর লোভনিয় এসব খাবার খেয়ে মারাক্তক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। এমন কয়েকটি ঘটনার নজিরও বেরিয়ে এসেছে পরিবর্তনের অনুসন্ধানে। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বর্তমান নগরীতে মিষ্টান্ন বলতেই উঠে আসছে শশী, হক, গৌরনদী ও নীতাই মিষ্টান্ন ভান্ডারের নাম। এর পাশাপাশি নগরজুড়ে গড়ে ওঠেছে আরো বেশ কিছু মিষ্টান্ন ভান্ডারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যেখানে মান ও পরিবেষ সম্মত খাবারের শ্লোগান দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার টাকার দই, মিষ্টি, ছানা ও ফিরনী বিক্রি হচ্ছে। তবে এসব মিষ্টান্ন কতাটা পরিবেশ ও স্বাস্থ্যসম্মত তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে না।
মিষ্টান্ন ভান্ডারের কয়েকটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন মিষ্টান্ন তৈরীতে ভেজাল মিশ্রনের কিছু গোপন তথ্য। তারা জানায়, মিষ্টি, দই, ফিরনী বা ছানা কোনটিই ভেজাল ছাড়া পাওয়া যাবে না। বিশেষ করে লাল মিষ্টি ও দই তৈরীতে উপাদানের সাথে ব্যবহার করা হচ্ছে ক্ষতিকারক ডাইং রং। যা ব্যবহার হয়ে থাকে টেক্সটাইল মিলে। গোলাপজলের ব্যবহারতো রয়েছেই। এর সাথে ছানার মিষ্টি তৈরীতে ব্যবহার করা হয় টিসু।
সূত্রগুলো জানায়, সম্প্রতি দুধের তৈরী সরের মিষ্টি বেশ জনপ্রিয় অর্জন করেছে। ওই মিষ্টি তৈরীতে যে উপাদান ব্যবহার করা হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে ক্ষতিকারক সোডা, বিলাতী দুধ ও ছানার মত দেখতে টিসু। শুধুমাত্র সরের মিষ্টিই নয়, রসমালাই, ছানা ও দই তৈরীতেও ওই একই ধরনের ভেজার উপাদান ব্যবহৃত হচ্ছে। তাছাড়া মিষ্টি ও দই সুস্বাধু করতে বাসি মিষ্টি বা বাসি দই এর ব্যবহারও হয়ে থাকে। এসব করে মিষ্টি ব্যবসায়ীরা রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেলেও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়তে হচ্ছে শিশু ও বৃদ্ধ সহ সকল বয়সী মানুষকে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, নগরীর প্রতিটি নামিদামী মিষ্টান্ন ভান্ডারেই বেশিরভাগ ভেজাল হচ্ছে। পাশাপাশি অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মিষ্টান্ন তৈরীর বিষয়টিতো রয়েছেই। সম্প্রতি নগরীর বাজার রোডের নাম করা হক মিষ্টান্ন ভান্ডারের ভেজাল ধরা পড়ে যায়। একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে হক মিষ্টান্ন ভান্ডার থেকে মিষ্টি ও দই সরবরাহ করা হয়। যা খাবার পরে অর্ধশত অতিথি’র পেটে পীড়া ও পরবর্তীতে অনেকেই ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়। যার মধ্যে কয়েকজনককে বরিশাল শেবাচিম ও সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিলো। শুধু এই একটি ঘটনা আর ওই একটি দোকানই নয়, শশী, নীতাই, হক, গৌরনদী নামক একাধিক মিষ্টির দোকানের মিষ্টি, দই বা ছানা খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার একাধিক ঘটনা রয়েছে এই নগরীতে। অথচ বিষয়টিতে যাদের নজর দেয়ার কথা সেই পরিবেশ, বিএসটিআই ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর রয়েছে নিরব দর্শকের ভুমিকায়। এমনকি মিষ্টান্ন ভান্ডার গুলোতে জেলা প্রশাসনের নিয়মিত তদারকি ও মোবাইল কোর্টের ব্যবস্থা না থাকায় মিষ্টান্ন ভান্ডার গুলোতে অনিয়ম ও ভেজাল দিনের পর দিন বেড়েই চলেছে। তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহন জরুরী বলে মনে করেন সাধারণ মহল।
এদিকে গতকাল রোববার জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তর সংরক্ষন অধিদপ্তর বরিশাল কার্যালয়ের একটি টিম নগরীতে অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় চৌমাথা এলাকার একটি মিষ্টান্নভান্ডারে অভিযান করতে গেলে মালিক পালিয়ে যায়।
এ বিষয়ে বরিশাল জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জয়দেব চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে আসছি। প্রয়োজনে আরো অভিযান করা হবে। অবশ্য এ ক্ষেত্রে উপরের নির্দেশনার প্রয়োজন রয়েছে।
বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান বলেন, ‘শুধু আমরাই নই, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরও অভিযান পরিচালনা করে থাকেন। তবে এক সাথে সবগুলোতে মোবাইল কোর্ট বা অভিযান করা সম্ভব হয় না। যখন যেটা পাচ্ছি সেটার বিষয়েই আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছে। এর আগে মিষ্টির দোকানেও জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হয়েছে। মিষ্টান্ন তৈরীতে ভেজাল ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের বিষয়টিতে পুনরায় গুরুত্ব দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক।