3:16 pm , April 3, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ দীর্ঘ ৭০ বছর পর নৌপথে কলকাতা-ঢাকা যাত্রীবাহী ক্রুজ পরিসেবা চালু হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় কলকাতা থেকে গত শুক্রবার (২৯ মার্চ) ঢাকার উদ্দেশে ১৯ জন যাত্রী নিয়ে প্রথমবারের মতো যাত্রা শুরু করেছে প্রমোদতরী ‘আরভি বেঙ্গল গঙ্গা’। গতকাল বুধবার বেলা ১টা ২৫ মিনিটে বরিশাল নগরীর মুক্তিযোদ্ধা পার্ক সংলগ্ন জেটিতে নোঙর করে এ প্রমোদতরী। পরে প্রমোদতরীতে থাকা পর্যটকরা বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান পরিদর্শন করে। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা নাগাদ ঢাকার উদ্দেশে যাত্রা করবেন তারা। প্রমোদতরীতে বাংলাদেশে ভ্রমণ করতে পেরে পর্যটকরা বেশ উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন। বিদেশী পর্যটক মি. আন্দ্রিয়া জানান, এটা খুবই ভালো এবং রোমাঞ্চকর যাত্রা হয়েছে। খুব ভালো লাগছে দীর্ঘ বছর পর দুই দেশের মধ্যে শুরু হওয়া নৌ-পথের প্রথম যাত্রার যাত্রী হতে পেরে। ইমিগ্রেশন প্রসেস সহ সবকিছু খুব তাড়াতাড়ি ও সুন্দরভাবে হয়েছে। অপর পর্যটক নমরিতা বানসাল বলেন, এই যাত্রাটা একটু অন্যরকম অভিজ্ঞতা এনে দিয়েছে। বাংলাদেশের নদী আর নদীর তীরের সৌন্দর্য্য, মাছ ধরার দৃশ্য সত্যিই খুব মুগ্ধ করছে। আমরা একই সাথে এদেশের বিভিন্নস্থানের দর্শনীয় স্থানগুলোও দেখার সুযোগ পাচ্ছি। এভাবে নৌ-পথে দু’দেশের মধ্যে ভ্রমণ ব্যবস্থা চালু থাকলে ভবিষ্যতে পর্যটন শিল্পে উভয় দেশই এগিয়ে যাবে। পর্যটন শিল্পে এ খাতে প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট অথরিটির সাবেক চেয়ারম্যান নতুনগুহ বিশ্বাস বলেন, এটা খুবই সুন্দর ও আরামদায়ক যাত্রা। আশা রাখি কলকাতা-ঢাকা নৌরুটে খুব দ্রুত যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। প্রমোদতরীর ভেতরে যাত্রীদের অবস্থানের জন্য রয়েছে সু-ব্যবস্থা। আরভি বেঙ্গল গঙ্গার স্বত্বাধিকারী রাজ সিং জানান, নদীপথে ভারত-বাংলাদেশের এই যাত্রীসেবা ও ভ্রমণে পর্যটন শিল্প নিয়ে খুব ভালো ভবিষ্যৎ রয়েছে। আমরা দু’দেশের মধ্যে চলাচলের জন্য নতুন জাহাজ বানানোর কাজ করছি। আমরা চাই কলকাতা থেকে বাংলাদেশে প্রতিদিন সেবা দিতে। নারী যাত্রীদের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে এবং সে লক্ষ্যে কাজও করছি। বাংলাদেশের পক্ষে যাত্রীদের সহায়তা দেওয়া গালফ ওরিয়েন্ট সি ওয়েজ লিমিটেডের লজিস্টিক ম্যানেজার মোঃ নুরুজ্জামান জানান, গত ২৯ মার্চ বেলা সাড়ে ১২টায় কলকাতার খিদিরপুর থেকে আরভি বেঙ্গল গঙ্গা যাত্রা শুরু করে। যা ভারতের হেমনগর হয়ে ৩১মার্চ বাংলাদেশের আংটিহারা দিয়ে প্রবেশ করে। পরে মংলা হয়ে পিরোজপুরের কাউখালি রকেট ঘাটে গিয়ে পৌঁছায়। সেখান থেকে ঝালকাঠি হয়ে বুধবার দুপুরে বরিশাল এসে পৌঁছেছে। জাহাজে থাকা ১৯জন পর্যটকের মধ্যে ভারতীয় ছাড়াও ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের ছয়জন নাগরিক রয়েছেন। আর মোট পর্যটকদের মধ্যে চারজন নারীও রয়েছেন।
তিনি বলেন, পর্যটকদের বাংলাদেশের বিভিন্নস্থান ঘুরিয়ে দেখানো হচ্ছে। যারমধ্যে বাগেরহাট, কাউখালি ও বরিশালের বিভিন্ন দর্শনীয়স্থান রয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে জাহাজটি বরিশাল ত্যাগ করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেবে। যা পাগলার ভিআইপি জেটিতে আগাসী ৬ এপ্রিল নোঙর করবে এবং ৮ এপ্রিল আবার সেখান থেকে কলকাতার উদ্দেশে যাত্রী নিয়ে যাত্রা শুরু করবে। এরমধ্যে পর্যটকদের জন্য চাঁদপুরে নোঙর করা হবে জাহাজটি।
বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ’র নৌ-নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-পরিচালক আজমল হুদা মিঠু সরকার জানান, আমরা জাহাজটিকে বরিশাল নদী বন্দর সংলগ্ন বিআইডব্লিউটিএ’র একটি জেটিতে নোঙর করিয়েছি। সেখানে যেমন জাহাজটি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে, তেমনি যাত্রীরা সুন্দরভাবে ঘোরাফেরা করতে পারবেন। তিনি বলেন, ভারত বন্ধুপ্রতীম দেশ। দুইদেশের যৌথ উদ্যোগের মধ্যদিয়ে ৭০ বছর পর আবার নৌপথে যাত্রীসেবা শুরু হলো। যাত্রী ও পর্যটকদের ভ্রমণ যেন আনন্দদায়ক হয় সে লক্ষ্যে আমরা সার্বিক সহযোগিতা করে যাচ্ছি। ১৯ জন যাত্রী ও ৩০ জন ক্রু নিয়ে যাত্রা শুরু করা জাহাজটিতে মোট ২৮টি ঘর রয়েছে। তিন শ্রেণীর ঘরে সব মিলিয়ে থাকতে পারবেন মোট ৫৬ জন। উল্লেখ্য, গত শনিবার বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জের পাগলা থেকে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছে বাংলাদেশ ইনল্যান্ড ট্রান্সপোর্ট করপোরে-শনের ক্রুজ ‘এমভি মধুমতি’। বর্তমানে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে জলপথে পণ্য পরিবহন হলেও দুই দেশের মধ্যে জলপথে যাত্রী পরিবহন বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর।