3:25 pm , April 2, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ আজ বুধবার দুপুর দুইটায় শেষ হচ্ছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) ভিসির পদত্যাগ দাবীতে শিক্ষার্থীদের দেয়া ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটামের সময়। ভিসির পদত্যাগ না করলে আজ নবম দিনে নতুন করে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষনা করবে শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এখনো পদত্যাগ না করার সিদ্ধান্তে অনড় অবস্থানে রয়েছেন ভিসি প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হক। একমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কারোর কথায় পদত্যাগ না করার ঘোষনা দিয়েছেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার আজকের পরিবর্তনের সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে ভিসি তার এই সিদ্ধান্তের কথা জানান। এদিকে গতকাল মঙ্গলবার আন্দোলনের অষ্টম দিনেও ক্যাম্পাসে ভিসি’র পদত্যাগ দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও প্রতিবাদী চিত্রাংকন কর্মসূচি পালন করেছে শিক্ষার্থীরা। ভিসি পদত্যাগ না করলে আজ দুপুরের আগেই নতুন কর্মসূচি ঘোষনা করা হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আহমেদ সিফাত, লোকমান হোসেন, আল আমিন ও শফিকুল ইসলম। তারা জানান, চলমান আন্দোলন কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল অষ্টম দিন সকাল ৯টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন তারা। মাথায় ফিতা বেঁধে ও ভিসি’র পদত্যাগ দাবী সম্বলিত বিভিন্ন ব্যানার, ফেস্টুন ও প্লাকার্ড নিয়ে ভিসি বিরোধী শ্লোগান দেয় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। গ্রহন করা হয় ভিসি’র পদত্যাগ দাবীতে গণস্বাক্ষর।
এছাড়া বিকাল ৩টা থেকে ববি উপচার্য প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হক এর পদত্যাগ দাবীতে শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী চিত্রাংকন কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। এর অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দেয়ালে, রাস্তায় ও শহীদ মিনারে লেখুনির মাধ্যমে ভিসি’র পদত্যাগ ও তার বিকৃত ছবি একে প্রতিবাদ করেন। শিক্ষার্থী আহমেদ সিফাত, লোকমান হোসেন, আল আমিন ও শফিকুল ইসলম সহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা প্রশ্ন তুলে বলেন, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হয়ে আমরা যদি রাজাকারের বাচ্চা হয়ে থাকি তবে আমাদের অভিভাবকতো ভিসি। তবে কি তিনি রাজাকার ? শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের এক দফা এক দাবী। তা হলো ভিসি’র অপসারন। তিনি রাজাকারের বাচ্চা বলে শিক্ষার্থীদের যে গালি দিয়েছেন সে জন্য অবশ্যই তাকে স্ব-শরীরে এসে ক্ষমা চাইতে হবে এবং তার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে জানিয়ে শিক্ষার্থীরা হুশিয়ারী উচ্চরণ করে বলেন, ভিসিকে পদত্যাগের জন্য ৪৮ ঘন্টার সময় দেয়া হয়েছে। যার ২৪ ঘন্টা কেটে গেছে গতকাল দুপুর ২টায়। আজ দুপুর ২টায় ২৪ ঘন্টা সময় পেরিয়ে যাবে। এর মধ্যে তিনি পদত্যাগ না করলে আরো কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষনা করা হবে। ভিসিকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হবে।
তবে এ প্রসঙ্গে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হক বলেছেন, শিক্ষার্থীরা আল্টিমেটাম দিতেই পারে। তাতে আমার কিছু আসে যায় না। আমাকে যদি প্রধানমন্ত্রী বলেন পদত্যাগ করতে তবেই আমি পদত্যাগ করবো। আর নয়তো কোন আন্দোলনই আমাকে আমার এই পদ থেকে নির্দিষ্ট সময়ের আগে সরাতে পারবে না।
উপাচার্য অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি শিক্ষার্থীদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছি। তার পরেও শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কোন কারন দেখছি না। তাদের দিয়ে একটি গোষ্ঠি বা চক্র আন্দোলন করাচ্ছে। তাদের আন্দোলনে অর্থের যোগান দিচ্ছে। শিক্ষার্থীদের দিয়ে আন্দোলন করিয়ে ওই গোষ্ঠি ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। তাই ওই চক্রটিকে চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে লেখার আহ্বান জানান তিনি। উল্লেখ্য, শিক্ষার্থীদের বাদ দিয়ে ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিব?সের আনুষ্ঠানের আয়োজনের কারণে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা। এজন্য উপাচার্য এসএম ইমামুল হক ক্ষুব্ধ হয়ে এক আলোচনা অনুষ্ঠানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রাজাকারের বাচ্চা বলে গালি দেন বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। আর তাই তার এমন মন্তব্যের প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীরা। ২৬ মার্চ বিকাল থেকেই জোরদার আন্দোলন শুরু করেন তারা। এর পর ২৮ মার্চ রাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্টকালের জন্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষনা করে হল ত্যাগের নির্দেশ দেন। তবে হল ত্যাগের ঘোষনা বর্জন করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যান। এর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভার মাধ্যমে উপাচার্য দুঃখ প্রকাশ করে বক্তব্য দেন। তার ওই বক্তব্যকে মিথ্যাচার বলে দাবী করে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আর তাই গত ৩১ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সকল হলের ডাইনিং বন্ধ করে দেন। সর্বশেষ ভিসি’র পদত্যাগ চেয়ে ১ এপ্রিল বরিশাল জেলা প্রশাসক কার্যালয় ঘেরাও করে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। পরে ভিসি’র পদত্যাগ দাবী করে জেলা প্রশাসক এর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। পরে উপস্থিত সাংবাদিকদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে ভিসি’র পদত্যাগ চেয়ে ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন।