টেকনোলজিস্ট জলিল এত টাকার মালিক হলেন কিভাবে? টেকনোলজিস্ট জলিল এত টাকার মালিক হলেন কিভাবে? - ajkerparibartan.com
টেকনোলজিস্ট জলিল এত টাকার মালিক হলেন কিভাবে?

3:05 pm , April 1, 2019

কীর্তনখোলা রিপোর্ট ॥ বরিশাল সদর হাসপাতালের টেকনোলজিস্ট আব্দুল জলিল। পদটি তৃতীয় শ্রেনীর। কিন্তু তৃতীয় শ্রেনীর পদ হলেও তিনি চলেন প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তাদের মত। আর চলার কথাও। কারণ তৃতীয় শ্রেনীর এই কর্মচারী নগদ  অর্থ ও সম্পদের দিক থেকে অনেকের চেয়ে উপরে। দীর্ঘ বছর ধরে একই কর্মস্থলে থাকার সুযোগে কোটিপতি বনে গেছেন এই কর্মচারী। করেছেন বাড়ী, কিনেছেন লাখ লাখ টাকার জমি। শুধু তাই নয় নামে-বেনামে নগরীতে কয়েকটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সাথে শেয়ার রয়েছে তার। সেখান থেকে মাসে তিন লাখ টাকার উপরে আয় করেন এ কর্মচারী। যদিও নিজের নামে চতুর জলিল নিজের নামে শেয়ার না রেখে রেখেছেন স্ত্রীর নামে। তার প্রভাবের কাছে অনেক সময় কর্মকর্তারাও অসহায়। খোদ বিভাগীয় পরিচালকও বিব্রত জলিলের কর্মকান্ড নিয়ে। তিনি স্বীকার করেছেন জলিলের অপকর্মের বিষয়টি। চাকুরীতে যোগদানের পর থেকে অন্য কোথাও তিনি বদলি হননি। অথচ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীরা একই কর্মস্থলে তিন বছরের বেশি চাকুরী করতে পারেন না। স্বাস্থ্য দপ্তরের সাথে যোগসাজশ করে বছরের পর বছর তিনি একই কর্মস্থলে কাজ করার কারনে একটি শক্তিশালী বলয় তৈরী করেছেন। ফলে অনেক কর্মকর্তারাও তার ক্ষমতার কাছে অসহায় হয়ে পড়েছেন। অবশ্য আব্দুল জলিল বলছেন তিন বছরের বেশি একই কর্মস্থলে চাকুরী করতে পারা না পারার বিষয়টি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, কর্মচারীদের নয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, সদর হাসপাতালের সামনে অবস্থিত পদ্মা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মাধ্যমে প্রথমে ব্যবসা শুরু করেণ জলিল। ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারের শেয়ার রয়েছে। তবে নিজের নয়, স্ত্রীর নামে। সদর হাসপাতালে চাকুরী করার সুবাধে সকল রোগীকে সেখানে পাঠানো হয় পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য। শুধু তাই নয় অফিস ফাঁকি দিয়ে সারাক্ষনই তিনি ব্যস্ত থাকেন নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। এই করে সফলও হয়েছেন তিনি। পদ্মার পরে আরো তিনটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার করেছেন এই কর্মচারী। সব মিলিয়ে নগরীতে তার চারটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেখান থেকে মাসে তার তিন লাখ টাকার উপরে আয়। এছাড়া নগরীর বিভিন্ন এলাকায় তার নিজ এবং স্ত্রীর নামে ৫০ শতাংশের উপরে জমি রয়েছে। ওই সব জমির মূল্য বর্তমানে কয়েক কোটি টাকা। বিশ্বস্ত একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। শুধু তাই নয় নগরীতে স্ত্রীর নামে একটি ৫ তলা ভবন রয়েছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে। এ সবকিছুই তিনি করেছেন স্ত্রীর নামে। যাতে করে সবকিছু ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। হাসপাতালে গিয়ে তাকে একদিনও অফিস সময়ে পাওয়া যায়নি। অন্য স্টাফরা বলছেন জলিল অফিসে আসেন আর যান। এখানে তাকে পাওয়া মুশকিল। খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে সদর হাসপাতালের একজন চিকিৎসকের বেসরকারী একটি ক্লিনিকেও জলিলের অংশ রয়েছে। ফলে অনেক রোগীকে তিনি ওই হাসপাতালে জোর করে ভর্তি করান। এ জন্য হাসপাতালের ওই চিকিৎসক তাকে প্রশ্রয় দেন, তার সকল অপকর্ম ঢেকে রাখার চেষ্টা করেণ। হাসপাতালের অনেক চিকিৎসকরাই আবার বিভিন্ন ডায়াগনস্টিকের সাথে জড়িত। ফলে চিকিৎসকরাও তার উপরে কথা বলেন না।একাধিক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আব্দুল জলিল শুধু এক্স-রে করবেন আর রিপোর্ট দেবেন চিকিৎসকরা। কোন বাড়তি টাকা আয়োর সুযোগ নেই। কিন্তু তিনি চিকিৎসকদের সাথে যোগসাজশ করে এত সম্পদের মালিক হয়েছেন। রোগীর দালালি আর ডায়াগনস্টিক সেন্টার খোলার পরেই তিনি আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ বনে গেছেন। রোগীদেরকে ফুসলিয়ে তার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠানোই এখন প্রধান কাজ জলিলের।
টেকনোলজিস্ট আব্দুল জলিলের বিষয়ে সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক ডাঃ দেলোয়ার হোসেনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, টেকনোলজিস্ট পদে দীর্ঘ  বছর ধরে নিয়োগ বন্ধ আছে । বছরের পর বছর নিয়োগ বন্ধ থাকায় জলিলের মত ব্যক্তিরা একই পদে বহাল আছেন।  তবে কেউ দীর্ঘদিন থাকলেও কর্মস্থলে না থেকে ব্যক্তিগত ব্যবসা পরিচালনা করবেন এটা মেনে নেওয়া হবে না। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে এবং আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডাঃ মাহাবুবুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি আব্দুল জলিলের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি আমার নলেজে আছে। জলিলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রিকায় রিপোর্ট হয়েছে। এগুলো আমার নজরে এসেছে। সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে বসে জলিলের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান তিনি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT