বন্ধ ববিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ অব্যাহত ভিসি’র পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবীতে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী বন্ধ ববিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ অব্যাহত ভিসি’র পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবীতে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী - ajkerparibartan.com
বন্ধ ববিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ অব্যাহত ভিসি’র পদত্যাগসহ ১০ দফা দাবীতে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারী

3:29 pm , March 28, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রতিরোধে অনির্দিষ্টকালের জন্য বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় (ববি) বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। একইসাথে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বুধবার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন ঘোষনায় আরো ক্ষুদ্ধ হয় শিক্ষার্থীরা। বুধবার রাতেই তাৎক্ষনিকভাবে বিক্ষোভে করে শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি গতকাল বৃহস্পতিবার আন্দোলনের তৃতীয় দিনে কঠোর বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন তারা। একই সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসিকে অবাঞ্ছিত ঘোষনা করে তার পদত্যাগ ও শিক্ষার্থীদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার দাবী জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে ক্যাম্পাসে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা ভিসিকে স্বাধীনতা বিরোধী আখ্যায়িত করে। এছাড়াও গত ৩ বছর ১০ মাসে ভিসি ও ট্রেজারারের অনিয়ম এবং দুর্নীতি তুলে ধরা হয়। যদিও শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবী জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হক। একই সাথে মেয়াদ শেষ হওয়ার এক দিন বাকি থাকতেও পদত্যাগের কোন প্রশ্নই আসে না বলে মন্তব্য করেন তিনি। এর আগে গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে তৃতীয় দিনের মত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। বিভিন্ন ব্যানার ও প্লাকার্ড নিয়ে শিক্ষার্থীরা ভিসি প্রফেসর এসএম ইমামুল হক এর অপসারণ সহ শিক্ষার্থীদের রাজাকার বলে গালি দেয়ার বিষয়ে ক্ষমা চাওয়ার দাবী জানিয়ে শ্লোগান দেন তারা। এমনকি ভিসিকে রাজাকার বলেও শ্লোগান দেয়া হয়। এদিকে আন্দোলন চলাকালে বেলা ১১টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে আন্দোলনের বিষয়বস্তু ও দাবী দাওয়া তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষার্থীরা। লিখিত বক্তব্যে শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করে বলেন, ২৫ মার্চ বাঙালির ইতিহাসে এক কালো দিন। এই কালো রাতেই পাকিস্তানি হানাদারদের পৈশাচিক ও নির্বিচার হামলায় শত-সহ¯্র মানুষের রক্তে রঞ্জিত হয়েছে বাংলার রাজপথ। এমন একটি দিনে বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের প্রশাসন ‘মাউন্টেন ডিউ’ নামক বহুজাতিক বেনিয়াদের বিশ^বিদ্যালয়ের ফটকে হিন্দি গান বাজিয়ে শোভাযাত্রা করে তাদের বিপণন প্রচারণা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। অথচ একই স্থানে বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের অনুমতি পাননি। শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের দিনে বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি ‘বিইউডিএস’ এর এক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের “রাজাকারের বাচ্চা” বলে গালি দেন। এমন প্রেক্ষাপটে শিক্ষার্থীরা ভিসির অন্যায়, অন্যায্য এবং স্বাধীনতা বিরোধী আয়োজনের প্রতিবাদ করেছেন। তারা অভিযোগ করে বলেন, গত তিন বছর ১০ মাস যাবত স্বাধীনতা বিরোধী এই ভিসি জাতীয় দিবসগুলোতে শিক্ষার্থীদের সংযুক্ত করে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন নি। ভিসি সামিয়ানা ঘেরা প্যান্ডেলে বসে চা চক্র করেন, যেখানে শিক্ষার্থীদের প্রবেশ পর্যন্ত নিষিদ্ধ। কিন্তু শিক্ষার্থীদের দাবি ছিলো তাদের অংশগ্রহণে জাতীয় দিবসগুলোতে আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা। যাতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিকশিত হয়। ভিসির এই অন্যায় আচরণের প্রতিবাদ করলে তিনি শিক্ষার্থীদের “রাজাকারের বাচ্চা বলে গালি দেন”। এরই ধারাবাহিকতায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ভিসির নিঃশর্ত ক্ষমা ও তার বক্তব্য প্রত্যাহারের মুখ্যসহ ১০ দফা দাবিতে আন্দোলনের ডাক দেয়। বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন ছাত্রদের যৌক্তিক দাবিকে বাধাগ্রস্থ করার লক্ষ্যে, ভয় পেয়ে রাত ২টায় চোরের মত বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইটে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ^বিদ্যালয়ের সকল একাডেমিক কার্যক্রম এবং হল বন্ধ ঘোষনা করেন। আমরা এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই- বিশ^বিদ্যালয়ের হল ছেড়ে একজন ছাত্র-ছাত্রীও কোথাও যাবে না। এ নিয়ে যদি কোন অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে তার সম্পূর্ণ দায়ভার বিশ^বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে। শিক্ষার্থীরা হুশিয়ারী উচ্চর করে বলেন, আমরা দ্বিধাহীন চিত্ত ও স্পষ্ট ভাবে বলতে চাই, এই স্বাধীনতা বিরোধী ভিসিকে অবশ্যই তার বক্তব্যের জন্য প্রকাশ্য ক্ষমা চাইতে হবে। তার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে এবং তাকে পদত্যাগ করতে হবে। অন্যথায় ছাত্র আন্দোলনের তীব্রতায় তিনি পালানোর পথ পাবেন না। এদিকে সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা ভিসি এসএম ইমামুল হক ও তার সিন্ডিকেটের অনিয়ম দুর্নীতির খন্ডচিত্র তুলে ধরে বলেন, ভিসি বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়কে এক অর্থ আত্মসাতের কেন্দ্র বানিয়ে নিয়েছেন। ভিসির বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট নিয়ে ৫০ লক্ষ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থীরা। মার্কেটিং বিভাগের এক ব্যাচ থেকে পরীক্ষার পরিমান বাবদ তারা আদায় করেছে ৭ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা। নামে বেনামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কর্তৃপক্ষ আদায় করছে নানান জরিমানা। ৩ জন গাড়ি চালককে নিজের কাজে ব্যবহার করছেন, টিএ/ডিএ ও আপ্যায়ন বাবদ অর্থ হাতিয়ে নেয়া, গেষ্ট হাউস হিসেবে ভবন ভাড়া নিয়ে গেষ্ট না রেখে কক্ষগুলো নিজ দখলে রাখা, অবৈধভাবে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে চুক্তিভিত্তিক, দৈনিক ভিত্তিক সহ বিভিন্নভাবে লোক নিয়োগ, পদোন্নতি দেয়া, ¯œাতক শ্রেণির ভর্তির টাকা ইচ্ছেমতো খরচ করা, শিক্ষার্থীদের যথেষ্ট ক্লাস রুম না থাকার পরেও ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ভিসি’র নতুন অফিস বানানো আরো একাধিক অভিযোগ তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। অপরদিকে বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. এসএম ইমামুল হক বলেন, শিক্ষার্থীরা যে বিষয় নিয়ে আন্দোলন করছে সে রকম কোন বিষয় ঘটেনি। তবে বিশ^বিদ্যালয় এবং শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরাপত্তার স্বার্থে বিশ^বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষনা করা হয়েছে। তাছাড়া শিক্ষার্থীরা আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ তুলেছেন সেগুলো ভিত্তিহীন। মুলত ভিসি হিসেবে এই বিশ^বিদ্যালয়ে আমার আর দু’মাস মেয়াদ রয়েছে। পরবর্তীতে আমি যাতে এখানে পুনরায় ভিসি হয়ে আসতে না পারি সে জন্য ষড়যন্ত্রমুলকভাবে এই আন্দোলন করা হচ্ছে। তবে মেয়াদ শেষ হওয়ার একদিন আগেও পদত্যাগের কোন প্রশ্নই আসে না বলে মন্তব্য করেন ভিসি।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT