নতুন ধূমপায়ী সৃষ্টিতে সিগারেট কোম্পানীর কৌশলী বিজ্ঞাপন নতুন ধূমপায়ী সৃষ্টিতে সিগারেট কোম্পানীর কৌশলী বিজ্ঞাপন - ajkerparibartan.com
নতুন ধূমপায়ী সৃষ্টিতে সিগারেট কোম্পানীর কৌশলী বিজ্ঞাপন

2:56 pm , March 18, 2019

সাঈদ পান্থ ॥ নতুন ধূমপায়ী সৃষ্টির টার্গেট মাঠে নিয়েছে সিগারেট কোম্পানী ও তামাক কোম্পানীগুলো। আর তাই তারা নানা কৌশল অবলম্বন করছে। নানা অযুহাতে বিজ্ঞাপন দিয়ে ছেয়ে ফেলেছে নগরী। সিগারেটের দাম লিখে রাখার নামে কোম্পনীগুলো প্রচারণা চালাচ্ছে। এছাড়া কোথাও পোস্টার করছে আবার কোথাও সিগারেট বিক্রেতাদের সিগারেট আকৃতির বক্স প্রদান করে এ বিজ্ঞাপণ চালাচ্ছে। এ বিষয়ে রহস্যজনক কারণে নিশ্চুপ প্রশাসন। ফলে সিগারেট কোম্পানীর নতুন বিজ্ঞাপণে আকৃষ্ট হচ্ছে অপ্রাপ্ত বয়স্ক বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা। নগরীর পাবলিক স্কয়ার এলাকায় এক পান-সিগারেটেরদোকানদা সুমন জানান, বেশ কয়েকদিন আগে সন্ধ্যার পর তার দোকান পিছনে দেয়ালে পোস্টারের মত মাঝে ৩টি সিগারেট প্যাকেট লাগানো বিজ্ঞাপণ লাগিয়েছে সিগারেট কোম্পানীর লোকজন। পাশাপাশি তাদের নতুন এ সিগারেট বিক্রি করতে বলেছে তারা। এ জন্য তারা তাদের (দোকনদারদের) নানা উপহার প্রদান করবে। এর আগেও তারা উপহার দিয়েছে। শুধু তাই নয় নতুন ব্যান্ড গোল্ডলিফ এইচডি এর ২ প্যাকেটের সাথে একটি ডিজিটাল লাইটার ফ্রি ছিল। এমন বিজ্ঞাপণ বিরাজ করছে নগরীর ফকিরবাড়ি রোড, হাতেম আলী কলেজ চৌমাথা, বটতলা, বগুড়া রোড, হাসপাতাল রোড, জেলখানার মোর, নথুলাবাদ বাস টার্মিনাল, র”পাতলী, সাগরদী, লঞ্চঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে। এসব দোকানদারদের প্রদান করা হয়েছে সিগারেটের আকৃতি ও রংয়ের বক্স। ফলে নানা কৌশলে এ বিজ্ঞাপণ প্রচার করা হচ্ছে। নগরীর প্রান কেন্দ্র বিবির পুকুর পাড়ে ধূমপান করা মাসুদুর রহমান নামে এক তরুন ধূমপায়ী জানান, আগে আমি জাপান টোবাকোর মালব্র খেতেন। কিন্তু এখন নতুন ব্যান্ড গোল্ডলিফ এইচডি ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, ধূমপানের ফলে শারীরিক মানষিক বা অন্য কোন উপকার করে না। কিন্তু অভ্যাসের কারণে আমি ধূমপান ছাড়তে পারি না। তার মধ্যে নতুন ব্যান্ডের বিজ্ঞাপনটি দেখে এই ব্যান্ডে এসেছি। নগরীর ফকিরবাড়ি রোডে সিগারেট পান করা মোঃ আরিফুল ইসলাম নামে এক কলেজ ছাত্র জানান, তিনি জানেন যে ধুমপান বিষপাণ তারপরেও বন্ধুদের পালায় পড়ে তিনি সিগারেট ধরেছেন বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, সিগারেট কিনতে এসে দেখেছেন যে ব্রিটিশ টোব্যাকোর নতুন একটি সিগারেট এসেছেন। এ বিজ্ঞাপনের মাধ্যমেই তিনি এটি জানতে পেড়েছেন। বিএম কলেজের ছাত্র আল আমিন বলেন, বিজ্ঞাপণ প্রচার বন্ধ শুনেছি। কিন্তু এখনোতো নানা ভাবে বিজ্ঞাপণ প্রচার হচ্ছে বলে তিনি জানান। আল আমিনের বন্ধু আশিক জানান, সিগারেট খেলে স্বাস্থ্যর ক্ষতি হয়। টাকা অপচয় হয়। তারপরেও সরকার কেন এ পন্য বন্ধ করে দিচ্ছে না এটাই তা প্রশ্ন। বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের কেন্দ্রীয় সদস্য কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু জানান, তামাক কোম্পানীগুলো নানা কুট কৌশলে তাদের পণ্যোর বিজ্ঞাপণ দিয়ে আসছে। সিগারেটের বিজ্ঞাপনে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও এমনটা করছে তারা। প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে তেমন একটা পদক্ষেপ নিচ্ছে না। যার কারণে আজ বরিশালসহ সারা দেশে নানা পন্থায় বিজ্ঞাপন চালানো হচ্ছে।
তামাক বিরোধী বেসরকারি সংগঠন একলাবের সাবেক প্রোগ্রাম অফিসার মোঃ ফাইজুল ইসলাম জানান, সকল ধরনের বিজ্ঞাপনই নিষিদ্ধ। তারপরও যারা বিজ্ঞাপন চালাচ্ছে তারা অবৈধভাবে চালাচ্ছে। জেলা প্রশাসনের নিবার্হী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক তাদের বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে বলে তিনি জানান। ফাইজুল বলেন, এ বিজ্ঞপনের মাধ্যমে নতুন ধুমপায়ীদের আকৃষ্ট করছে। বিভিন্ন স্কুল কলেজের অপ্রাপ্ত বয়স্করা ধূমপান করে স্বাস্থ্য ঝুকিঁ ঘটাচ্ছে। কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ(ক্যাব) বরিশালের সাধারণ সম্পাদক রনজিৎ দত্ত জানান, বিজ্ঞাপনই তো দেয়ার কথা নয়। সরকারের উচিৎ এ ধরণের কোম্পানীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া। প্রশাসনের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য তারাই উদ্যোগী হবেন বলে তিনি জানান।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ বলেন, ‘‘দায়িত্ব নেয়ার পরই মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছি। বিগত বছরে এসবের বিরুদ্ধে কেউ ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এ অভিযান নিয়মিত অব্যাহত থাকবে। উচ্চ আদালতের নির্দেশ পালনে সিটি করপোরেশনের অবস্থান আরো কঠোর হয়েছে। বিড়ি, সিগারেট, পান ও তামাকজাত দ্রব্য ক্রয়-বিক্রয় ও সেবন বন্ধের নির্দেশ না মানলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে জরিমানা, মামলা, এমনকি ট্রেড লাইসেন্সও বাতিল করা হবে।” মেয়র বলেন, “ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫ (সংশোধিত ২০১৩) এবং বিধিমালা ২০১৫ অনুযায়ী পাবলিক প্লেসে ধুমপান আইনত দন্ডনীয় অপরাধ। এ নির্দেশনা না মানলে তাদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা প্রশাসক এসএম অজিয়র রহমান জানান, তিনি বিষয়টি খতিয়ে দেখে হয়েছে। সিগারেট কোম্পানীগুলো সুকৌশলে তাদের প্রচারনা চালাচ্ছে কিনা এ বিষয়ে দুইএক দিনের মধ্যে মাঠে নামবে ভ্রাম্যমান আদালত।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT