3:11 pm , March 12, 2019

খান রুবেল ॥ দ্রুত গতিয়ে এগিয়ে চলছে বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের লেবুখালীর পায়রা সেতু’র কাজ। এরই মধ্যে ৫০ শতাংশ নির্মান কাজ সম্পন করেছে চীনের ঠিকাদারী সংস্থা। দৃশ্যমান হয়েছে কর্ণফুলীর সেতুর আদলে নির্মানাধীন ৮৪০ মিটার সেতু। ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ে চলাচলের জন্য সেতু উন্মুক্ত করে দেয়ার বিষয়ে আশাবাদী সড়ক জনপদ ও সেতু বিভাগ। এদিকে লেবুখালীর পায়রা নদীতে পায়রা সেতু বাস্তবায়ন হলে ঢাকার সাথে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থার আরো উন্নয়ন হবে। বরিশাল থেকে পটুয়াখালী, বরগুনা ও পর্যটন নগরী সাগর কন্যা কুয়াকাটার সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা আর সহজ হবে। এসব রুটে যোগাযোগ স্থাপনে কমে আসবে সময়। সেতুটি উন্মুক্ত হলে ঢাকা থেকে কক্সবাজারের চেয়ে অর্ধেক সময়ে কুয়াকাটায় যাতায়াত সম্ভব হবে। আর পদ্মা সেতু নির্মানে সময়ের ব্যবধান কমে আসবে আরো অনেক। অপরদিকে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কের লেবুখালী পয়েন্টের সর্বোশেষ এই সেতুটিকেঘিরে অর্থনৈতিক ও জীবন মান উন্নয়নের স্বপ্ন দেখছেন স্থানীয়রা। কেননা পায়রা সেতু, পায়রা বন্দর, সমুদ্র বন্দর ও তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রকে ঘিরে এ অঞ্চলে গড়ে উঠছে বিভিন্ন স্থাপনা। শিল্প উদ্যোক্তারা খুঁজছেন পছন্দের জমি। বৃদ্ধি পেয়েছে জমির মূল্যও।
বরিশাল সড়ক, জনপদ ও সেতু বিভাগ সূত্রে জানাগেছে, একটি সময় ছিলো যখন বরিশাল থেকে সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটার যেতে সময় সময় লেগে যেতে ৫ থেকে ৬ ঘন্টা। কেননা তখন বরিশাল থেকে ১১০ কিলোমিটার সড়কের ৫টি পয়েন্টে ছিলো ফেরী। যার ফলে পথে পথে দুর্ভোগ এবং ভোগান্তির সিমা ছিলো না যাত্রী এবং পর্যটকদের। এর ফলে দেশের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র সাগর কন্যা কুয়াকাটার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় পর্যটকরা।
তবে পর্যটন এলাকা কুয়াকাটাকে ঘিরে এই অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে পটুয়াখালীর কলাপাড়া পৌর শহর সংলগ্ন আন্ধারমানিক নদীতে শেখ কামাল, হাজীপুর সোনাতলী নদীতে শেখ জামাল ও শিববাড়িয়া নদীর ওপর শেখ রাসেল সেতু নির্মান করা হয়।
যোগাযোগ ব্যবস্থা আরো সহজ করতে বরিশাল কীর্তনখোলা ও খয়রাবাদ নদীতে নির্বাচন করা হয় শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাত নামের পৃথক দুটি সেতু। এর ফলে বিগত প্রায় ১০ বছরে দক্ষিণাঞ্চলের সাথে বরিশাল এবং ঢাকা সহ সারা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক সহজ হয়ে যায়। কিন্তু এর পরেও দুর্ভোগের অন্যতম কারন হয়ে দাড়ায় বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলার সীমান্তবর্তী পায়রা নদী।
প্রতিদিন ঢাকা-বরিশাল সহ বিভিন্ন রুটের সহ¯্রাধিক যানবাহন ফেরী পারাপারের মাধ্যমে চলতে হচ্ছে। দিন রাত দুটি করে ফেরী চলা সত্যেও সকাল-বিকাল ২৪ ঘন্টাই যানবাহনের দীর্ঘ লাইন পড়ে যায় নদীর দুই প্রান্তে। ফলে লেবুখালী ফেরী দুর্ভোগ নিত্য দিনের সঙ্গিতে পরিনত হয়েছে।
এ জনদুর্ভোগ লাঘবে লেবুখালী’র পায়রা নদীতেও সেতু নির্মানের উদ্যোগ নেয় সরকারের সড়ক যোগাযোগ ও সেতু মন্ত্রনালয়। ২০১২ সালের এপ্রিলে চট্টগ্রামের কর্ণফুলি সেতু’র আদলে চার লেন বিশিষ্ট পায়রা সেতু নির্মান প্রকল্প প্রনয়ন পরবর্তী ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১ হাজার ২২ কোটি ২৩ লাখ টাকা ব্যয় সাপেক্ষে এক হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ ও ১৯ দশমিক ৭৬ মিটার প্রস্ত’র পায়রা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
কুয়েত ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়ন এবং সড়ক যোগাযোগ ও সেতু বিভাগের সত্ত্বাবধায়নে ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সেতু নির্মান কাজ সম্পন্নের কথা ছিলো। কিন্তু বরাদ্দ সংক্রান্ত জটিলতা পিছিয়ে দেয় পায়রা সেতু নির্মান। পরবর্তীতে ২০১৬ সালের ২৪ জুন সেতু নির্মান কাজ শুরু করে চীনের প্রকৌশল সংস্থা লং জিয়ান রোড এন্ড ব্রিজ কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। তৃতীয় কর্ণফুলি সেতু’র আদলে এক্সটা ডোজ ক্যাবল স্টেট পদ্ধতিতে নির্মানাধীন সেতুটির কিছু অংশ এরই মধ্যে দৃশ্যমান হয়েছে।
সড়ক জনপদ ও সেতু বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ও পায়রা সেতু নির্মান প্রকল্প ম্যানেজার আহমেদ শরীফ সজিব জানান, দক্ষিণাঞ্চলের অন্যতম এবং নান্দনিক এই সেতুটি ৩৫০টি পাইলের উপর ভর করে দাড়াবে। এ পাইলগুলো চীন-ভারত সহ বিভিন্ন দেশের প্রকৌশলী ও কারিগর দিয়ে নির্মান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, সেতুর দুই দিকে এপ্রোচ সড়কের দৈর্ঘ্য হবে এক হাজার ২৬৮ মিটার এবং প্রস্থ ২২ দশমিক ৮০ মিটার। সেতুর মাঝখানে থাকবে ১ মিটার দৈর্ঘ্যরে ফুটপাত। মূল সেতুতে স্প্যান থাকবে ৪টি। এর মধ্যে মাঝ নদীর দুটি স্প্যান ২শ মিটার ও বাকি দুটি ১৫৫ মিটার করে। প্রতি স্প্যানের দূরত্ব ৬৩০ মিটার। আর নদী থেকে সেতুর উচ্চতা হবে ১৮ দশমিক ৩ মিটার। আহমেদ শরীফ সজিব বলেন, সেতুর বরিশাল প্রান্তে ৩০ মিটার করে ১২টি ও পটুয়াখালী প্রান্তে ১৬টি পিলার সহ মোট ৩১টি পিলার স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। নদীর মধ্যে যে চারটি পিলার হবে তার মধ্যে বরিশাল প্রান্তের পিলার নির্মান শেষ হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ মার্চ) মাঝখানের পাইলের কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। তাছাড়া আগামী জুনের মধ্যে পটুয়াখালী প্রান্তের পাইল ও পিলারের কাজ শেষ হবে। সড়ক জনপদ ও সেতু বিভাগের পায়রা সেতু প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নূর-ই-আলম বলেন, পাইল ও পিলার স্থাপন কাজ শেষ বললেই চলে। এমনকি বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ প্রান্তে ৮৪০ মিটার সেতু এখন দৃশ্যমান। আগামী ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সেতু নির্মান কাজ শেষ হবে বলে আমরা আশাবাদী। তিনি বলেন, পায়রা সেতু’র প্রকল্প ব্যয় ১০ শতাংশ বেড়েছে। সেতু রক্ষায় নদী ষাশণ কাজের জন্য ওই টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় নদীর তীর সংরক্ষণ, ব্লক ও জিও ব্যাগ ফেলানো হবে। তবে এখন বরাদ্দ অনুমোদন হয়নি। চলতি বছরের ২৩ এপ্রিলের মধ্যে সেতু নির্মান কাজ শেষ হবার কথা থাকলেও তা শেষ করতে এখন ২০২০ সালের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলেন এই কর্মকর্তা।