3:28 pm , March 10, 2019

পরিবর্তন ডেস্ক ॥ ধর্ষিত এক তরুণীকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থানার দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট। সাটুরিয়া থানার ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা এসআই সেকেন্দার হোসেন ও এএসআই মাজহারুল ইসলাম ওই তরুণীর করা মামলার আসামি। একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে রোববার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাই কোর্ট বেঞ্চ ওই রুল জারি করে। নারী-শিশু ও মানবাধিকার সংগঠন ‘চিলড্রেন চ্যারিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন’ ও ‘বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব¬াস্ট)’র পক্ষে গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রিট আবেদনটি করা হয়। মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থানার ওই দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে সেখানকার ডাক বাংলাতে আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগ এনে গত ১২ ফেব্রুয়ারি আশুলিয়ার ওই তরুণী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। গণমাধ্যমে এই খবর দেখে এক তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নিতে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা, অবহেলা বা ব্যর্থতা কেন বেআইনি ও আইনগত কর্তৃত্ব বহির্ভূত ঘোষণার পাশাপাশি বিবাদীদের নিস্ক্রিয়তা, অবহেলা বা ব্যর্থতা বিদ্যমান আইনের লঙ্ঘন ও সংবিধানের ৩১, ৩২, ২৬ ধারার সঙ্গে কেন সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, সেই রুল চেয়ে আবেদন করে সংগঠন দুটি। আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে শুনানিকারী আইনজীবী মো. আব্দুল হালিম সাংবাদিকদের বলেন, ধর্ষণের শিকার তরুণীকে ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না এবং হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজ, ডাক বাংলো, থানা, থানার বিশ্রাম কক্ষ, সেইফ হোম, জনসম্মুখে নারী ও শিশুদের যাতে যৌন হয়রানির শিকার হতে না হয় অথবা তাদের অধিকার ও মর্যাদাহানি যাতে না ঘটে, সে বিষয়ে একটি নীতিমালা তৈরি করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, রুলে তাও জানতে চেয়েছে হাই কোর্ট। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি), মানিকগঞ্জের পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এবং সাটুরিয়া থানার ওসিসহ সংশি¬ষ্ট আটজনকে চার সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। হালিম বলেন, রুল ছাড়াও আদালত অন্তর্র্বতীকালীন নির্দেশনাও দিয়েছে। “১৮ এপ্রিলের মধ্যে ওই ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন, মেডিকেল রিপোর্ট, সংশি¬ষ্ট মামলার নথি, দুই পুলিশ সদস্যের নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা এবং ধর্ষণের শিকার তরুণীর প্রয়োজনীয় তথ্য আদালতে দাখিল করতে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও মানিকগঞ্জ সদর থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন।” ওই তরুণীর মামলায় বলা হয়, ঢাকার আশুলিয়া থানায় কর্মরত থাকা অবস্থায় এসআই সেকেন্দারের সঙ্গে আশুলিয়ার এক নারীর পরিচয় হয়। তার সঙ্গে জমিজমা নিয়ে লেনদেন ছিল সেকান্দারের। ওই সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলতে ওই নারীর সঙ্গে গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিকালে সাটুরিয়া থানায় গিয়ে ধর্ষণের শিকার হন তিনি। মামলার এজহারে বলা হয়, থানায় যাওয়ার পর সেকেন্দার তাদেরকে থানার পাশের জেলা পরিষদের ডাক বাংলোয় নিয়ে যান। তখন এএসআই মাজহারুলও সেখানে উপস্থিত হন। এরপর ওই নারী থেকে তরুণীকে আলাদা করে আরেকটি কক্ষে নিয়ে ইয়াবা সেবন করিয়ে কয়েকবার ধর্ষণ করেন ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা। পরে ৮ ফেব্রুয়ারি সকালে ছেড়ে দেন এবং ঘটনা কাউকে জানালে ‘ক্রসফায়ারে’ মেরে ফেলার হুমকি দেন। ওই তরুণী আশুলিয়ায় ফেরার পর ঘটনাটি স্থানীয় এক সাংবাদিককে জানালে তার মাধ্যমে পুলিশ তা জানে। এরপর ওই তরুণীর মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে ৯ ফেব্রুয়ারি দুই পুলিশ সদস্যকে থানা থেকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইনসে আনা হয়। ১০ ফেব্রুয়ারি ওই তরুণী লিখিত অভিযোগের পাশাপাশি পরদিন দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করেন। এরপর গ্রেপ্তার করা হয় সেকান্দার ও মাজহারকে।