3:34 pm , February 19, 2019

নিজস্ব প্রতিবেদক \ বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভাগার (ডাস্টবিন) থেকে অপরিণত ৩১ শিশুর মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় গাইনী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. খুরশীদ জাহান ও গাইনী ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স জোৎ¯œা বেগমকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাছাড়া শিশুগুলোর মৃতদেহের ময়না তদন্তের জন্য গঠন করা হয়েছে একটি মেডিকেল বোর্ড। আজ বুধবার সকাল ৯টায় হাসপাতালের মর্গে মেডিকেল বোর্ড ময়না তদন্ত শুরু করবে। এছাড়া এই ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট আরো একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। যাদের আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি এই ঘটনায় কোতয়ালী মডেল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। হাসপাতাল পরিচালক ডা. বাকির হোসেন বলেন, অপরিণত শিশুর ৩১টি শিশুর মৃতদেহ গত ২৫/৩০ বছর ধরে শিক্ষা উপকরন হিসেবে গাইনী বিভাগে ব্যবহৃত হয়ে আসছিলো। এগুলো ব্যবহার অনুপযোগী হওয়াতে তা একটি বিশেষ উপায়ে সমাহিত করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তা না করে আয়াদের মাধ্যমে সেগুলো ডাস্টবিনে ফেলা হয়েছে। তিনি বলেন, মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জরুরী সভা করেছেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দায়িত্ব অবহেলার কারনে হাসপাতালের গাইনী বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. খুরশীদ জাহান এবং গাইনী ওয়ার্ডের ইনচার্জ সিনিয়র স্টাফ নার্স জোৎ¯œা বেগমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য মেডিকেল কলেজ অধ্যক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ তা মন্ত্রনালয়ে প্রেরন করবেন।
তাছাড়া সকালেই সার্জারী বিভাগের প্রধান ডা. জহুরুল হক মানিকে প্রধান একটি তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করে দেয়া হয়েছে। কমিটিতে সদস্য হিসেবে রয়েছেন প্যাথালজী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. ফাইজুল বাশার ও ফরেনসিক বিভাগের প্রভাশক ইমতিয়াজ উদ্দিন। তাদের তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। রিপোর্ট পেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
অপরদিকে মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. সৈয়দ মাকসুমুল হক টুলু বলেন, গাইনী বিভাগের প্রধান ডা. খুরশীদ জাহান ও গাইনী বিভাগের ইনচার্জ জোৎ¯œা বেগমকে বরখাস্ত করার জন্য মঙ্গলবার দুপুরে মন্ত্রনালয়ে চিঠি প্রেরন করা হয়েছে। শুনেছি মন্ত্রনালয় থেকে তাদের বরখাস্তও করা হয়েছে। এতে এখন পর্যন্ত আমরা সে ধরনের কোন চিঠি পাইনি।
তিনি বলেন, মেডিকেল বোর্ড গঠন সহ বিভিন্ন কারণে সময় বিলম্ব হওয়ায় মঙ্গলবার শিক্ষা উপকরন হিসেবে ব্যবহৃত অপরিণত শিশুর মৃতদেহগুলোর ময়না তদন্ত করা সম্ভব হয়নি। বুধবার সকাল ৯টা থেকে এগুলোর ময়না তদন্ত শুরু হবে। এজন্য চার সদস্য বিশিষ্ট একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এতে গাইনী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. আকবর হোসেনকে প্রধান এবং নিউনেটলজী বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. বিধান চন্দ্র বিশ্বাস, ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রভাষক ইমতিয়াজ উদ্দিন ও শাওন বিন রহমানকে সদস্য করা হয়েছে। আপাতত শিক্ষা সামগ্রী হিসেবে ব্যবহৃত ওই মৃতদেহগুলো মর্গের হিমাগারে রাখা হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের গাইনী বিভাগের প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ডা. খুরশীদ জাহান সাংবাদিকদের বলেন, এই ঘটনার সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। যে নমুনা (অপরিণত শিশু) গুলো উদ্ধার করা হয়েছে তা গাইনী ওয়ার্ডের পেছনে একটি রুমের মধ্যে ছিলো। রুমটি খালি করে দেয়ার জন্য ওয়ার্ডের ইনচার্জকে আমি বলেছি। সে রুম খালি করতে গিয়ে নমুনা গুলো ডাস্টবিনে ফেলে দিয়েছে। অপরাধ হলে সে করেছে। এখানে আমাকে জড়ানোর কি আছে। তাছাড়া আমাকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলে শোনা গেলেও এখন পর্যন্ত মন্ত্রনালয়ের এ সংক্রান্ত কোন চিঠি আমি পাইনী।
এদিকে কোতয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আসাদুজ্জামান জানিয়েছেন, অপরিণত শিশুর মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলার তদন্ত কর্মকর্তার দায়িত্ব পেয়েছেন মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইদুল ইসলাম। তিনি পুরো বিষয়টি ভালোভাবে তদন্ত করে দেখছেন। তাছাড়া ময়না তদন্ত শেষে মৃতদেহগুলো সমাধিত করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
উল্লেখ্য, সোমবার রাতে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা হাসপাতালের পশ্চিম পার্শ্বে সেন্ট্রাল ট্যাংক সংলগ্ন ডাস্টবিনের ময়লা অপসারনের জন্য যায়। এসময় সেখানে বালতি’র ভেতরে এবং প্লাষ্টিকের কৌটায় ভরা অবস্থায় ৩১টি অপরিণত শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার করে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি পুলিশকে না জানিয়েই তড়িঘরি ঘরে একই স্থানে মাটি চাপা দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তার আগেই বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচার হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। মুহুর্তের মধ্যে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোশারফ হোসেন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তারা অপরিণত লাশগুলো উদ্ধার করেন। মৃতদেহ গুলোর সুরতহাল শেষে তা ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করে তারা।