3:38 pm , February 17, 2019

সাঈদ পান্থ \ দেড় কোটি টাকায় নির্মিত শিশু পার্ক ৩ বছরের মাথায় পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। পার্কটির দ্বায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠান বরিশাল সিটি কর্পোরেশন হঠাৎ করেই পার্কটি বন্ধ করে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি দাবী করেছেন, এটি এখন আর ব্যবহার উপযোগী নেই। শিশুরা দুর্ঘটনায় পড়তে হবে যে কোন সময়। এই পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে গত ১৫ দিন পূর্বে গ্রীন সিটি পার্ক নামে এই শিশু পার্কটি বন্ধ করে দিয়েছে। এদিকে সুশীল সমাজ দাবী করেছে কোটি টাকা ব্যয় করে পার্ক নির্মাণে অনিয়ম হয়েছে। তাই দুর্নীতি দমন কমিশন ও প্রশাসন এ বিষয়ে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহন করবে। পার্কটি ঘুরে দেখা গেছে, গ্রীন সিটি পার্কের নামের রঙ বদলে জং ধরেছে কোটি টাকার খেলনায়। নি¤œমানের সামগ্রী ব্যবহার আর বিসিসি’র রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে গ্রীন সিটি পার্ক শিশু বিনোদনের পরিবর্তে মৃত্যুক‚পে পরিণত হয়েছে। পার্কটি’র খেলনাগুলোর প্রায় সবগুলোই অকেজো। আবার অনেকগুলোর হদিসো নেই পার্ক চত্ত¡রে। বরিশাল নগরীর শিশুদের একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র গ্রীন সিটি পার্কে শিশুদের নিয়ে অবসর সময় কাটাতে আসা অভিভাবকরা খেলনার বেহাল দশা এবং রক্ষণাবেক্ষণে ধ্বসে ছাপ পরে থাকায় অভিযোগ করে জানায়, নি¤œমানের সামগ্রী ব্যাবহারে পার্কটি অল্পদিনেই পূর্বের রূপ হারিয়ে মরিচা ধরে মুখথুবড়ে পরেছে। প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যায় দেখানো হলেও বাস্তবে চায়না থেকে অতি নি¤œমানের খেলনা বসানোয় এবং প্রকল্পের পুরো টাকাই পুকুর চুরি করেছে সংশ্লিষ্টরা বলেও অভিযোগ তাদের।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১ কোটি ৪২ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৫ সনে নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানের পাশে গ্রীন সিটি পার্কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০১৬ সনের ২৯ জানুয়ারি পার্কটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন মেয়র আহসান হাবিব কামাল। যদিও শিশুদের বিনোদনের জন্য পার্কটি উদ্বোধনের পর প্রশংসিত হয়েছিলেন মেয়র। কিন্তু নিম্নমানের রাইডসহ সামগ্রী স্থাপণ করে ঠিকাদার ও প্রকৌশল বিভাগের কর্মকর্তাদের অর্থ আত্মসাত-দুর্নীতির কারণে মেয়র এখন ভাবমূর্তি সংকটে। সূত্র আরও জানায়, উদ্বোধনের সময় পার্কে দুটি দোলনা, তিনটি ¯িøপার, একটি রোলার, দুটি ব্যালেন্স রাইডারসহ ১৮ রাইডস্ ছিল। সৌন্দর্যবর্ধণে স্থাপন করা হয়েছিল ডিজিটাল ট্রি(গাছ), টাওয়ার, এলইডি লাইট ও সিকিউরিটি বাল্ব। কিন্তু পার্কের দুটি দোলনা, একমাত্র রোলার রাইডার, হাতি, ঘোড়া, বাঘ, কুকুর, ড্রাগনসহ নয়টি খেলনা ভেঙে গেছে। প্রবেশপথে স্থাপিত বৈদ্যুতিক তুলা গাছটি ভেঙে পড়েছে। জ্বলছে না দুইটি ডিজিটাল বাঁশ লাইট। চারপাশে ৬১টি সিকিউরিটি বাল্বের এক তৃতীয়াংশ নেই। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে টয়লেট ব্যবহার অনুপযোগী। শুধু অবকাঠামো নয়, পার্কের নিরাপত্তা ও রক্ষণাবেক্ষণেও অবহেলার অভিযোগ রয়েছে বিসিসি কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে।
বরিশালের ২৭টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের জোট সাংস্কৃতিক সংগঠন সমন্বয় পরিষদের সভাপতি নাট্যজন কাজল ঘোষ বলেন, ‘আমরা পার্কটি চাই। তবে পার্কে কোন শিশু আহত হোক আমরা চাই না। আমরা চাই পার্কটি আবারও সুন্দর করে সাজানো হোক সময় উপযোগী করে। দেড় কোটি টাকায় নির্মিত এই পার্কে অবশ্যই অনিয়ম হয়েছে। যার কারণে মাত্র ৩ বছরের মাথায় পার্কটি বন্ধু করে দিতে বাধ্য হয়েছে সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। অতিদ্রæত এই এ বিষয়ে তদন্ত করে দেখা হোক। কেউ দায়ী হলে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হোক।’
এব্যাপারে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. খাইরুল ইসলাম জানান, ‘পার্কটি এখন ব্যবহার অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে। এখন শিশুরা বিভিন্ন খেলনা ব্যবহার করলে তারা দুর্ঘটনায় পড়তে পারে। তাই আমরা গত দুই সপ্তাহ আগে পার্কটি বন্ধ করে দিয়েছি। সিটি মেয়র পার্কটি ভিজিট করে বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যত দ্রæত সম্ভব আমরা হয় সংস্কার করবো বা নতুন খেলনা স্থাপন করে শিশুদের জন্য উন্মক্ত করবো।’