বাড়তি টাকা ছাড়া লাহারহাট-ভেদুরিয়া রুটের ফেরীতে পার হয় না যানবাহন বাড়তি টাকা ছাড়া লাহারহাট-ভেদুরিয়া রুটের ফেরীতে পার হয় না যানবাহন - ajkerparibartan.com
বাড়তি টাকা ছাড়া লাহারহাট-ভেদুরিয়া রুটের ফেরীতে পার হয় না যানবাহন

3:21 pm , January 27, 2019

খান রুবেল ॥ পন্যবাহী পরিবহন শ্রমিকদের ভোগান্তির আরেক নাম বরিশাল-ভোলা নৌ রুটের লাহারহাট ফেরিঘাট। এখানে বাড়তি টাকা ছাড়া ফেরিতে পার হতে পারে না পন্যবাহীসহ যেকোন যানবাহন। যদিও বা চলে সে জন্য গুনতে হয় দ্বিগুন টাকা। যিনি বাড়তি টাকা না দিবেন তাকে ঘাটেই আটকে থাকতে হতে পারে দুই থেকে তিন দিন পর্যন্ত। আর টাকা দিলে সবার পেছনে আসা পরিবহনটি অনায়াসেই পৌছে যায় ফেরীতে। তবে এমন প্রকাশ্য অনিয়ম ও চাঁদাবাজী শুধুমাত্র লাহারহাট ঘাটেই নয়। একই চিত্র অপর প্রান্ত ভোলার ভেদুরিয়া ঘাটেও । দীর্ঘ দিন ধরে বিআইডব্লিউটিসি ও বিআইডব্লিউটিএ’র অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এমন প্রকাশ্য অনিয়ম নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যথা নেই। ফলে অনিয়ম ও জিম্মি দশা থেকে সহসাই রেহাই পাচ্ছেন না পরিবহন শ্রমিকরা। সূত্রমতে, বরিশাল তথা দক্ষিণাঞ্চল থেকে ভোলা ও লক্ষ্মীপুরে সরাসরি সড়ক যোগাযোগের ব্যবস্থা নেই। তাই লাহারহাট হয়ে ফেরী যোগে প্রায় ১৬ কিলোমিটার নদী পথ পাড়ি দিয়ে ভোলার ভেদুরীয়া ঘাটে পৌছতে হয়। এজন্য সময় লাগছে দেড় থেকে আড়াই ঘন্টা পর্যন্ত। আর যে গাড়িটি সঠিক সময় পার হতে পারছে না তাকে বসে থাকতে হয় ঘন্টার পর ঘন্টা। আবার ফেরী পার হতে না পেরে ফিরে যাচ্ছে অনেক পর্যটক বহনকারী যানবাহন। সেই সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে বিআইডব্লিউটিসি’র অসাধু চক্র। তারা আগে পার করে দেয়ার নামে বাড়তি টাকায় নিজেদের পকেট ভারি করছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিবহনের বেশ কয়েকজন শ্রমিক জানান, বেশ কিছু দিন ধরে নদীতে পানি কম থাকার অজুহাত দিয়ে চাঁদাবাজি বানিজ্য শুরু করেছে। তারা বেশি পন্যবাহী যানবাহন চালক ও শ্রমিকদের জানায় পানি কম। তাই বেশি ওজনের যানবাহন ফেরিতে নেয়া হলে ডুবোচরে আটকে পড়বে। পানি এলে বেশি ওজনের যানবাহন নেয়া হবে জানিয়ে শুরু করে বাড়তি টাকা নেয়া। তারা লাইনের পিছনে থাকা যানবাহনকে পার করে দেয়ার জন্য নেয় বাড়তি টাকা। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, লাহারহাট ফেরীঘাটে পারাপারের অপেক্ষায় থাকা ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ও মাইক্রোবাসের দীর্ঘ লাইন। সব মিলিয়ে অর্ধশতাধিক যানবাহন পারাপারের অপেক্ষায় রয়েছে। কোন কোন পরিবহন গত দু’দিন ধরে আটকে থাকলেও ঘাট পর্যন্ত পৌছতে পারেনি। ওইসব পরিবহনের শ্রমিকদের থাকা-খাওয়া সবই ফেরীঘাটে হচ্ছে। সাতক্ষীরা থেকে পেঁয়াজ নিয়ে আসা পন্যবাহী ট্রাকের চালক আফজাল শরীফ বলেন, ভোলার বাংলাবাজার যাবেন। এজন্য শুক্রবার বিকালে বরিশাল লাহারহাট ঘাটে আসেন। প্রথম দিন যেখানে এসে ট্রাক থামান, তার থেকে কিছুটা সামনে এগুতে পারলেও ফেরীঘাট এখনো অনেক দূর। খুলনা থেকে আসা ট্রাক চালক মিজানুর রহমান বলেন, খুলনা থেকে বরিশালে পৌছতে যে ভোগান্তি না পেয়েছেন তার থেকে কয়েকগুন ভোগান্তিতে পড়তে হয় লাহারহাট ফেরীঘাটে। শনিবার দুপুরে পোল্ট্রিফিড নিয়ে এখানে পৌছুলেও ফেরী ঘাট পর্যন্তও যেতে পারেননি। এজন্য ক্ষোভ প্রকাশ করে এই চালক বলেন, তাদের পরে আসা কয়েকটি ট্রাক ফেরীপার হয়ে গন্তব্যে পৌছে গেছে। কিন্তু ঘাটের লোককে বাড়তি টাকা না দেয়ায় ওভারলোডের অজুহাত দেখিয়ে আমাকে আটকে রাখা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমাদের ঘাটের টোল, ফেরী ভাড়া সহ সকল খরচ পূর্বে থেকেই হিসাব করে দেয় মহাজন। ঘাটে বাড়তি টাকা দিতে হলে তা নিজেদের পকেট থেকেই দিতে হয়। লাহারহাট ঘাটে এমন স্বেচ্ছাচারিতা মাওয়া-দৌলতদিয়া ঘাটকেও হারমানায় বলে মন্তব্য করেন যশোর থেকে আসা মোসলেম তালুকদার নামের এক ট্রাক চালক।
সূত্র জানিয়েছে, লাহারহাট ফেরী ঘাটের কাউন্টারের দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিসি’র টার্মিনাল সহকারী সোহেল খান চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী ও বহিরাগতদের নিয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। লাহারহাট থেকে ভেদুরীয়া পর্যন্ত এক টন থেকে ১১ টন পর্যন্ত পণ্যবাহী যানবাহনের সরকার নির্ধারিত ফেরীভাড়া ৯২০ টাকা থেকে ১ হাজার ৮৫০ টাকা পর্যন্ত। আর ১০ চাকার সাধারণ পরিবহনের ভাড়া সর্বোচ্চ ২ হাজার ৬৭০ টাকা।
কাগজে কলমে এমনটি থাকলেও সোহেল খান ১ থেকে ৩ টন পর্যন্ত যে কোন ট্রাকের ভাড়া আদায় করছেন ১ হাজার ৭৭০ টাকা। সাথে আগে ফেরী পার হতে হলে গুনতে তাকে দিতে হচ্ছে এক থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত। এর পর ওজন বেশি হলে বাড়তি ভাড়ার বিষয়টিতো রয়েছেই। লাহারহাট ঘাটে শুধুমাত্র ফেরী ভাড়াই নয়, ঘাটে পৌছতেই যানবাহন শ্রমিক ও মালিকদের পদে পদে গুনতে হয় আরো মোটা অংকের চাঁদা। যার কোনটির রসিদ দেয়া হয় আর কোনটির দেয়া হয় না। এর মধ্যে লাহারহাট ঘাটে ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নকে ২৭০ টাকা, ট্যাংকলরি শ্রমিক সংগঠনে ৬০ টাকা, বিআইডব্লিউটিএ’র ঘাটের টোল সর্বনি¤œ ৫৮ টাকা এবং মসজিদের উন্নয়নের নামে আরো ২০ টাকা বাধ্যতামুলক ভাবে আদায় করা হচ্ছে। নামে বেনামে হওয়া চাঁদাবাজীর একটি অংশ স্থানীয় প্রশাসনের মাসোহারা হিসেবে যাচ্ছে। কিছু অংশ যাচ্ছে রাজনৈতিক নেতাদের পকেটে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে লাহারহাট ফেরীঘাটের দায়িত্বে থাকা বিআইডব্লিউটিসি’র সহকারী ব্যবস্থাপক শিহাব উদ্দিন বলেন, অনেকে আগে যেতে না পেরে অভিযোগ করে থাকেন। তবে সব অভিযোগ যে মিথ্যা তাও নয়। যারা অনিয়ম করছে তাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।
শিহাব উদ্দিন বলেন, আমাদের এখান থেকে প্রতিদিন গড়ে ১৩০টি’র মত গাড়ি পার হচ্ছে। ছোট বড় ৩টি ফেরীতে গাড়িগুলো পার করা হচ্ছে। তবে এখানে দু-তিন দিন আটকে থাকার মত চাঁপ নেই। নদীতে ডুবোচরের কারনে কিছু সমস্যা হচ্ছে। ডুবোচরের কারনে দীর্ঘ এলাকা ঘুরে ফেরী চলাচল করছে। এজন্য আগে যেখানে পাড়াপাড়ে দেড় ঘন্টা সময় ব্যয় হতো, সেখানে এখন দুই ঘন্টাও লাগছে। আবার নদীতে পানি কম থাকলে বড় দুটি ফেরী চলতে পারে না। তখন গাড়ির জ্যাম পড়ে। তাছাড়া চাঁদপুর, মাওয়া, দৌলতদীয়া ঘাটে যখন গাড়ির চাপ বেশি থাকে তখন লাহারহাটেও চাপ বাড়ে। ওই সময় কিছুটা অনিয়ম হতে পারে। তবে লাহারহাটের কাউন্টারে দায়িত্বে থাকা সোহেল খানের বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে দেখবেন বলে জানান শিহাব উদ্দিন।
বিআইডব্লিউটিসি’র বরিশাল অঞ্চলের সহকারী মহা ব্যবস্থাপক সৈয়দ আবুল কালাম আজাদ বলেন, লাহারহাট-ভেদুরীয়া ঘাটে পূর্বে কিছু অনিয়ম ছিলো। যেগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বর্তমানে অনিয়ম নেই বলে তিনি জানেন। তবে বাড়তি টাকা আদায়ের বিষয়ে কোন চালক বা ব্যক্তি প্রমান দিতে পারলে অভিযুক্ত’র বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT