3:32 pm , January 20, 2019

খান রুবেল ॥ নগরীর কলেজ রো এলাকা থেকে আলোচিত শিশু দীপা রাণী পুটি অপহরণের পক্ষকাল পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে গ্রেপ্তারও হয়েছে মুক্তিপন দাবী করা চার যুবক। কিন্তু উদ্ধার হয়নি অপহৃত সাড়ে তিন বছরের শিশুটি। আদৌ সে বেচে আছে নাকি নিথর দেহ হয়ে পড়ে আছে সেই রহস্য উদ্ধার করতে পারেনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। তবে একমাত্র কন্যা সন্তানটিকে ফিরে পেতে তার ছবি ও স্মৃতি বুকে জড়িয়ে পথের দিকে চেয়ে আছে বাবা-মা। মৃত্যু হলেও অন্তত পক্ষে লাশটিকে একবারের জন্য বুকে জড়িয়ে নিতে চান হতভাগী মা চায়না রাণী সমাদ্দার। এদিকে অবুজ পুটিকে তার পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দিতে ব্যর্থ হয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। আদৌ ফিরিয়ে দিতে পারবে কিনা সে প্রশ্নের উত্তরও জানা নেই পুলিশ কর্মকর্তাদের। যদিও পুটি নিখোঁজ ও উদ্ধারের ঘটনায় কোতয়ালী পুলিশের দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ উঠেছে। নিখোঁজের বিষয়ে অভিযোগ গ্রহন ও তাকে উদ্ধারে পুলিশ তাৎক্ষনিক এগিয়ে এলে হয়তো এমন ঘটনার সৃষ্টি হতো না বলে ধারনা পরিবারের। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবী করা হয়েছে। বিষয়টিতে পুলিশের সর্বোচ্চ গুরুত্ব ছিলো এবং রয়েছে বলে জানিয়েছেন কোতয়ালী মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আসাদুজ্জামান। অপহৃত শিশুর মা চায়না রাণী সমাদ্দার বলেন, তাদের ১৪ বছরের দাম্পত্য জীবনের ফসল একটি পুত্র ও একটি কণ্যা সন্তান। প্রথম পুত্র বিদ্যুৎ সমাদ্দার দীপের ৯ বছর পরে মায়ের কোল জুড়ে জন্ম নেয় দীপা রাণী পুটি। মাত্র সাড়ে তিন বছরের বড়ই চঞ্চল এই শিশুটি পুরো ঘর মাতিয়ে রাখতো। মেয়ের ভাঙা ভাঙা কন্ঠে মা ডাক শুনে নিজের মা না থাকার দুঃখ মুছে যায় মা চায়নার। কিন্তু তাকে চোখের জ্বলে ভাসাতে কোল থেকে কেড়ে নেয়া হলো পুটিকে।
কান্না ঝড়া কন্ঠে মা চায়না রাণী সমাদ্দার বলেন, মাত্র ৩৬ হাজার টাকাই আমাদের কাল হলো। ঘটনার আগে দিন ৫ জানুয়ারী আশা এনজিও থেকে ৩৬ হাজার টাকা ঋন করেন মেয়ের বাবা বিনয় সমাদ্দার। যা জেনে যায় প্রতিবেশি রাজমিস্ত্রি রাসেলের স্ত্রী। তার মাধ্যমে টাকার বিষয়টি জানতে পারে রাসেল।
চায়না রাণী বলেন, ঘটনার দিন সকাল ৯টার দিকে রাসেলের ঘরের সামনেই খেলা করছিলো পুটি। সেখানেই খেলা করতে দেখে বাজারে যান তার বাবা মিষ্টির দোকানের কর্মচারী বিনয় সমাদ্দার। তখন রাসেল ঘরের মধ্যেই ছিলো। এর কিছুক্ষন পরেই নিখোঁজ হয় পুটি। তবে তখন আর ঘরে ছিলো না রাসেল। কিছুক্ষন পরে রাসেল ও তার ছোট ভাই সজিব এক সাথে হাসতে হাসতে ঘরে ফেরে।
পুটির বাবা বিনয় সমাদ্দার বলেন, মেয়েকে পুরো এলাকায় খুঁজে না পেয়ে ১৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলকে বলেন। তার কথা মত বগুড়া পুলিশ ফাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে ঘটনা জানালে ফাঁড়ি পুলিশ তাকে থানায় গিয়ে অভিযোগ করতে বলেন। ফাড়ি পুলিশের কথা মত দুপুর ১টার দিকে কোতয়ালী মডেল থানায় যান বিনয় সমাদ্দার। কিন্তু থাকার ডিউটি অফিসার তার অভিযোগের গুরুত্ব দেননি। এমনকি নেননি কোন লিখিত অভিযোগ কিংবা ডায়েরী। বরং আশে পাশে খুঁজে দেখতে বলে থানা থেকে ফিরিয়ে দেয়। বিনয় সমদ্দার বলেন, থানা থেকে ফিরে আসার পরে দুপুর ৩টার দিকে প্রথম তার মোবাইলে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসে। তখন পুটিকে ফিরে পেতে তার বাবার কাছে ৪০ হাজার টাকা মুক্তিপন দাবী করা হয়। ঘটনাটি থানায় অবহিত করার পরে নড়েচড়ে বসে পুলিশ। প্রায় ৪টা নাগাদ ঘটনাস্থলে এসে উদ্ধার তৎপরতা শুরু করে তারা। তবে সেখানেও অপরাধী সনাক্ত করতে আগে পুটির পরিবার ও স্বজনদের জিজ্ঞাসাবাদ ও বাড়ির পেছনের পুকুরে ডুবুরী দিয়ে তল্লাশী করে। তবে প্রথম থেকে পুলিশী তৎপরতা এবং অভিযোগের গুরুত্ব দিলে হয়তো পুটিকে নিয়ে এমন ঘটনা বৃহৎ আকার ধারন করতো না বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
এ প্রসঙ্গে কোতয়ালী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক ও পুটি অপহরণ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সাইদুল ইসলাম বলেন, দুটির বাবা বাদী হয়ে দায়েরকৃত মামলায় এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে যার মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে টাকা চাওয়া হয়েছে সেই রাসেল ও তার ভাই সজিবকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাছাড়া ফারুক ও আসাদুল নামে আরো দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। যার মধ্যে আসাদুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বাউফল থেকে। আসাদুল বাউফল থাকলেও বাকি তিনজন শিশু পুটির প্রতিবেশী ছিলো।
সাইদুল বলেন, গত সপ্তাহে দু’জন আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। অপর দু’জন রাসেল ও ফারুককে তিন দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। শনিবার তারা আদালতের কাছে জবানবন্দি দিয়েছে। তাদের চার জনের জবানবন্দিই এক। তারা বলছে, মুক্তিপন দাবী করেছেন সত্যি, কিন্তু তারা শিশুটিকে অপহরন করেনি। তারা স্বীকারক্তিতে বলেছে, পুটি নিখোঁজ হওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা শুধুমাত্র টাকায় আদায় করতে চেয়েছিলো। কিন্তু শিশুটি কোথায় আছে বা কে অপহরণ করেছে তা তাদের জানা নেই। তবে এখনো শিশুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছেন এসআই সাইদুল।
অপরদিকে পুটির বাবা বিনয় সমদ্দার বলেন, পুলিশের সাথে আমরা সব সময় যোগাযোগ করে চলেছি। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের কিছুই জানানো হচ্ছে না। তারা শুধু ‘দেখছি’ বলে এড়িয়ে যাচ্ছেন। তাই আদৌ পুটিকে ফেরত পাব কিনা তা নিয়ে এখন সন্দেহ সৃষ্টি হয়েছে। তাছাড়া বিষয়টি নিয়ে র্যাব-৮ এর কাছে পর পর দু’বার অভিযোগ দিয়েছি। তারাও বলেছে পুটিকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। কিন্তু ঘটনার দিন যতই বাড়ছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও কমে আসছে বলেও অভিযোগ অপহৃত দীপা রাণী পুটির স্বজনদের।