3:21 pm , January 19, 2019

নিজস্ব ও লালমোহন প্রতিবেদক ॥ লালমোহনে দুর্বৃত্তদের দেয়া আগুনে পুড়ে মর্মান্তিকভাবে মৃত্যু হয়েছে এক শিশু কন্যা ও তার খালার। এছাড়াও মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে শিশু কন্যার মা। শুক্রবার দিনগত রাত দেড়টার দিকে নির্মম ও হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে লালমোহন চরভূতা ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের খারাকান্দি গ্রামের মহিউদ্দিনের বাড়িতে। নিহত শিশু কন্যা হলো খাদিজা আক্তার (৮) ও বোরহানউদ্দিন উপজেলার পদ্মাপুকুর ঢালি বাড়ির বাসিন্দা রফিক ঢালীর স্ত্রী সুরমা বেগম (২৫)। অপরদিকে আগুনে দ্বগ্ধ হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে শিশু কন্যার মা আংকুরা বেগম। তাকে মুমুর্ষ অবস্থায় ঢাকায় নেয়া হয়েছে। পুলিশ এবং স্বজনদের ধারনা পারিবারিক বিরোধের জের ধরেই নিহত সুরমা বেগম এর স্বামী রফিক ঢালী ওই দু’জনকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে। তাই রফিককে গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন লালমোহন থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মীর খায়রুল কবির। জানা গেছে, নিহত সুরমা তার স্বামীর সাথে বিরোধের কারণে গত ১০ দিন ধরে বড় বোন আংকুরা বেগমের বাড়িতে উঠে। শুক্রবার রাতে খাবার পর ঘুমিয়ে পড়ে তারা। এ সময় মাটির ঘরের পেছন দিয়ে সিঁধ কেটে প্রবেশ করে দুর্বৃত্তরা। চৌকিতে ঘুমন্ত অবস্থায় লেপ তোষকে আগুন ধরিয়ে দেয় তারা। বাড়ির বাসিন্দা রাকিব জানান, রাত অনুমান সাড়ে ১২ টা থেকে ১ টার দিকে ঘটনা ঘটে। তাদের আর্তচিৎকার শুনে ঘরে প্রবেশ করে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। কে এই ঘটনা ঘটিয়েছে তা জানা যায়নি।
নিহত সুরমার মেঝ বোন শাহিনুর ও ভাই মহিউদ্দিন জানান, সুরমার বাবার বাড়ি লালমোহন ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডের প-িত বাড়ি। সুরমার ৬ মাস আগে পাশ্ববর্তী বোরহানউদ্দিনের দেউলা এলাকার রফিকের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামী রফিকের সাথে বনিবনা হচ্ছিল না। তাদের সাথে প্রায় ঝগড়া বিবাদ লেগে থাকতো। স্বামী রফিক প্রায়ই মেরে ফেলার হুমকি দিতো সুরমাকে। এ নিয়ে বিচার সালিশও হয়। গত ১০দিন আগে সুরমাকে রেখে তার স্বামী চলে যায়। সে বড় বোন আংকুরার বাড়িতে উঠে। সেখানে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের বাবা জালাল আহমেদ পন্ডিত জানান, তার ছোট মেয়ে সুরমার পূর্বে বিয়েছিলো। ওই স্বামীর মৃত্যুর পরে গত সাত মাস পূর্বে বোরহানউদ্দিন উপজেলার দেওয়া এলাকার পদ্মপুকুর গ্রামের ওসমান গনি ঢালীর ছেলে রফিক ঢালীর সাথে দ্বিতীয় বিয়ে হয়।
তবে বিয়ের প্রায় সাত মাস পেরিয়ে গেলেও সুরমাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়নি রফিক ও তার পরিবার। এ নিয়ে অনেক দিন ধরেই তাদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। তার মধ্যে গত বৃহস্পতিবার সুরমা বাবার বাড়ি থেকে লালমোহনের চরভুতা গ্রামে বড় বোন অংকুরের বাড়িতে বেড়াতে যায়। সেখানে বসে সর্বশেষ শুক্রবার রাতে স্বামীর সাথে মোবাইলে ঝগড়া হয় সুরমার। জালাল আহমেদ বলেন, বড় মেয়ে আংকুরের স্বামী রফিজল ঢাকায় একটি কোম্পানির নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কর্মরত। তিনি না থাকায় শুক্রবার রাতে আংকুর, সুরমা ও শিশু খাদিজা ঘরের একই বিছানায় ঘুমিয়ে ছিল। ভোর রাতের দিকে দুর্বৃত্তরা ঘরে আগুন দেয়। এতে ঘুমন্ত অবস্থায় ঘরের মধ্যে পুড়ে মারা যায় সুরমা। তাছাড়া আংকুর ও তার মেয়ে খাদিজাকে গুরুতর অবস্থায় লালমোহন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসকার জন্য দু’জনকেই শেবাচিম হাসপাতালে আনা হয়। বেলা সোয়া ১২টার দিকে মা ও মেয়েকে শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তখন জরুরী বিভাগের দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. মাহবুবুর রহমান শিশু খাদিজাকে মৃত ঘোষনা করেন। মা আংকুরকে বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার অবস্থা আশংকাজনক হওয়ায় বিকেলে তাকে ঢাকা নেয়ার জন্য পাঠানো হয়। ডা. মাহাবুবুর রহমান বলেন, হাসপাতালে পৌছাবার অনেক আগেই খাদিজার মৃত্যু হয়েছে। তার মায়ের অবস্থাও বেশি ভালো নয়। তার মুখমন্ডল সহ শরীরে প্রায় ৮৫ ভাগ পুড়ে গেছে। তাই তাকে বার্ণ ইউনিটে ভর্তি করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে তাকে ঢাকা বার্ণ ইউনিটে প্রেরন করা হতে পারে বলেও জানিয়েছেন তিনি। লালমোহন থানার ওসি মীর খায়রুল কবির বলেন, প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে সুরমার সাথে তার স্বামীর বিরোধ ছিলো। এর জের ধরেই এই ঘটনা ঘটতে পারে। তাছাড়া ঘটনার পর থেকেই রফিকুল আত্মগোপনে রয়েছে। তাকে গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। তবে হতাহতের ঘটনায় এখনো কোন অভিযোগ বা মামলা হয়নি।