3:18 pm , January 2, 2019
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালের দুই শ্রমিককে মারধরের প্রতিবাদ ও জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি আফতাব হোসেন এর পদত্যাগ দাবীতে বাস চলাচল বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেছে সাধারণ শ্রমিকরা। এর ফলে নগরীর নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে অভ্যন্তরীন ৮টি রুটের ঘন্টাব্যাপী বাস চলাচল বন্ধ ছিলো। গতকাল বুধবার এ ঘটনায় বেলা ১২টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত নথুল্লাবাদ থেকে স্বরুপকাঠি, বানারীপাড়া, মীরগঞ্জ, গৌরনদী, আগৈলঝাড়া সহ অভ্যন্তরীন ৮টি রুটের বাস চলাচল বন্ধ থাকে। এতে কয়েক হাজার যাত্রীদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এদিকে মারধরের শিকার বাস শ্রমিক আলমগীর হোসেনকে বরিশাল শের-ই-বাংলা চিকিৎসা মহাবিদ্যালয় (শেবাচিম) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। তিনি নথুল্লাবাদ বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও প্রভাতী (১১-০০৬) মিনি বাসের চালক। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলেও বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি’র বিচার সহ পদত্যাগ না করলে পুনরায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিয়েছে সাধারণ শ্রমিকরা। আহত শ্রমিক আলমগীর হোসেন জানান, তিনি বরিশাল-স্বরুপকাঠি রুটে বাস চালান। সকালে স্বরুপকাঠি থেকে যাত্রী নিয়ে বরিশাল নথুল্লাবাদে আসেন। বেলা ১১টার দিকে বাস টার্মিনাল সংলগ্ন মহাসড়কের পাশে ধানসিঁড়ি হোটের সামনে গাড়ি পার্কিং করে যাত্রী নামাচ্ছিলেন। ঠিক সেই মুহুর্তে বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি আফতাব হোসেন এসে মহাসড়কে যাত্রী নামানোর অজুহাতে বাস চালককে অকথ্য ভাষায় গালি দেয়। এর প্রতিবাদ করায় তাকে গাড়ি থেকে নামিয়ে বেধড়ক মারধর করে বলে অভিযোগ করেন আহত শ্রমিক আলমগীর। নথুল্লাবাদস্থ বরিশাল জেলা সড়ক পরিবহন, বাস, মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি’র মারধরের কারনে আলমগীর নামের ওই চালক জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এজন্য তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাছাড়া একই বাসের সহকারীকেও (হেলপার) মারধর করা হয়েছে। চালকের শ্রমিক কার্ডও নিয়ে যান আফতাব হোসেন। এ খবর অন্য শ্রমিকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে তাদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এমনকি হামলার প্রতিবাদে বেলা ১২টার দিকে নথুল্লাবাদ থেকে অভ্যন্তরীন সকল রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় তারা। পাশাপাশি শ্রমিককে মারধরের জন্য বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি আফতাব হোসেনের বিচার ও তার পদত্যাগের দাবীতে নথুল্লাবাদে বিক্ষোভ মিছিল করা হয়। শ্রমিক নেতা জাহাঙ্গীর হোসেন আরো বলেন, শ্রমিকদের অভিযোগ দীর্ঘ দিন থেকেই মালিক সমিতির সভাপতি আফতাব হোসেন শ্রমিকদের উপর এমন অবিচার করছেন। তার কারনে সাধারণ শ্রমিকরা এখন অতিষ্ঠ। তবে বুধবারের ঘটনার জন্য আফতাব হোসেন শ্রমিকদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। এজন্য শ্রমিকরা কাজে ফিরেছে। তবে ঘটনার বিচার না হওয়া কিংবা তিনি পদত্যাগ না করলে শ্রমিকরা পরবর্তীতে নথুল্লাবাদের কোন বাস চালাবেন না বলে জানিয়েছে। তাই বিষয়টি নিয়ে পরবর্তীতে মালিক সমিতির সাথে বৈঠক করে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান তিনি।
দুই শ্রমিককে মারধরের অভিযোগ স্বীকার করে বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি ও মহানগর শ্রমিক লীগের সভাপতি আফবাত হোসেন বলেন, প্রভাতী নামের ওই গাড়িটি মহাসড়কের মাঝখানে পার্কিং করিয়ে যাত্রী নামাচ্ছিলো। এজন্য বাসের চালকের কাছে তার ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখতে চাওয়া হয়। কিন্তু সে কোন ড্রাইভিং লাইসেন্স দেখাতে পারেননি। বরং শ্রমিক ইউনিয়নের একটি কার্ড দেখায় সে। সেখানে আলমগীর চালক বলে উল্লেখ রয়েছে। তিনি বলেন, ড্রাইভিং লাইসেন্স বিহিন চালককে দিয়ে বাস পরিচালনা করলে ৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। তা জানার পরেও প্রভাতী বাস মালিক লাইসেন্স বিহিন চালক দিয়ে বাস পরিচালনা করে আসছে। এজন্য বাসের মালিক ও সমিতির সহ-সভাপতি ইউনুস আলী খান এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি। এ প্রসঙ্গে এয়ারপোর্ট থানার ওসি আব্দুর রহমান মুকুল বলেন, বাস মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে অভ্যন্তরীন বিরোধের জের ধরে এক ঘন্টার মত বাস চালাচল বন্ধ ছিলো। তবে বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। বিরোধের বিষয়ে স্থায়ী সমাধানের চেষ্টা চলছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।