ঈদে নগরবাসীর নিরাপত্তায় থাকবে সহস্রাধিক পুলিশ ঈদে নগরবাসীর নিরাপত্তায় থাকবে সহস্রাধিক পুলিশ - ajkerparibartan.com
ঈদে নগরবাসীর নিরাপত্তায় থাকবে সহস্রাধিক পুলিশ

6:17 pm , May 27, 2018

নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ ঈদ উপলক্ষে নগরবাসীর নিরাপত্তায় সার্বক্ষনিক নিয়োজিত থাকবে সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য। তারা প্রতিদিন ৬১ দলে ওই নিরাপত্তা দেবেন। এর মধ্যে থাকবে ২১টি ভ্রাম্যমান আদালত দল ও ছয়টি তল্লাশী চৌকিসহ ৩৩ টহল দল। মহানগরীর চার থানাসহ গোয়েন্দা পুলিশ তিন ধাপে আইনশৃংখলা নিয়ন্ত্রনে কাজ করবে। এছাড়া রাস্তা-ঘাট সহ বাস স্টেশন, লঞ্চ ঘাট সহ নগরীর গুরুত্বপূর্ন সড়কে ট্রাফিক পুলিশ দায়িত্ব পালন করবে। গতকাল রোববার মহানগর পুলিশের আইনশৃংখলা সংক্রান্ত সভায় এ তথ্য জানানো হয়। লঞ্চ ও বাস মালিকসহ বিভিন্ন পরিবহন মালিক এবং শ্রমিকদের নিয়ে পুলিশ কমিশনার কার্যালয়ে ওই সভা অনুষ্ঠিত হয়। ভারপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনার মো. মাহফুজুর রহমান’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় যাত্রী ও নগরবাসীর নিরাপত্তার স্বার্থে ১৭টি বিষয়য়ের উপরে আলোচনা এবং সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ৩৯টি নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

এছাড়াও মহানগরীতে মাদক বিরোধী অভিযানের প্রতি আরো জোর দেয়ার দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। মাদক মুক্ত বরিশাল মহানগরী গড়ে তোলার লক্ষ্যে চাওয়া হয়েছে সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতাও।

অবশ্য সভার শুরুতে বর্তমান আবহাওয়ার প্রতিকৃল পরিস্থিতির উপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ভারপ্রাপ্ত কমিশনার বলেন, বর্তমান মৌসুমে কখনো কখনো ঝড়, বজ্র বৃষ্টি আবার কখনো রোদ উঠছে। যে কারনে এবারের ঈদে বাড়তি চাপ মাথায় রেখে দুর্যোগপূর্ন আবহাওয়ার মধ্যে যাত্রী হয়ে গন্তব্যে যাত্রা করবেন লাখ লাখ মানুষ। তাই নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের দেয়া ৩৯টি নির্দেশনার আলোকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে কাজ করার আহ্বান জানান পুলিশ কমিশনার।

এর বাইরে যে ১৭টি বিষয়ের উপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে লঞ্চ ও বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় না করা। অতিরিক্ত ভাড়ায় আদায় রোধে লঞ্চ মালিক সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকের তদারকি’র দায়িত্ব দেয়া হয়। লঞ্চ ও বাসে অতিরিক্ত যাত্রী বহন প্রতিরোধের সিদ্বান্ত নেয়া হয়েছে। এজন্য নৌ বন্দর, নৌ পুলিশের কঠোর মনিটরিং এর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য বলা হয়। সেই সাথে সহযোগিতা নেয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়।

লঞ্চ ও বাস টার্মিনালে যাত্রীদের নিরাপত্তার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় মাইকিং’র মাধ্যমে সতর্কতামুলক প্রচারনা, পুলিশি নজরদারী বৃদ্ধি এবং নিজস্ব ভলানটিয়ার এর ব্যবস্থা গ্রহনের সিদ্ধান্ত হয়। এর পাশাপাশি নৌ এবং বাস টার্মিনালে ভ্রাম্যমান হকার মুক্ত রাখার পাশাপাশি প্রতারক চক্রের বিষয়ে সকলকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। তাছাড়া ঈদের আগে-পরে অর্থাৎ ১২ জুন থেকে ২০ জুন পর্যন্ত দিনের বেলায় নদীতে বালুবাহী নৌযান বাল্কহেড চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এতে করে লঞ্চ দুর্ঘটনার সম্ভাবনা কমে আসবে। সেই সাথে ছোট নৌযান অর্থাৎ ইঞ্জিন চালিত ট্রলার এবং স্পীড বোর্টে অতিরিক্ত যাত্রী বহন না করার বিষয়ে নজরদারী বৃদ্ধি করা হচ্ছে। বিশেষ করে রাতের বেলায় এসব নৌযান চলাচল পুরোপুরি ভাবে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বৈরী আবহাওয়া বিশেষ করে ২ নম্বর শতর্কতা সংকেত দেখানো হলে ছোট লঞ্চগুলোর চলাচল বন্ধ রাখতে হবে। বড় লঞ্চ শর্তকর্তার সাথে চলাচল করলেও সেগুলোকে ধারন ক্ষমতার বাইরে যাত্রী বহন না করার জন্য নজর দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। ঈদের পূর্বে লঞ্চ ও বাসের টিকিট নিয়ে যারা কালো বাজারে বিক্রির সাথে সম্পূক্ত তাদেরকে আইনের আওতায় আনার জন্য পুলিশ কমিশনার তার অধিনস্থ কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ করার আদেশ প্রদান করেন কমিশনার।

লঞ্চ ও বাস দুর্ঘটনা সহ যে কোন দুর্ঘটনা এড়াতে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সকে প্রস্তুত থাকার জন্য বলা হয়েছে। বিশেষ করে দমকল বাহিনী এবং ডুবুরী টিম সার্বক্ষনিক প্রস্তুত রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। হেলপার ও অনভিজ্ঞ ড্রাইভার দিয়ে লঞ্চ বা বাস চলাচল না করার বিষয়ে জোর দেয়া হয়েছে।

এদিকে ঈদে যাত্রীদের দুর্ভোগ কমাতে সড়ক পথে যানযট নিরসনেও বিভিন্ন সিন্ধান্ত নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ঈদের পূর্বে যাত্রী চাপ বৃদ্ধির সাথে সাথে ট্রাফিক বিভাগের নির্ধারিত সড়ক দিয়ে যানবাহন ও গণপরিবহন চলাচল করানোর বিষয়ে আলোচনা হয়। তাছাড়া হাইওয়েতে সকল ধরনের যানবাহনে চাঁদাবাজী বন্ধে সকলের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন পুলিশ কমিশনার। চাঁদাবাজী কিংবা চলার পথে কোন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের শিকার হলে তাৎক্ষনিক সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ কিংবা আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে। বরিশালের বাইরের রেজিস্টেশন করা মাহেন্দ্রা গাড়ি শহরের চলতে না পারে সেজন্য তিনি ডিসি ট্রাফিক উত্তম কুমার পালকে নজর দিতে বলেন। লক্কড়-ঝক্কর বডি ফিটনেস বিহীন গাড়ি ব্যাবহার করে যাত্রী পরিবহন না করার জন্য বাস মালিক কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

নিরাপত্তার স্বার্থে বাস ও লঞ্চে ওঠা যাত্রীদের নিরাপত্তার সাথে ভিডিও’র ব্যবস্থা করা। যাত্রীদের ভিডিও ধারন কার্যক্রম পরিচালনায় যে ভাবে সুবিধা হবে সে ভাবে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে বাস মালিক সমিতি ও লঞ্চ মালিক সমিতিকে। তাছাড়া বাস ও লঞ্চ মালিকদের সাথে আলোচনা করে সংশ্লিষ্ট টার্মিনাল গুলোতে সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা গ্রহনের জন্যও বলেছেন পুলিশ কমিশনার।

এছাড়াও বাস ও লঞ্চ ঘাটে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা, মলম ও অজ্ঞান পার্টি সহ প্রতারক চক্র রোধকল্পে, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সচল রাখা সংক্রান্তে সিদ্ধান্ত হয়। যেসব এলাকায় বিপনী বিতান রয়েছে সেসব এলাকায় নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য বিদ্যুৎ বিভাগকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ঈদ বাজারে ইভটিজার রোধে সাদা পোষাকধারীর পাশাপাশি টহল পুলিশ থাকবে বলে জানান তিনি। বড় অংকের অর্থ লেনদেনের ক্ষেত্রে পুলিশকে অবহিত করা এবং সার্বিক নিরাপত্তা সংক্রান্তে বিস্তারিত আলোচনা করা হয় সভায়। সেখানে অন্যান্যদের মধ্যে শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন, ডিজিএফআই’র অধিনায়ক কর্ণেল শরিফুজ্জামান, উপ-পুলিশ কমিশনার (সদর) কামরুল আমিন, উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) হাবিবুর রহমান খান, উপ-পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মো. গোলাম রউফ খান, উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) উত্তম কুমার পাল, উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিবি) মোয়াজ্জেম হোসেন ভূইয়া প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত কর্মকর্তা এবং সরকারি দপ্তরের প্রতিনিধিবৃন্দ সভায় তাদের মতামত তুলে ধরেন।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT