6:28 pm , May 13, 2018
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির নির্বাচনে পরাজিত হওয়ায় প্রকাশ্য দিবালকে ইমামের মাথায় মল-মূত্র ঢেলে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এমনকি মল-মূত্র ঢেলে লাঞ্ছিত করার দৃশ্য ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এর পর পরই বিষয়টি ভাইরাল হওয়ায় শুরু হয় ক্ষোভ আর নিন্দার ঝড়। জানানো হচ্ছে শাস্তির দাবী।
গত শুক্রবার ফজরের নামাজের শেষে বাড়ি ফেরার পথে বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের কাঠালিয়া গ্রামে এই ঘটনায় গতকাল রোববার সকালে বাকেরগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন লাঞ্ছিত হওয়া ইমাম আবু হানিফা (৫০)। লাঞ্ছিত হওয়া ইমাম হলেন বাকেরগঞ্জের কাঠালিয়া ইসলামিয়া দারুস সুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসার সুপার ও নেছারবাগ বায়তুল আমান জামে মসজিদের ইমাম।
লিখিত অভিযোগে তিনি মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির নির্বাচনে পরাজিত প্রার্থী স্থানীয় প্রভাবশালী জাপা নেতা জাহাঙ্গীর আলম খন্দকার, তার সহযোগী জাকির হোসেন জাকারিয়া, মো. মাসুম সরদার, মো. এনামুল হাওলাদার, মো. রেজাউল খান, মো. মিনজু, সোহেল খন্দকার, বেল্লাল ও মিরাজ সোহেন সহ আরো বেশ কয়েকজনকে অভিযুক্ত করেছেন। অভিযোগের সূত্র ধরে ঘটনার সাথে জড়িত থাকা দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরা হলো একই এলাকার বাসিন্দা মৃত হাসেম মুসল্লির ছেলে মিনজু (৪৫) ও অপরজনের নাম বেল্লাল (২৫)। তবে মুল অপরাধী স্থানীয় জাতীয় পার্টির নেতা জাহাঙ্গীর খন্দকার সহ অন্যান্যরা আত্মগোপনে রয়েছে।
লাঞ্ছিত হওয়া আবু হানিফা মুঠোফোনে জানান, গত ফেব্রুয়ারী মাসে কাঁঠালিয়া ইসলামিয়া দারুস সুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে সভাপতি প্রার্থী ছিলেন এইচএম মজিবর রহমান ও জাহাঙ্গীর খন্দকার। নির্বাচনে মজিবর রহমানের পক্ষ অলম্বন করেন মাদ্রাসার সুপার আবু হানিফা। ওই নির্বাচনে এইচএম মজিবর রহমানের কাছে হেরে যান জাহাঙ্গীর খন্দকার। এতে ক্ষুব্ধ হন পরাজিত প্রার্থী জাহাঙ্গীর খন্দকার। এমনকি এর পর থেকেই মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আবু হানিফার সাথে জাহাঙ্গীর খন্দকারের প্রকাশ্য বিরোধ শুরু হয়। প্রায় সময় মাদ্রাসা সুপারকে তিনি হুমকি-ধামকী দিয়ে আসছিলো বলেও অভিযোগ মাওলানা আবু হানিফার।
এর ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার ফজরের নামাজের পর মসজিদের ইমাম ও মাদ্রাসার সুপার মাওলানা আবু হানিফ মসজিদ থেকে বের হয়ে বাড়ি ফিরছিলো। এসময় পরাজিত সভাপতি প্রার্থী জাহাঙ্গীর খন্দকার ও তার সহযোগিরা ইমামের পথরোধ করে। তখন তাদের মধ্যে পূর্বে নির্বাচনের বিষয় নিয়ে কথা কাটাকাটির সৃষ্টি হয়। এক পর্যায় পরাজিত প্রার্থী জাহাঙ্গীর খন্দকার ও তার সহযোগিরা হাড়ি ভর্তি মল-মূত্র এনে ইমামের মাথায় ঢেলে দেয়। এসময় পুরো বিষয়টি মুঠোফোনের ক্যামেরায় ভিডিও ধারন করা হয়েছে। যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হলে বিষয়টি ভাইরাল হয়ে দাড়ায়।
ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া ভিডিওতে দেখা যায়, সাদা পাঞ্জাবী পড়া ওই ইমামের মুখভর্তি দাড়ি রয়েছে। যা মেহেদী দিয়ে লাল করা। মাথায় পাগড়ি বাঁধা। মুখভর্তী দাড়ি থাকা ও পাঞ্জাবী জাহাঙ্গীর খন্দকার ও লাল রং এর জামা পড়া তার এক সহযোগী ওই ইমামের দু’পাশ থেকে দুই হাত ধরে রাখে। এর আগে লাল জামা পড়া ব্যক্তি হাত দিয়ে ইমামের মাথার পাগড়ি খুলে ফেলে পার্শ্ববর্তী অপর এক জনের হাতে দেয়। এর পর জাহাঙ্গীর খন্দকার এসে ইমামের অপর হাতটি ধরে। পেছন থেকে যুবক বয়সী একটি ছেলে হাড়ি ভর্তি মল-মূত্র এনে পেছন থেকে ইমামের মাথায় ঢেলে দেয়। এসময় ইমাম তাকে বাঁধা দেয়ার চেষ্টা করলে জাহাঙ্গীর খন্দকার ও তার অপর সহযোগী ইমামকে মারার জন্য সামনের দিকে এগিয়ে যায়। সেই সুযোগে মল-মূত্র মাথায় ঢালা হয়। তার আগেই ওই মল-মুত্র দায়ে লাগার ভয়ে ইমামের হাত ছেড়ে পাশে চলে যায় জাহাঙ্গীর খন্দকার। পরে যুবক বয়সী ওই ব্যক্তি ও লাল রং এর জামা পড়া ব্যক্তি হাতে পলিথিন নিয়ে ইমামের মাথায় ঢেলে দেয়া মল-মূত্র মাথার সমস্ত স্থানে লেপন করে দেয়। এসময় ওই স্থানে ১০/১২ জনের উপস্থিতি দেখা যায়। যারা কেউ এগিয়ে না আসলেও ইমামকে লাঞ্ছিত করনের দৃশ্য উপভোগ ও সহযোগিতা করতে দেখা গেছে ভিডিওটিতে।
ওই ইমাম জানান, ঘটনার পরে বিষয়টি যাতে কাউকে না বলে বা কোথাও অভিযোগ না করা হয় সে জন্য মোবাইলে পুরো ঘটনা ভিডিও করা হয়। কারোর কাছে বিষয়টি প্রকাশ করলে মারধর ও ওই ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। যে কারনে বিষয়টি গোপন রাখতে বাধ্য হন ইমাম। শেষ পর্যন্ত ওই ভিডিওটি ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়ায় এলাকা জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। এমনকি বিষয়টি জানার পরে গতকাল স্থানীয়দের সহযোগিতায় জাপার নেতা জাহাঙ্গীর খন্দকার সহ সংশ্লিষ্ট অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন লাঞ্ছিত হওয়া ইমাম আবু হানিফা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বশির উদ্দিন বলেন, ঘটনাটি আমিও শুনেছি এবং ভিডিওটি দেখেছি। যারা এমন ন্যাক্কার জনক কাজটি করেছে তারা মোটেও ভালো করেনি। কেননা যত বিরোধীই থাকুক না কেন ইমাম আমাদের সমাজের একজন সম্মানিত ব্যক্তি। একজন মুসলমান হয়ে ইমামকে এভাবে লাঞ্ছিত এবং বেইজ্জতী করাটা ইসলামকেও অবমাননার সামিল। তাই এই ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী করেন ওই ইউপি চেয়ারম্যান।
এ প্রসঙ্গে বাকেরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল হক জানান, মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন নিয়ে বিরোধের জের ধরে এমন ঘটনা ঘটেছে। এ বিষয়ে মাদ্রাসার সুপার আবু হানিফ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছে। অভিযোগের সূত্র ধরে অভিযান চালিয়ে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে তাৎক্ষনিক ভাবে তাদের নাম জানাতে পারেননি তিনি। অভিযুক্ত প্রধান অপরাধী জাহাঙ্গীর খন্দকার সহ অন্যান্যদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।