3:07 pm , November 30, 2018
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ প্রার্থী ঘোষনার পূর্বে দলের সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার ঘোষনা দেয়া বরিশালের রাজনৈতিক নেতারা তাদের পূর্ব প্রতিশ্রুতি ভুলে গেছেন। দল থেকে মনোনয়ন না পাওয়া নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন জমা দিয়ে বিদ্রোহী হয়েছেন। দলের পক্ষে না থেকে নিজের বিজয় নিশ্চিত করতে প্রচারনা চালাচ্ছেন। ফলে বরিশাল জেলার ৬টি সংসদীয় আসনের ৩টিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনিত প্রার্থীরা বিদ্রোহী নিয়ে ভাবতে শুরু করেছেন। তাদের ঠেকাতে উচ্চ পর্যায়ে লবিং চালাচ্ছেন বড় দুটি রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা। এর পূর্বে আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলার ৬টি আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র দলীয় প্রার্থী হতে মনোনয়ন প্রত্যাশী হন একাধিক নেতা। যারা সবাই দলের সিদ্ধান্তের উপর নিজের ভাগ্য তুলে দেন। প্রতিশ্রতী দেন দলীয় কেন্দ্র থেকে যাকেই মনোনয়ন দিবেন তাকে বিজয়ী করতে কাজ করবেন তারা। দলের মনোনিত প্রার্থীর নাম ঘোষনার পূর্বে এক রকম বক্তব্য ঝাড়লেও এখন অধিকাংশ নেতার সুর পাল্টে গেছে। তারা মনোনয়ন কার্যক্রম এবং মনোনিত প্রার্থীদের প্রশ্নবিদ্ধ করে নিজেরাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষনা দিয়েছেন। এমনকি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে তারা তাদের মনোনয়নপত্রও জমা দিয়েছেন। তবে মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে রিটার্নিং কর্মকর্ত ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নিকট মনোনয়নপত্র জমা দেয়া আওয়ামী লীগ নেতাদের সংখ্যাই বেশি। জেলার ২টি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত ৫ জন নেতা মনোনয়পত্র দাখিল করেছেন।
দলীয় সূত্রে জানাগেছে, বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনে বর্তমান এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুসকে প্রথমে মনোনয়ন দেয়া হয়। কিন্তু মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার একদিন পূর্বে তাকে পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগ নেতা মো. শাহে আলমকে প্রার্থী ঘোষনা করা হয়। তাই তালুকদার মো. ইউনুস-এমপি’র পরিবর্তে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মো. শাহে আলম দলীয় মনোনপত্র দাখিল করেন। তবে এতেও মনোনয়ন দ্বন্দ্বের অবসান হয়নি। বরং ওই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত তিন নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এরা হলেন- শের-ই বাংলার দৌহিত্র ফাইয়াজুল হক রাজু, সৈয়দা রুবিনা আক্তার ও ক্যাপ্টেন (অবঃ) এম মোয়াজ্জেম হোসেন।
এদিকে আসনটিতে সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, শহীদুল হক জামাল ও এস সারফুদ্দিন আহমেদ সান্টুকে বিএনপির মনোনয়ন দেয়া হয়। এদের মধ্যে দলের সাথে অভিমান করে মনোনয়নপত্র জমা দেননি সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল। জামাল ও সান্টু দু’জনেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বানারীপাড়া উপজেলা বিএনপি নেতা শাহ আলম মিয়া। তিনি দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।
অপরদিকে বরিশাল-৪ (বাকেরগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী নেই। তবে বিএনপি’র বিদ্রোহী হয়েছেন জেএম নূরুর রহমান নামের স্থানীয় বিএনপি নেতা। এই আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন দেয়া হয় উত্তর জেলার সভাপতি মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ ও ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি রাজীব আহসানকে। এদের মধ্যে রাজীব আহসান মনোনয়নপত্র জমা দেননি।
আসনটিতে আওয়ামী লীগের একমাত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-৪ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য পঙ্কজ নাথ।
এদিকে বরিশাল-৬ আসনে দলীয় প্রার্থী দেয়নি আওয়ামী লীগ। আসনটি মহাজোটের জন্য সংরক্ষিত। সে অনুযায়ী বর্তমান এমপি জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিনের স্ত্রী রতণা আমিনই এখান থেকে পুনরায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি প্রায় চুড়ান্ত। তবে আসনটিতে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী দেয়ার দাবী স্থানীয় নেতা-কর্মীদের। তাই মহাজোটের জন্য সংরক্ষিত এই আসনটিতে আওয়ামী লীগ থেকে দু’জন স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। এর মধ্যে একজন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশিও ছিলেন। তিনি হলেন আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত আসনের সাবেক এমপি পারভিন তালুকদারের স্বামী মোহাম্মদ আলী তালুকদার ফারুক। এছাড়া স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়া অপর প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ওসমান হোসেন। তবে বরিশাল-৬ আসনটিতে দু’জন প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়ায় বিএনপিতে কেউ বিদ্রোহী হতে পারেনি। দলের মনোনিত প্রার্থী সাবেক এমপি আবুল হোসেন খান ও মো. আব্দুর রশীদ খান দু’জনেই মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।