সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিয়ন্ত্রনহীন দক্ষিণাঞ্চলের রাজনৈতিক নেতারা সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিয়ন্ত্রনহীন দক্ষিণাঞ্চলের রাজনৈতিক নেতারা - ajkerparibartan.com
সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিয়ন্ত্রনহীন দক্ষিণাঞ্চলের রাজনৈতিক নেতারা

3:32 pm , November 15, 2018

খান রুবেল ॥ নিয়ন্ত্রনহীন হয়ে পড়েছে বরিশাল সহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের রাজনৈতিক নেতারা। তারা যে যার সিদ্ধান্তে দলের কর্মকান্ড পরিচালনার চেষ্টা করছে। যার বড় প্রমান আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন। স্ব স্ব দলের নেতারা যে যার মত করেই চেইন অব কমান্ড ভেঙে দলের মনোনয়ন দৌড়ে সামিল হয়েছে। যার ফলে কোন কোন আসনে অর্ধশতাধিক নেতা দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ হয়েছে। তৃনমুলের রাজনীতিতে চেইন অব কমান্ড শক্তিশালী না হওয়ার কারনেই ভোটের রাজনীতিতে এমন পরিস্থিতি বিরাজমান বলে দাবী বিশেষ মহলের। দলীয় সূত্রে জানাগেছে, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী নির্ধারনের জন্য মনোনয়ন ফরম বিক্রি কার্যক্রম শুরু করে দেশের সর্ববৃহত দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপত্র বিতরণ ও জমা গ্রহন কার্যক্রম চলে তিনদিন ব্যাপী। এছাড়া আজ ১৬ই নভেম্বর শুক্রবার শেষ হবে বিএনপি’র মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও জমা গ্রহন। তাই বিএনপি নেতারা এখনো মনোনয়নপত্র সংগ্রহে ব্যস্ত হয়ে আছেন। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, তিন দিনের কার্যক্রমে আওয়ামী লীগের সারা দেশে যে পরিমান মনোনয়ন ফরম বিতরণ ও জমা হয়েছে তার মধ্যে বরিশাল বিভাগের ৩৩০টি। এই বিভাগের সংসদীয় ২১টি আসনের বিপরিতে মনোনয়ন পেতে ওই সংখ্যক নেতা ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন। এখানকার ২১টি আসনের মধ্যে শুধুমাত্র ১টি আসনে সম্পূর্ন ভিন্ন চিত্র হলেও বাকি ২০টি আসনের চিত্রই এক। বরিশাল-১ আসনে আওয়ামী লীগের একমাত্র মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও বাকি ২০টি আসনেই রয়েছেন একাধিক প্রার্থী। ওইসব আসনে বর্তমান হেবিওয়েট নেতা ও মন্ত্রী থাকা সত্যেও তাদের বিপক্ষেই মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছেন তৃনমুল নেতারা। আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কেন্দ্রীয় কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী বরিশাল বিভাগের ২১টি আসনের মধ্যে সর্বোচ্চ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করা হয়েছে বরগুনা-১ আসনে। এখানে ৫২ জন নেতা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছে। এছাড়া বরগুনা-২ আসনে ৩৪টি, পটুয়াখালী-৩ আসনে ২২টি, পটুয়াখালী-৪ আসনে ৩২টি, বরিশাল-২ আসনে ২১টি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ হয়েছে। বরিশাল-১ বাদে বাকি ২০টি আসনের মধ্যে সব থেকে কম মনোনয়ন প্রত্যাশী যেখানে সেখানেও ৪টি ফরম বিক্রি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, দক্ষিণাঞ্চলে আওয়ামী লীগের অন্যতম হেবিওয়েট নেতা শিল্পমন্ত্রী আলহাজ্ব আমীর হোসেন আমু-এমপি। তিনি ঝালকাঠি-২ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য পুনরায় মনোনয়ণপত্র সংগ্রহ করেছেন। ওই আসনটিতে তিনি ছাড়াও আরো ৪ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। আওয়ামী লীগের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা তোফায়েল আহমেদ। যিনি ভোলা-১ আসনের এমপি এবং বানিজ্য মন্ত্রী। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই একই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়পত্র সংগ্রহ এবং জমা দিয়েছেন তোফায়েল আহমেদ। তার ওই আসনটিতে তিনি ছাড়াও আরো ৪ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন।
ভোলার উপ-মন্ত্রী আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব। যিনি ভোলা ৪ আসনের এমপি। এবারেও ওই আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তার পাশাপাশি আরো ৩ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। ভোলা-৩ আসনের এমপি ও প্রভাবশালী নেতা নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন। এ আসনে পুনরায় প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন তিনি। তার পাশাপাশি আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হিসেবে ফরম সংগ্রহ করেছেন আরো ১০ জন। এদিকে পটুয়াখালী-২ আসনের বর্তমান এমপি ও জাতীয় সংসদের হুইপ আ.স.ম ফিরোজ। যিনি এ আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক পেয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য পুনরায় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তার বিপক্ষে গিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন আরো ৮ জন। পটুয়াখালী-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চাচ্ছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির তিনবারের তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক আফজাল হোসেন। তিনি ছাড়াও আসনটিতে আরো ১৩ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।
বরিশাল-২ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস-এমপি। যিনি একজন ক্লিন ইমেজের নেতা হিসেবে পরিচিত। কিন্তু তার বিপক্ষেই অবস্থান নিয়েছেন ২০ জন। যারা তালুকদার ইউনুসের বিপক্ষে গিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছেন। শুধু এই কটি আসনেই নয়, বিভাগের ২০টি আসনের চিত্রই প্রায় এক।
এলাকায় খোঁজ খবর নিয়ে জানাগেছে, বিভাগের ২১টি আসনের মধ্যে ২০টিতে যারা মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছেন তার মধ্যে অনেকেই তৃনমুলের নেতা। রয়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যান এবং পৌর মেয়র ও যুবলীগ নেতা। সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা দিয়েছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান বা পৌর মেয়ররা সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন পাবে না। মন্ত্রীর মন্ত্রীর দেয়া এমন ঘোষনার পরেও দক্ষিণাঞ্চলের একাধিক উপজেলা চেয়ারম্যান ও পৌর মেয়র মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের এই আচরনকে চেইন অব কমান্ড ভাঙার সামিল বলে মনে করছেন জ্যেষ্ঠ নেতারা।
এদিকে শুধুমাত্র আওয়ামী লীগেই নয়, একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে বিএনপিতেও। তারাও চেইন ভেঙে যে যার মত করে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছেন। ধানের শীষ প্রতীক পেতে বিএনপিতে যারা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছেন তার মধ্যে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান, সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং পরাজিত উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীও রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বরিশাল সদর আসনে বিএনপি’র পুরানো প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার। দীর্ঘ বছর ধরেই তিনি এই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিজয়ী হয়ে আসছেন। তার এই আসনটিতে এবার দলের মনোনয়ন চাচ্ছেন মহানগর বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও সাবেক ওয়ার্ড কাউন্সিলর জিয়াউদ্দিন সিকদার, ছাত্রদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আফরোজা খানম নাসরিন, সদর উপজেলা বিএনপি’র সভাপতি এনায়েত হোসেন বাচ্চু সহ আরো বেশ কয়েকজন নেতা।
মনোনয়নপত্র বিক্রি ও জমা গ্রহনের দায়িত্বে থাকা বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কমিটির একটি দায়িত্বশিল সূত্র জানায়, বরিশালের ২১টি আসনের মধ্যে কোনটিতে ১টি মাত্র মনোনয়নপত্র বিক্রি হয়েছে সেই নজির নেই। বরং প্রতিটি আসনেই একাধিক প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। যারা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছেন তাদের বেশিরভাগ নেতাই অপরিচিত এবং নতুন মুখ। বিএনপি’র সূত্রটি বলছে, অনেকেই মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছেন কেন্দ্রীয় নেতাদের স্বাখ্যাত পেতে। একই দাবী আওয়ামী লীগের নেতাদেরও। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রীর স্বাখ্যাত লাভের জন্যই মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সংখ্যা দীর্ঘ হয়েছে বলে মনে করছেন কেন্দ্রের নেতারা। অবশ্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সদস্য ও বরিশালের একটি আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী একজন নেতা জানান, বুধবার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সাথে স্বাখ্যাত করেছেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। এসময় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সংখ্যা এতটা দীর্ঘ হওয়ায় কিছুটা বিষ্ময় প্রকাশ করেন তিনি। সেই সাথে দলীয় প্রার্থী যে হবে তার পক্ষে কাজ করার নির্দেশনাও দিয়েছেন বলে সূত্রটি জানিয়েছে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি’র কয়েকজন নেতা বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে দুটি রাজনৈতিক দলের তৃনমুলের নেতারা চেইন মানছে না। তারা যে যার ইচ্ছামত ভোটের রাজনীতি করছে। এ ক্ষেত্রে দলের হাইকমান্ডের কোন মতামতের প্রয়োজনও মনে করছে না। হাইকমান্ড মেনে চলল্যে প্রার্থীর সংখ্যা এতোটা দীর্ঘ হতো না বলেও মনে করছেন বিশেষ রাজনৈতিক বিশেষ মহল।

মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT