3:22 pm , November 13, 2018
নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ উজিরপুরের জল্লা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ হালদার নান্টু হত্যায় ব্যবহৃত ভাড়াটে খুনি রবিউল আউয়াল বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে। ইউপি চেয়ারম্যান হত্যায় ভাড়াটে খুনি ব্যবহৃত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম। হত্যার ঘটনার প্রায় দেড় মাস পরে ভাড়াটে খুনি রবিউল আউয়ালকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে নিয়ে অস্ত্র উদ্ধারে অভিযানে গেলে পুলিশের সাথে দুর্বৃত্তদের বন্দুক যুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয় সে। যদিও এর আগে পুলিশের কাছে চেয়ারম্যান নান্টুকে হত্যার ঘটনা স্বীকার করে রবিউল। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল পুলিশ লাইন্সে এক ব্রিফিং এ পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম জানান, উজিরপুরের ৩নং জল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ হালদার নান্টুকে হত্যার ঘটনায় সর্বশেষ ৮জন সহ এই পর্যন্ত ২০ জন আসামীদের গ্রেফতার করে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তাদের দেয়া আদালতে ৬৪ ধারার জবানবন্দিতে দেয়া তথ্যানুযায়ী চেয়ারম্যানকে হত্যাকারী শ্যুটার’ই হলো মাদারীপুর জেলার কালকিনী উপজেলার কুকরিরচর এলাকার লাল চাঁনের ছেলে রবিউল আউয়াল (২৮)। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে রবিউলকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে তৎপরতা শুরু হয়। ধারাবাহিকতায় সোমবার রাত ৮টার দিকে মাদারীপুর বাস স্ট্যান্ড এলাকা থেকে রবিউলকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারের পর তাকে নিয়ে উজিরপুর মডেল থানার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়া হয়। তবে পথিমধ্যে ঘটনার বিষয়ে গ্রেফতার রবিউল জানায়, চেয়ারম্যান নান্টুকে সে নিজ হাতে পিস্তল দিয়ে গুলি করে হত্যা করে। পাশাপাশি ঘটনার সময় তার কাছে আরো অস্ত্র ছিলো যা জল্লা ইউনিয়ন এলাকায়ই রয়েছে। রবিউলের দেয়া তথ্যানুযায়ী তাকে নিয়ে জল্লা ইউনিয়নের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করা হয়। ইউনিয়নের পীরেরপাড় ফুলতলা এলাকায় রাত পৌনে ৩টা নাগাদ পৌছালে রবিউলের সঙ্গীরা তাকে ছিনিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে পুলিশকে লক্ষ্য করে ?গুলি ছোড়ে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা ?গুলি ছোড়ে। তবে এরমধ্যে রবিউল পালিয়ে যাওয়ার জন্য দৌড় দেয়। তিনি বলেন, গুলির শব্দে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসে। পরে তাদের নিয়ে পুলিশ সদস্যরা এলাকাটিতে তল্লাশি চালিয়ে রবিউলকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় উদ্ধার করে। পাশাপাশি তার সঙ্গীদের ফেলে যাওয়া একটি পিস্তল, তিন রাউল গুলি ও ৩টি রামদা উদ্ধার করা হয়। এদিকে রবিউলকে নিয়ে উজিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে চিকিৎসক মৃত বলে ঘোষনা করেন। পুলিশ সুপার জানান, রবিউল মূলত ভাড়াটে খুনি। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে। তবে যারা রবিউলকে ভাড়া করেছে তাদের বিষয়ে তদন্তের স্বার্থে এই মুহুর্তে কিছু বলতে না চেয়ে পুলিশ সুপার সাইফুল ইসলাম বলেন, অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করা হচ্ছে। আর মামলার সকল অগ্রগতি জানানো হবে। তবে যেহেতু মামলাটি আদালতে রয়েছে তাই সে বিষয়েও চিন্তা করতে হবে। উল্লেখ্য, চলতি বছরের গত ২১ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৯ টার দিকে উজিরপুর থানাধীন জল্লা ইউনিয়নের কারফা বাজারে নিজ ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অবস্থানকালে গুলি করে নৃশংসভাবে চেয়ারম্যান বিশ্বজিৎ হালদার নান্টুকে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা। এই ঘটনার পরের দিন বিশ্বজিৎ হালদার নান্টুর বাবা মুক্তিযোদ্ধা শুকলাল হালদার স্থানীয় সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট তালুকদার মো: ইউনুসের পিএস মো: আবু সাঈদ রাঢ়ীসহ ৪০ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে হত্যা মামলা করেন। যার মধ্যে ৩২ জনকে নামধারী এবং আরও ৭/৮ জন অজ্ঞাতনামা আসামী করা হয়েছে। পাশাপাশি হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার ও বিচার দাবী ওঠে। কারফা বাজারে ব্যবসায়ীদের ধর্মঘট ও মানববন্ধনের পাশাপাশি গোটা উজিরপুর জুড়ে নানান কর্মসূচী পালন করা হয়। পুলিশ ঘটনার তদন্তে নেমে প্রথম দফায় ১২ জন ও পরের দফায় ৮ জনকে গ্রেফতার করে। পাশাপাশি ৮ জনকে গ্রেফতারের পর আসামী মামুন শাহ্র দেয়া তথ্যানুযায়ী হত্যাকান্ডের ঘটনায় ব্যবহৃত ১টি পিস্তল ও ২ রাউন্ড গুলিও উদ্ধার করে।