3:10 pm , November 8, 2018

কলাপাড়া প্রতিবেদক ॥ জেলা প্রশাসকের যাত্রা পথে কাফনের কাপড় পড়ে শুয়ে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের জন্য জমি অধিগ্রহন প্রক্রিয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছে পটুয়াখালীর কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়নের কৃষকরা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে ধানখালী ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে ভুক্তভোগি কৃষক এবং জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে এভাবেই প্রতিবাদ জানায় সেখানকার শত শত কৃষক। এছাড়া সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থরা সোমবাড়িয়া বাজারের দুই পাশে দাড়িয়ে মানবন্ধন করে। জানাগেছে, কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়নে ইতোপূর্বে আরপিসিএল বিদ্যুৎ উৎপাদান কেন্দ্র ১৩২০ মেঘওয়াট এবং নর্থওয়েস্ট পায়ার কোম্পানী লিমিটেড ১৩২০ মেঘওয়াট, সিমেন্স ৩৬০০ মেঘাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপদনের জন্য দুই হাজার একর জমি অধিগ্রহন করেছে। আরো দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের জন্য আশুগঞ্জ এবং সেনা কল্যান সংস্থা জমি অধিগ্রহনের কার্যক্রম শুরু করেছে। এই কোম্পানী দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের জন্য ধাখালী ও চম্পাপুর ইউনিয়নের পাঁচজুনিয়া, ধানখালী (ছৈলাবুনিয়া), নিশানবাড়িয়া, দেবপুর গ্রামের তিন ফসলী জমি অধিগ্রহন কার্যক্রম শুরু করেছে।
জমির মালিক এবং বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান ইচ্ছিক কম্পানির সঙ্গে বিরোধ সৃস্টি হওয়ায় পটুয়াখালী জেলাপ্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী সরেজমিন কৃষকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। ধানখালী ইউনিয়ন পরিষদ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সভায় উপস্থিত কৃষক মো. ফরিদ তালুকদার বলেন, ধানখালী ইউনিয়নে দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান হচ্ছে। একই ইউনিয়নে আরো দুটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান হলে তিন ফসলী জমির মালিকরা নিশ্ব হয়ে যাবো। কোথায় থাকবো। বাপ-দাদার বংশ ঐতিহ্য শেষ হয়ে যাবে জমি অধিগ্রহনের ফলে। আর এই ধানখালী চম্পাপুর ইউনিয়নের সকল মানুষ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে জয় যুক্ত করেছে। সে কারনে এই দুই ইউনিয়নকে ‘মুজিব নগর’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন এই মুজিব নগরকে ধ্বংশ করার জন্য একটি ষড়যন্ত্রকারি চক্র উঠে পরে লেগেছে। এসময় কৃষক বয়বৃদ্ধ মো. আতাউর রহমান বলেন, আমি দীর্ঘ দিন আমেরিকায় বসবাস করেছি। দুরারগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়েগেছি। মৃত্যুর আশঙ্কায় আমেরিকা থেকে দেশে ছুটে এসেছি দেশের এবং জন্ম ভিটায় বা মাটিতে মৃত্যুবরন করবো বলে। এখন সেই জমি এবং ভিটে বাড়ি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের জন্য অধিগ্রহন করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আমি আমার বাপ-দাদার এবং নিজের জমিতে মৃত্যুর পর শুতে পারবোনা ? আমি জীবিত থাকতে আমার তিন ফসলী জমি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য অধিগ্রহন করতে দিবোনা। জমি রক্ষায় জীবন ও রক্ত দিয়ে জমি ও ভিটেবাড়ি রক্ষা করবো। সভায় ধানখালী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. রিয়াজ উদ্দিন তালুকদার, চম্পাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. রিন্টু তালুকদার বলেন, জমি অধিগ্রহনের টাকা তুলতে পটুয়াখালী এল,এ শাখা এবং কলাপাড়ায় যাতায়াত করতে করতে নানা ধরনের হয়রানী ও বিরম্বনার শিকার হচ্ছে কৃষকরা। একই সঙ্গে দাদাল চক্রের কবলে পরে আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। অধিগ্রহনের টাকা দেওয়া এবং প্রয়োজনীয় কার্যক্রম কলাপাড়া অথবা ইউনিয়ন পর্যায় পরিচালিত হলে কৃষকরা উপকৃত হবে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান কাজে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক এবং শ্রমিকরা কাজ করা নিশ্চিত করতে হবে। এখানে দোভাষির মাধ্যমে শ্রমিক নিয়ন্ত্রন এবং বাহিরের লোকজন সিন্ডেকেট তৈরী করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান কাজ চলছে। এতে স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক এবং সাধারন মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। সভায় আরো বক্তব্য রাখেন কৃষক ও জমির মালিক আনসার উদ্দিন মোল্লা, মস্তফা মেহেদী তুহিন, আ. মন্নান গাজী, আফজাল উকিল প্রমূখ।
সভায় বক্তব্য রাখেন, পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী, এডিসি (রাজস্ব) মো. মামুনুর রশিদ, কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তানভীর রহমান।
সভায় জেলা প্রশাসক বলেন, বাংলাদেশে এককালে চড়ম দুর্ভিক্ষ ছিলো। সরকারের উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ডের জন্য অভাব-দূর্ভিক্ষ দুর হয়েছে। বর্তমান সরকার উন্নয়ন মূলক কর্মকান্ড এবং বড় বড় প্রকল্পের কাজ করছে। উন্নয়নমূলক সরকার কৃষকদের ক্ষতি হয় এমন কাজ করবে না। আগে শিক্ষার্থীরা প্যারাগ্রারাফ পড়তো লোডশেডিং এর। এখন কিন্তু লোড শেডিংএর কোন প্যারাগ্রাফ পড়ানো হয় না। উন্নয়নের জন্য পটুয়াখালী জেলা একটি মডেল জেলা হবে। তিন ফসলী জমিতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মান করা এবং না করার এই বিরোধীয় বিষয়টি সরকারকে অবহিত করবো। তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়ে বলেন, জমি অধিগ্রহনের টাকা এবং কার্যক্রম স্থানীয় পর্যায় (উপজেলা) করার ব্যবস্থা করা হবে। দালালদে বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে। ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তাদের শাস্তির আওতায় আনা হবে। অধিগ্রহন করা জমির মুল্য তিন গুন করার জন্য সরকারকে অবহিত করা হবে। নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের জন্য তিন ফসলী জমির পরিবর্তে নতুন এবং অকৃষি জমি দেখার ব্যবস্থা করা হবে। জমি রক্ষার জন্য আপনাদের আকুতি এবং নিবেদন শুনেছি। আপনাদের বঞ্চিত করে কিছুই করা হবে না। আপনাদের ওপর প্রধান মন্ত্রীর আস্থা আছে, আপনাদের আস্থা রাখতে হবে তার ওপর। সভা শেষে ফেরার পথে ধানখালীতে আর কোন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের জন্য জমি অধিগ্রহন না সে দাবি আদায়ের জন্য কৃষকরা জেলাপ্রশাসকের যাত্রা পথে কাপনের কাপড় পরে শুয়ে পরে। দাবি আদায়ে বিষয়টি সরকারকে অবহিত করবো যাতে তিন ফসলী জমি রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহন করে। এই প্রতিশ্রুতির পর রাস্তা থেকে কৃষকরা সরে যায় এবং জেলা প্রশাসককে শুভেচ্ছা-অভিনন্দন জানিয়ে এবং দীর্ঘায়ূ কামনা করে বিদায় জানায়।