বরিশাল-৩ আসনে মহাজোট চিন্তিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিককে নিয়ে বরিশাল-৩ আসনে মহাজোট চিন্তিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিককে নিয়ে - ajkerparibartan.com
বরিশাল-৩ আসনে মহাজোট চিন্তিত স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিককে নিয়ে

3:06 pm , October 25, 2018

রুবেল খান ॥ আড়িয়াল খাঁ নদীর এপারে বাবুগঞ্জ এবং ওপারে মুলাদী উপজেলা। এই দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল-৩ সংসদীয় আসন। জোটের শর্তে পূর্বে থেকেই আসনটিতে আধিপত্য বিরাজমান জাতীয় পার্টি ও ওয়ার্কার্স পার্টির। তবে এবারের আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুলাদী-বাবুগঞ্জ আসনটি ধরে রাখতে চায় ক্ষমতাসিন আওয়ামী লীগ। এজন্য এরই মধ্যে জাতীয় পার্টি এবং বামপন্থি ওয়ার্কার্স পার্টির পাশাপাশি নির্বাচন প্রস্তুতি রয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগে। নতুন পুরাতন মিলিয়ে সক্রিয় হয়েছেন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী একাধিক নেতা। তবে মনোনয়ন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরীক দলের প্রার্থীদের কানে পানি ঢেলেছেন ওয়ার্কার্স পার্টির যুবমৈত্রীর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও বিভাগ উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান। কেননা নির্বাচন প্রচারনা ও জনসমর্থনের দিক থেকে অন্যদের থেকে এগিয়ে রয়েছেন তিনি। আর তাই একজন আতিকুর রহমানকে নিয়েই চিন্তিত বরিশাল-৩ আসনের মহাজোট। এমনকি জনসমর্থন থেকে পিছিয়ে দিতে ও রাজনৈতিক ভাবে কোনঠাসা করতে স্বতন্ত্র প্রার্থী আতিকের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ, ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় পার্টির কতিপয় নেতার ষড়যন্ত্র করার অভিযোগ উঠেছে ।
জানাগেছে, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারী ১০ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে হাতে গোনা যে ক’টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় তার মধ্যে একটি বরিশাল-৩ আসন। বিএনপি নির্বাচনে অংশ না নিলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিলো মহাজোট। জোটের কারনে আসনটিতে আওয়ামী লীগ প্রার্থী না দিলেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় জাতীয় পার্টির গোলাম কিবরিয়া টিপু ও ওয়ার্কার্স পার্টির শেখ মো. টিপু সুলতানের মধ্যে। তবে দলীয় সিদ্ধান্তের কারনে শেষ পর্যন্ত ওই নির্বাচন বর্জন করেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু। যে কারনে খুব সহজেই সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ওয়ার্কার্স পার্টি জেলার সাধারণ সম্পাদক শেখ টিপু সুলতান। তবে গত পাঁচ বছরে সংসদ সদস্য হিসেবে জগনের আস্থা অর্জনে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। নানান অনিয়ম, দুর্নীতি এবং অভিযোগে জড়িয়ে পড়েন এমপি টিপু সুলতান। বাবুগঞ্জ ও মুলাদীতে নলকুপ স্থাপনের নামে কমিশন বানিজ্য, শিক্ষক নিয়োগে অনিয়ম, নৈশ প্রহরী নিয়োগে ঘুষ বানিজ্য, টিআর, কাবিখার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ নিয়ে এমপি শেখ মো. টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জাতীয় এবং স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় ফলাওভাবে সংবাদ প্রকাশিত হয়। সড়ক উন্নয়নে স্বজনপ্রীতিতে আলোচিত শেখ মো. টিপু সুলতান চার খলিফার এমপি হিসেবেও উপাধী পেয়েছেন। এসব অভিযোগের মধ্যেই আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুলাদী-বাবুগঞ্জ আসনে ফের মহাজোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছেন শেখ মো. টিপু সুলতান। এমনকি এরই মধ্যে ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে তাকেই দলীয় প্রার্থী নিশ্চিত করা হয়েছে। এ নিয়ে ওয়ার্কার্স পার্টির মধ্যে নতুন করে কোন্দল শুরু হয়েছে। টিপু সুলতানের বিরোধীতা করছেন দলের তৃনমুল পর্যায়ের নেতা-কর্মীরা।
অপরদিকে আসনটিতে মহাজোটের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন ওয়ার্কার্স পার্টির যুব সংগঠন যুবমৈত্রী কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি ও বরিশাল বিভাগ উন্নয়ন ফোরামের সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান। এজন্য দীর্ঘ দিন থেকেই এলাকায় উন্নয়নমুলক কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন তিনি। জনপ্রতিনিধি না হয়েও মুলাদী-বাবুগঞ্জ উপজেলায় অশংখ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের উন্নয়ন করে দিয়েছেন তিনি। দুস্থদের সাহাজ্য-সহযোগিতা, অসহায় পরিবারের ছেলে মেয়েদের লেখা-পড়া ও বিয়ের খরচ বহন করেন আতিকুর রহমান। অভ্যন্তরিন সড়ক উন্নয়ন এবং প্রাথমিক বিদ্যালয় ও কলেজ গুলোর উন্নয়নে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেন আতিকুর রহমান। বিপদে আপদে দুই উপজেলার মানুষের পাশে দাড়াচ্ছেন তিনি। এসব কারনে মুলাদী-বাবুগঞ্জবাসির আস্থা আর্জন করে নেন আতিকুর রহমান। তার মধ্যেই আতিককে বাদ দিয়ে শেখ টিপু সুলতানকে দ্বিতীয়বারের মত ওয়ার্কার্স পার্টির মনোনয়ন দেয়ায় হতাশ হন দুই উপজেলার মানুষ। তাদের দাবীর প্রেক্ষিতেই দলের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষনা দেন আতিকুর রহমান। তার এই ঘোষনা দুশ্চিন্তার কারন হয়ে দাড়ায় ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী শেখ মো. টিপু সুলতান থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীদের।
কেননা আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে চাচ্ছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন তিনি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় সভাপতি তাকে জোর করে পরাজিত করেছে বলে তার অভিযোগ রয়েছে। বাবুগঞ্জের সন্তান গোলাম কিবরিয়া টিপু’র জনমর্থনও রয়েছে। তবে জোটের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে অংশ নিলে বিজয়টা অনিশ্চিত হয়ে দাড়াতে পারে তার।
তাছাড়া আওয়ামী লীগের হয়ে আসনটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি রয়েছে সাবেক সচিব সিরাজ উদ্দিন আহমেদের। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন তিনি। তবে জোটের সার্থে নির্বাচন থেকে সড়ে দাড়াতে হয় তাকে। তাই বঞ্চিত নেতা হিসেবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন তার পক্ষে থাকতে পারে বলে মনে করছেন দলীয় মহল। তবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি নিশ্চিত করবে মহাজোটের সিদ্ধান্তের উপর।
তাছাড়া সিরাজ উদ্দিন এর মনোনয়ন দৌড়ে বাঁধা হয়ে আছেন যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মুলাদীর সন্তান মিজানুর রহমান। কেননা এই আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছেন তিনি। এরই মধ্যে দুই উপজেলায় সমান তালে নির্বাচনী প্রচারনায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন মিজান। বেশ কয়েক বছর ধরেই এলাকার উন্নয়ন কর্মকান্ডে অংশ নিচ্ছেন তিনি। নিয়ন্ত্রন করছেন মুলাদী উপজেলা আওয়ামী লীগের একটি অংশ। তাদের সমর্থন নিয়েই আসনটিতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী হয়েছেন মিজানুর রহমান। অবশ্য এর বাইরেও বরিশাল-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীর আলোচনায় বাবুগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান সরদার খালেদ হোসেন স্বপন, মুলাদী উপজেলা চেয়ারম্যান মিঠু খাঁ’র নামও উঠে আসছে।
তবে মহাজোটের একাধিক প্রার্থী হলেও তাদের সবার চিন্তার একটাই কারন আতিকুর রহমান। কেননা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোষনা দেয়া আতিককে বিরত রাখতে পারলেই জয় সহজ বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগ সহ মহাজোটের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। এ কারনেই জোটবদ্ধ হয়েছেন আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ওয়ার্কার্স পার্টি। আতিককে কোনঠাসা করতে চলছে তাদের একের পর এক ষড়যন্ত্র। চলছে অপপ্রচার। ছিড়ে ফেলা হচ্ছে আতিকুর রহমানের পোষ্টার, ব্যানার। তবে আওয়ামী লীগ এবং নিজ দলের প্রার্থীর এমন ষড়যন্ত্রের পাত্তা দিচ্ছেন না তিনি। জনগনের প্রতি আস্থা রেখেই নির্বাচনী প্রচারনা আর সরকারের উন্নয়ন নিয়ে ছুটে চলছেন আতিক।
উল্লেখ্য, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এর নিজ বাড়ি বাবুগঞ্জে। ১৯৯১ সালে তৎকালিন উজিরপুর-বাবুগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত বরিশাল-৩ আসনের এমপি ছিলেন তিনি। মহাজোটের রাজনীতির অংশ হিসেবে ২০০৮ সালে ঢাকা থেকে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিজয়ী হন রাশেদ খান মেনন। কিন্তু জন্মস্থান বাবুগঞ্জে হওয়ায় এই উপজেলায় ওয়ার্কার্স পার্টির আধিপত্ত দীর্ঘ দিনের। তবে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়ন সিদ্ধান্তের কারনে বিপর্যায় ঘটার আশংকা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এই বিভাগের আরও খবর

আর্কাইভ

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন    
সম্পাদক ও প্রকাশক: কাজী মিরাজ মাহমুদ
 
বার্তা ও বানিজ্যিক কার্যালয়ঃ কুশলা হাউজ, ১৩৮ বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সড়ক,
সদর রোড (শহীদ মিনারের বিপরীতে), বরিশাল-৮২০০।
© প্রকাশক কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed by NEXTZEN-IT